একটা জঙ্গল ও ১১টি গ্রামের গল্প
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২মোনিইউ ইয়াইয়া কুলিবালি ও তার গবেষক দল প্রতি মাসেই তানো-এ-এহি জঙ্গলে পশুপাখি পর্যবেক্ষণে যান৷
একটা সময় শিকারী ছিলেন তিনি৷ তার সহজাত ধারণা তাকে সাহায্য করত৷ এখন অবশ্য তিনি প্রাণী সুরক্ষায় কাজ করেন৷ বিশেষ করে বানরদের জন্য৷ পর্যবেক্ষণ মিশনগুলোতে এ অঞ্চল সম্পর্কে তার জ্ঞান তাকে সাহায্য করে৷
আইভোরি কোস্টের দক্ষিণ-পূর্বে তানো-এ-এহি বনে ছয়টি ভিন্ন প্রজাতির বানর বাস করে৷ তাদের মধ্যে রয়েছে রোলোওয়ে - এক বিপন্ন প্রজাতির বানর, যা শুধু এখানেই দেখা যায়৷
গেল 50 বছরে, আইভোরি কোস্ট ৮০ ভাগেরও বেশি বনভূমি হারিয়েছে চোরাশিকার ও মনোকালচারের কারণে৷
তবে গহীন হবার কারণে তানো-এ-এহি জঙ্গল এখনো টিকে আছে৷ এর চারপাশে জলাভূমি৷ তাই বছরের একটা বড় অংশ জুড়ে এখানে ঢোকা কঠিন৷ এই ১২ হাজার হেক্টর এলাকা এখনো বিপন্ন স্তন্যপায়ীদের অভয়ারণ্য৷
সুইস সেন্টার ফর সায়েন্টিফিক রিসার্চ পর্যবেক্ষণের জন্য এই বৈজ্ঞানিক মিশনগুলোর উদ্যোগ নিয়েছে৷ তাদের কাজ বন সংরক্ষণ এবং পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ৷ গবেষক ড. কফি জাহা আন্দ্রের ভাষায়, ‘‘বনের কোন এলাকার সংরক্ষণে আরও মনোযোগী হতে হবে, তা বায়ো-মনিটরিংয়ের মাধ্যমে জানা সম্ভব৷ কারণ, কোথাও প্রাণীরা বেশি থাকে, কোথাও মানুষের কর্মকাণ্ড বেশি৷''
গবেষকরা স্থানীয় গ্রামে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করেন৷
যেমন এখানে, তারা একটি নতুন, উচ্চ ফলনশীল জাতের কাসাভা রোপণ শেখাচ্ছেন৷ কারণ গ্রামবাসীদের উপার্জনের যথেষ্ট উপাদান থাকলে তারা বনে সম্পদ খুঁজতে যাবেন না৷
স্থানীয় নারীদের একটি দল একটি সংরক্ষণ ও উন্নয়ন উদ্যোগে যোগ দিতে সম্মত হয়েছেন৷ স্থানীয় কৃষক নিয়ামকে আদজোবা বলেন, ‘‘কাসাভা বিক্রি করে আমার যে লাভ হয় তা আমি সমিতির তহবিলে রাখি৷ যদি বন সংরক্ষণের কাজে অর্থ প্রয়োজন হয়, বা যদি কেউ অসুস্থ হয়, আমরা এখান থেকে টাকা তুলি৷ তাই এটি বন ও মানুষ উভয়ের কাজে লাগে৷''
আয়ের ১০ ভাগ বন সুরক্ষায় নিয়োজিত মনিটরিং দলগুলিকে দেয়ার জন্য রাখা হয়৷ গবেষকরা ১১টি গ্রামের মানুষকে এই প্রকল্পে যোগ দিতে রাজি করিয়েছেন৷
‘‘দীর্ঘমেয়াদে, স্থানীয় মানুষকেই এই কাজ চালু রাখতে হবে৷ এমনকি আমরা এখানে না থাকলেও৷ তাই পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমটি কেমন করে টেকসই করা যায়, তাই শেখাচ্ছি আমরা,'' বলেন ড. আন্দ্রে৷
১১টি গ্রাম একটিই সংরক্ষণ ও উন্নয়ন সমিতির অন্তর্গত, এবং কুলিবালি এর সভাপতি৷ নিজের ক্ষেতে আর গাছ না কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি৷ তিনি বনে কৃষিকাজের পরীক্ষা করছেন৷ কমলা, কোকো আর নারকেল গাছ বেড়ে তুলছেন৷ তার আয়ের সিংহভাগ আসে এখান থেকেই৷
মোনিইউ ইয়াইয়া কুলিবালির ভাষায়, ‘‘আমি এভাবেই অবসরে যাচ্ছি৷ আমি যখন থাকব না, তখন আমার ছেলেমেয়েরা দেখবে যে তাদের বাবা ভালো কিছু করে গেছে এবং তারাও শিকারী হবে না৷ শিকারী হয়ে কতটাই বা খাবার জোটে?''
গ্রামবাসী আর গবেষক দল মিলে বনটিকে সংরক্ষিত ঘোষণা করার জন্য আবেদন করেছেন৷ এখন তারা কেবল রাষ্ট্রপতির আদেশের অপেক্ষায়৷
ক্লেলিয়া বেনার্ড/জেডএ