1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তদন্তে রাজনীতির প্রভাব সম্পর্কে পুলিশ কর্মকর্তা

২ এপ্রিল ২০১৯

পুলিশের বিরুদ্ধে প্রায়ই মিথ্যা মামলায় হয়রানি করার অভিযোগ ওঠে৷ যে মামলাগুলোতে অজ্ঞাত আসামি থাকে, সেখানে যে কাউকে ঢুকিয়ে দিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগও কম নয়৷ আবার এসব অভিযোগে শাস্তিও হচ্ছে পুলিশ সদস্যদের৷

https://p.dw.com/p/3Fwxt
প্রতীকী ছবিছবি: Imago/Zumapress/K. Salahuddin Razu

কীভাবে শাস্তি হচ্ছে? কতটুকু শাস্তি হচ্ছে? পুলিশ আদৌও কি নিরপেক্ষ? এসব বিষয় নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায়৷

ডয়চে ভেলে: অনেক সময় দেখা যায়, ভুয়া বা মিথ্যা মামলায় নিরাপরাধ মানুষ জেল খাটছেন৷ এটা কেন হয়?

কৃষ্ণপদ রায়: মামলাটি মিথ্যা না সত্য, সেটা তো তদন্তের উপর নির্ভর করে৷ জেল খাটে বা না খাটে সেটা ভিন্ন আলোচনা৷ একটা মামলা যখন হয় তখন তদন্ত কর্মকর্তা আগে দেখেন সেটা যদি ধর্তব্য অপরাধ হয় তাহলে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যদি মনে হয় বা যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ পান তাহলে তিনি যার বিরুদ্ধে মামলা তাকে গ্রেফতার করতে পারেন৷ এটা নিয়মিত মামলার ক্ষেত্রে৷ যে মামলাগুলো নিয়মিত নয়, অর্থাৎ কোর্ট পিটিশনের মাধ্যমে মামলা হয় সেখানে আদালতের ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে অনেক আসামিকে গ্রেফতার করা হয়ে থাকে৷ সেই পর্যায়ে অনেকে প্রশ্ন তোলেন মামলাটি সঠিক নয় বা তথ্যভিত্তিক নয়৷ এক্ষেত্রে কিন্তু যাচাইবাছাই করার অবকাশ থাকে কম৷ সেক্ষেত্রে তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা পেলেই তদন্ত কর্মকর্তা চার্জশিট দেন৷ এখানে বিচারে গিয়ে তখন প্রমাণিত হয় তিনি দোষী বা নিরাপরাধ৷

এটি তদন্ত কর্মকর্তার ব্যর্থতা, না দক্ষতার অভাব- কোনটা মনে হয় আপনার কাছে?

এখানে তদন্ত কর্মকর্তাকে তো অবশ্যই দক্ষ হতে হবে৷ কারণ তিনি কী কী বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করবেন, কাদের সাক্ষ্য নেবেন, বা সেই সাক্ষ্যের সঠিকতা আছে কিনা, সেটাও তিনি যাচাই করে সিদ্ধান্তে উপনীত হবেন৷ এখানে একজন কিন্তু সুপারভাইজিং অফিসার থাকেন৷ তিনি এএসপি বা এডিশনাল এসপি, এমনকি এসপিও থাকেন৷ মামলার গুরুত্ব বুঝে তদারক কর্মকর্তা নিযুক্ত হয়ে থাকে৷ একটি মামলার তদন্ত শেষে প্রাথমিক সত্যতা পেলেই শুধুমাত্র চার্জশিট দেওয়া হয়৷ সেক্ষেত্রে আদালতে মামলাটি প্রমাণ হয় কি, না হয় তার জন্য অনেক ফ্যাক্টর জড়িত৷ যদি সাক্ষীরা সময়মতো না আসেন তাহলেও মামলা ব্যর্থ হতে পারে৷ তদন্তকারী ভালো তদন্ত করা সত্ত্বেও মামলা ব্যর্থ হতে পারে৷ এখানে তদন্তকারী কর্মকর্তার গাফিলতিও থাকতে পারে৷ সেটা ঘটনার বিচারে বুঝতে হবে৷ মামলা ব্যর্থ হলে তদন্ত কর্মকর্তার অবশ্যই দায় আছে৷

‘মামলাটি মিথ্যা না সত্য, সেটা তো তদন্তের উপর নির্ভর করে’

তদন্ত কর্মকর্তার ব্যর্থতা বা গাফিলতি ধরা পড়ে, তখন তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেন?

