একমাসের বাচ্চা নিয়ে আগরতলায় যান মুক্তিযোদ্ধা ফৌজিয়া
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১১১৯৭১ সালে মে মাসের ৫ তারিখে আগরতলায় পাড়ি জমান ডা. ফৌজিয়া মুসলেম৷ আর তাঁর মেয়ে জন্ম নিয়েছিল এপ্রিলের ২ তারিখে৷ অর্থাৎ কোলে তখন এক মাস তিন দিন বয়সি সন্তান৷ স্বাভাবিকভাবেই একজন মা চাইবেন তার পুরো সময়টা বাচ্চাকে দিতে৷ কিন্তু সবসময় যে হিসেব মতো কাজ হবে তা তো আর নয়৷ ফলে ঐ দুধের বাচ্চাকে ঘরে রেখেই সম্ভাব্য মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা দিতেন ডা. মুসলেম৷
ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এই মুক্তিযোদ্ধা৷ নারী অধিকার নিয়ে ছিলেন সোচ্চার৷ তাই ঊনসত্তর সালে ডাক্তারি পড়া শেষে কয়েকজন মিলে তৈরি করেছিলেন মহিলা সংগ্রাম পরিষদ৷ এরপর একাত্তর সালে যুদ্ধ শুরু হলে মহিলাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন যুদ্ধে অংশ নিতে৷ ফৌজিয়া মুসলেম বলেন, ‘‘আমরা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে যেসব মহিলাদের যুক্ত করেছিলাম তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে রাখতে এমনকি যুদ্ধে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করেছিলাম৷''
তিনি বলেন, ছোট্ট বাচ্চা থাকার কারণে হয়তো সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয়াটা হয়নি৷ তবে চেষ্টা করেছেন পরোক্ষভাবে যুদ্ধে অংশ নিতে৷ এজন্যই চলে গেছেন আগরতলায়৷ দিয়েছেন সম্ভাব্য মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা৷ এছাড়া প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম জোগাড়ের কাজও করতে হয়েছে তাঁকে৷ আরও যে কাজটি করেছেন সেটা হচ্ছে আগরতলার নারীদের মধ্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সমর্থন গড়ে তোলা৷ ফলে যেটা হয়েছে সেটা হচ্ছে, আগরতলার স্থানীয় মানুষ বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থীদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছে৷
কিন্তু কীসের জন্য এত কষ্ট? যে উদ্দেশ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করা তা কি পূরণ হয়েছে বা হচ্ছে? উত্তরে ডা. মুসলেম বলেন একটি গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন ও প্রগতিশীল বাংলাদেশ পাবেন এই আশা ছিল তাঁর৷ কিন্তু সেই উদ্দেশ্য পূরণের আগেই সেটা আবারও বাধাগ্রস্ত হয়েছে ১৯৭৫ সালে, মন্তব্য এই মুক্তিযোদ্ধার৷
তবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী ডা. মুসলেম৷ তিনি বলেন, বর্তমান বা আগামীতে যে প্রজন্ম আসছে তারা একটা উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবে বলে মনে করেন তিনি৷
বর্তমানে বাংলাদেশ ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়শনের স্বাস্থ্য উন্নয়ন প্রকল্পের রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন ডা. মুসলেম৷ তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে বড় পাওয়া হচ্ছে, একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচিতি৷ এই দেশে গণতন্ত্রের কথা বলা যাচ্ছে, স্বাধীনভাবে সংস্কৃতি চর্চা করা যাচ্ছে এজন্য সুখী তিনি৷
যুদ্ধাপরাধের বিচারের ব্যাপারে এই মুক্তিযোদ্ধা সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিলেন৷ তিনি বলেন, বিষয়টা খুব একটা সহজ নয়৷ কেননা যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করে দেয়ার পরই ৭৫'এর ঘটনা ঘটেছিল৷ তাই এবার বিচারের পর সম্ভাব্য কী হতে পারে সেসব চিন্তা করেই এগোনো উচিত৷ ডা. মুসলেম বলেন, ‘‘যুদ্ধাপরাধের বিচার হতেই হবে৷ তবে আমরা আশা করি, যারা এই কঠিন দায়িত্বে আছেন তারা বিচার পরবর্তী সম্ভাব্য বিষয়গুলোর ব্যাপারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেই সব কাজ শেষ করবেন''৷
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক