একদিকে 'দ্রোহ', অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রীর নাচ
হাজার হাজার জনতার দ্রোহের কার্নিভাল দেখলো শহর কলকাতা। শাসকের কার্নিভালে নাচলেন মুখ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী।
শেষ লগ্নে হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ
হাই কোর্টে তখন বিচারপতি রবি কিসান কপূরের এজলাস চলছে। ধর্মতলায় জমায়েত জমাট বাঁধছে ধীরে ধীরে। কোর্টে শুরু হয় শুনানি। যুক্তি পাল্টাযুক্তি চলতে থাকে, উত্তেজনা বাড়তে থাকে অনশনমঞ্চে।
পাশাপাশি দুই কার্নিভাল
দুপুর ২টো ৫৩ মিনিট। বিচারপতি নির্দেশ দিলেন, দ্রোহের কার্নিভাল করা যাবে। রেড রোডের পুজো কার্নিভালের সঙ্গে তার কোনও সংঘাত নেই। ঘোষণা মাত্র উদ্বেলিত জনতা পুলিশের দাঁড় করানো ব্যারিকেডের ফাঁক দিয়ে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে ঢুকে পড়েন। কয়েক মিনিটের মধ্যে পুলিশও কার্যত ‘বাধ্য’ হয় ব্যারিকেডের শিকল খুলে দিয়ে তা সরিয়ে দিতে।
হাজার হাজার প্রতিবাদী জনতা
জলস্রোতের মতো জনস্রোত ধেয়ে আসতে থাকে রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের দিকে। খানিকক্ষণের মধ্যেই উপচে পড়ে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ।
শাঁখ, ঢাক আর স্লোগান
ঢাকের বাদ্যি, শাঁখের আওয়াজ, স্লোগানে স্লোগানে তখন মুখরিত হয়ে উঠতে থাকে কলকাতার চেনা 'মিটিং সরণি'।
সব লেন ভরে যায় মানুষে
ভরে যায় দুটো লেনই। জনস্রোত এগোতে থাকে সামনের দিকে। যে অংশে ব্যারিকেড এবং পুলিশ প্রহরা মোতায়েন রাখা হয়েছিল, সেখানেও ঢুকে পড়ে জনস্রোত।
পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ
জমায়েতের বিভিন্ন অংশ থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ আছড়ে পড়তে থাকে। ব্যারিকেডের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ কর্মীদের সামনে গিয়ে সাধারণ মহিলারা নানা ধরনের কটাক্ষ করতে শুরু করেন।
ডাক্তারদের পাশে আরো কিছু মঞ্চ
দ্রোহের কার্নিভাল ডেকেছিল জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টর্স। তবে তাতে জুড়ে গিয়েছিল আরও কিছু মঞ্চ। যে মঞ্চগুলিতে বামেদের নিয়ন্ত্রণ আছে। রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের জমায়েতে সংগঠিত ভিড়ের ছবি দেখা গেছে।
ছিলেন না নেতারা
তবে সিপিএমের প্রথম সারির নেতারা কেউ জমায়েতে যাননি। জুনিয়র ডাক্তারদের ডাকা সমাবেশে আনুষ্ঠানিক সমর্থন জানিয়েছিল বামফ্রন্ট। যা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। অনশন মঞ্চ থেকেই বলেছিলেন, কেউ যেন আন্দোলন 'হাইজ্যাক' করার চেষ্টা না করেন।
নাচলেন মুখ্যমন্ত্রী
একদিকে যখন দ্রোহের কার্নিভাল চলছে রাসমণি রোডে, তখন ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে রেড রোডে শুরু হয়েছে সরকারি কার্নিভাল। ঢাকের তালে তালে অভিনেত্রীদের হাত ধরে নাচলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ফুটবল নিয়ে খেললেন
মঞ্চে দাঁড়িয়ে হাতে একটি ফুটবল নিয়ে কিছুক্ষণ খেললেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপর তা ছুঁড়ে দিলেন সামনের রাস্তায়।
সেরা পুজোর গান
মুখ্যমন্ত্রীর লেখা পুজোর গান চললো কার্নিভালে। জানানো হলো, এবছরের সেরা পুজোর গান নির্বাচিত হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা এই গান। কারা তা নির্বাচন করেছেন, তা অবশ্য জানায়নি সরকার।
কালো বেলুন দিয়ে দ্রোহ
অন্যদিকে, গুচ্ছ গুচ্ছ কালো বেলুনের বন্দোবস্ত করেছিলেন দ্রোহের উদ্যোক্তারা। আশা করা হয়েছিল আকাশে ওড়ানোর পর বেলুনগুলো পাশেই সরকার আয়োজিত পুজো কার্নিভালের ওপর দিয়ে উড়ে যাবে। প্রতিবাদ আর শোকের বার্তা বয়ে নিয়ে যাবে আকাশপথে। তবে হাওয়ার গতি অন্যদিকে থাকায় বেলুনগুলি বিপরীত দিকে চলে যায়।
শহর-গ্রাম একাকার
শহর ও শহরতলির বিভিন্ন জায়গা থেকে জড়ো হয়েছিলেন মানুষ। কেউ প্রতিবাদের গান গাইতে গাইতে কেউ কেউ বা দলবদ্ধভাবে নাচের মাধ্যমে তাদের প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন।
ঢাকিদের প্রতিবাদ
দেখা গেল একদল ঢাকি এসেছেন তাদের প্রতিবাদ জানাতে। প্রতিবাদে আসা সাধারণ মানুষ তাদের হাত থেকে কাঠি নিয়ে বাজাতে শুরু করেন।
বাহারি পোস্টার
বিভিন্ন সংগঠন থেকে মানুষ এসেছিলেন এই কার্নিভালে। দ্রোহের এই কার্নিভালে পোস্টারেও ছিল অভিনবত্ব। ‘ভাবছ ভয় পেয়ে ঘরে ঢুকে যাবে? চাপ আছে বস’ । সরল ভাষায় লেখা এই পোস্টার মানুষের দৃষ্টি কেড়েছে।
জনতার দখলে ধর্মতলা
সন্ধে নামার পরে ভিড় আরও বাড়ে। গোটা ধর্মতলা চত্বর তখন উৎসাহী জনতার দখলে। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগানে তখন মুখরিত কলকাতার প্রাণকেন্দ্র।
মানববন্ধন
রানি রাসমণি অ্যাভিনিউতে কার্নিভাল চলাকালীনই ধর্মতলায় শুরু হয়ে যায় জুনিয়র ডাক্তারদের ডাকা মানববন্ধন। সন্ধ্যার পর আরও ভিড় বাড়তে থাকে। অবরুদ্ধ হয়ে যায় ডোরিনা ক্রসিং থেকে ধর্মতলা। সেই জমায়েতেও দেখা যায় পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ আছড়ে পড়ছে।
মানববন্ধনের মাঝে প্রতিমা
পুজো কার্নিভালে প্রতিমা প্রদর্শন শেষে উত্তর কলকাতামুখী কয়েকটি ক্লাবের লরি এই পথেই ফিরছিল। পথের দু-পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানবশিকলের মাঝ খান দিয়ে যাওয়া পুজো কার্নিভালের দুর্গা প্রতিমাকেও শুনতে হয়েছে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান। রাজ্যের মন্ত্রী তথা শ্রীভূমির ক্লাবকর্তা সুজিত বসুর গাড়ির উদ্দেশ্যেও ক্ষোভ উগরে দেয় মানববন্ধনে দাঁড়ানো জনতা।