এখানে তদন্ত কর্মকর্তা যদি ইচ্ছাকৃতভাবে তদারক কর্মকর্তার পরামর্শ সত্ত্বেও সঠিক সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ না করেন বা অন্য কিছু করেন তাহলে এই ব্যর্থতা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে৷ অপেশাদার কর্মকাণ্ড হিসেবে গণ্য হবে৷ তখন তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক অর্থাৎ পুলিশ রেগুলেশন বেঙ্গল অনুসারে, আর যদি তিনি মেট্রোপলিটন এলাকার মধ্যে হন তাহলে মেট্টোপলিটন পুলিশের অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে৷ এরপর ওই মামলার তদন্ত হবে৷ তদন্তে তিনি অভিযুক্ত প্রমাণিত হলে কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে অপরাধ বা গাফিলতির ধরণ দেখে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবেন৷

গত অক্টোবর-নভেম্বর মাসে আমরা বহু মানুষকে হাইকোর্টের বারান্দায় ঘুরতে দেখেছি৷ গায়েবি মামলা বা বেনামি মামলায় তাদের আসামি করা হয়েছে৷ এক্ষেত্রে এই মামলাগুলো আপনারা কীভাবে দেখেন?

গায়েবি মামলা বলে কোনো মামলা আমাদের পুস্তকে নেই৷ বিষয়টা হলো মামলা৷ এখন এই মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা জড়িত কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে৷ কিন্তু মামলাতো গায়েবি হতে পারে না৷ মামলা তো দৃশ্যমান৷ মামলা তো বাস্তব৷ এটা তো খাতায় আছে৷ এখানে এই মামলাটির সঠিক তদন্ত হচ্ছে কিনা সেটা আপনি নজরে আনতে পারেন৷ সেগুলো আমাদের নজরে আছে৷ আমরা বিশেষ নজর দিয়ে সেগুলো দেখি৷

পুলিশের গাফিলতির কারণে যদি কোনো ব্যক্তি জেলে খাটেন তাহলে ওই ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোনো বিধান আপনাদের আছে কিনা?

একজন ব্যক্তি যদি নিম্ন আদালতে সাজা পান, আর উচ্চ আদালতে গিয়ে খালাস পান তাহলে আপনি কাকে দায়ী করবেন? নানা কারণই একজন ব্যক্তি খালাস পেয়ে যেতে পারেন৷ সাক্ষীরা যদি ঠিকমতো না আসে, তাহলেও তিনি খালাস পেয়ে যেতে পারেন৷ আমি আগেই বললাম, আমাদের কেউ যদি খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে, ইচ্ছাকৃত অপেশাদার আচরণ করেন তাহলে তো তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়৷ মামলার বিচারটা এক পাল্লায় মাপা খুব মুশকিল৷ এক আদালত সাজা দিলেও আরেক আদালত কিন্তু তাকে খালাস দিচ্ছে৷ এখন নিম্ন আদালতে যারা বিচার করছেন, উচ্চ আদালতে তারা খালাস পেলে আপনি কী বলবেন? এটাই তো বিচারের নিয়ম৷ কোনো যুক্তি একটি আদালতের সঠিক মনে হতে পারে, আবার অন্য আদালতের সেটা সঠিক নাও মনে হতে পারে৷ আপনি যদি শাস্তি দিয়ে সব ঠিক করতে চান তাহলে এটা ভালো ডিপার্টমেন্ট হবে না৷ আপনাকে শাস্তি, কারেকশন, ট্রেনিং, মোটিভেশন, পেশাদারিত্ব সবকিছু মিলিয়ে কাজ করতে হবে৷ আপনি যদি আমার একটা ভুলের কারণে বিভাগীয় যে ব্যবস্থা নেওয়ার নিতে পারেন৷ কিন্তু কথায় কথায় আপনি যদি ক্ষতিপূরণের কথা বলেন তাহলে তো কেউ কাজই করবে না৷ তাহলে আমি কাজ করব না, কাজ না করলে তো আর ভুল হবে না৷ কাজ করতে গেলে ভুল হতে পারে৷ সেই ভুল থেকে আমি শিক্ষা নেব৷ মূল কথা হলো আমি পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করছি কিনা, সেটা বড় প্রশ্ন৷

থানায় দায়ের করা মামলায় অনেক সময়ই তো অজ্ঞাত আসামি থাকে৷ এই ব্যাপারে আপনাদের তদন্ত প্রক্রিয়া কেমন?

আসামি খুঁজে বের করাই পুলিশের কাজ৷ তদন্তকারী কর্মকর্তা বের করবেন এই কাজটা কে করেছে৷ বাদি তো নাও জানতে পারেন কাজটি কে করেছে? এটাই তো ইনভেশটিগেশনের বিউটি৷ তদন্তকারী কর্মকর্তা নানা তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হবেন যে এই লোক এই লোক এই কাজটি করেছে৷ এটাই তো তদন্ত৷ আপনি জ্ঞাত আসামি দেবেন আর আমি তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেবো সেটা কি তদন্ত? কিছু জ্ঞাত থাকবে, কিছু অজ্ঞাত থাকবে, সেভাবেই তো সারা দুনিয়াতে মামলা হয়৷ সব আসামির নাম দিয়ে মামলা হবে এমন হতে পারে নাকি? তাহলে তো তদন্তের দরকারই নেই৷

মামলা বা তদন্তের ক্ষেত্রে রাজনীতির প্রভাব কতখানি?

এটা আপনাদের সস্তা প্রশ্ন৷ আপনারা বারবার পুলিশকে রাজনীতির মধ্যে টেনে নিয়ে আসেন৷ আমি বলব এটা উদ্দেশ্যমূলকভাবে আপনারা করে থাকেন৷ পুলিশ আইনগতভাবে অপরাধকে অপরাধ হিসেবেই দেখে৷একটি গাড়ি পোড়ানো এটা কি অপরাধ নয়? পুলিশকে ডিমোরালাইজ করার জন্য, তার কর্মস্পৃহা নষ্ট করার জন্য বিভিন্ন গোষ্ঠী ইচ্ছকৃতভাবে এই ধরনের প্রশ্ন তুলে পুলিশকে হেয় করতে চান৷ পুলিশকে যদি আপনি দুর্বল করে দেন, তার মনোবল ভেঙে দেন তাহলে শেষ পর্যন্ত এই সমাজই সাফার করবে৷ একটি শক্ত ও পেশাদার পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে৷

অনেকের বিরুদ্ধেই তো পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে কাজ করার অভিযোগ পাওয়া যায়৷ সেক্ষেত্রে আপনারা কী ধরনের ব্যবস্থা নেন?

আমরা তো নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে চাই৷ কিন্তু দেখবেন আমি যদি নিরপেক্ষভাবে কাজ করি, সেটাও কারো না কারো বিরুদ্ধে যাবে, কারো পক্ষে যাবে৷ কিন্তু আইনগতভাবে যার পক্ষে যাওয়া উচিত তার পক্ষে যাচ্ছে কিনা সেটা দেখতে হবে৷ আমাদের কোনো সদস্য যদি নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হন তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে আমরা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেই৷ আপনি যদি পরিসংখ্যান নিয়ে দেখেন তাহলে দেখবেন সবচেয়ে বেশি শাস্তির আওতায় আনা হয় পুলিশ কর্মীদের বা সদস্যদের৷ আমরা পক্ষপাতহীনভাবে কাজ করতে চাই, সমাজে যারা স্টেকহোল্ডার আছেন তাদের সহযোগিতা চাই৷

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি সমীর কুমার দে৷
সমীর কুমার দে ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান