1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

একজন সাবরিনা ও সমাজের কদর্য চেহারা

১৩ জুলাই ২০২০

করোনার নমুনা পরীক্ষার নামে প্রতারণার অভিযোগে রোববার গ্রেফতার হন জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী৷ যে কারণে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন তার চেয়ে মুখ্য হয়ে উঠেছেন ব্যক্তি সাবরিনা৷

https://p.dw.com/p/3fDmy
ছবি: bdnews24.com

আমাদের সমাজে নারীদের যে কেবল ভোগের বস্তু মনে করেন বেশিরভাগ পুরুষ তা আবারও প্রমাণ হল সাবরিনার ঘটনায়৷ সাবরিনা আরিফ চৌধুরী পেশায় একজন হৃদরোগ সার্জন৷ টেলিভিশনের পরিচিত মুখ৷ টকশোতে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শ দিয়ে থাকেন৷ কিন্তু করোনার নমুনা পরীক্ষার নামে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার এই পরিচয়গুলো ছাপিয়ে নারী হিসেবে তিনি কতটা আকর্ষণীয় তাই যেনো প্রধান হয়ে উঠেছে৷ অর্থাৎ একদল মানুষ তার সৌন্দর্য্যকে ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমত ‘ভার্চুয়াল রেপ’ করছেন৷

হ্যাঁ তিনি সুন্দর৷ ছবি তুলতে এবং আপলোড করতে ভালোবাসেন৷ এটাই কি তার দোষ? তিনি যে দোষে দুষ্ট সেটাকে নিয়ে অনেক কথা হতে পারে, যে অন্যায় তিনি করেছেন সেসব বিষয়ে অভিযোগ উঠতে পারে৷ কিন্তু একজন নারী বলে তার ব্যক্তিগত জীবনের খুঁটিনাটি তুলে ধরে তাঁকে হেয় করার অধিকার আপনাদের কে দিয়েছে?

কোন অল্প শিক্ষিত পুরুষ কিন্তু এসব করছেন না৷ করছেন শিক্ষিতরাই৷ এমন কি পিছিয়ে নেই গণমাধ্যমগুলো৷ কে এই সাবরিনা? তিনি সিনেমার নায়িকা হওয়ার জন্য কত দুয়ার ঘুরেছিলেন? তার স্বামীর কয়টা বিয়ে? তিনি কবে কোথায় কার সাথে ঘুরতে গিয়েছিলেন তাই নিয়ে গণমাধ্যমে রীতিমত মাতামাতি৷

এ ধরনের ঘটনায় যখন কোন পুরুষ অভিযুক্ত হন, তখন কিন্তু তার ফেসবুক প্রোফাইল ঘেটে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয় না৷ আমাদের সমাজে ‘যৌন’ ‘সেক্স’ এই শব্দগুলো বলা বারণ, এই কাজগুলোও লুকিয়ে করতে হয়, তাই গুগলে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সার্চ করা শব্দ ‘সেক্স’৷ আর এই অবদমিত যৌন ইচ্ছের বলি হন সমাজের সাবরিনারা৷

HA Asien | Amrita Parvez
অমৃতা পারভেজ, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Böll

ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতা খুললেও একই জিনিস চোখে পড়ে৷ কোন শৈল্পিক ছবি নগ্ন কেনো তা নিয়ে অনেক অশ্লীল কথা বলেন পাঠকরা, যা ওই ছবির অশ্লীলতাকে ছাপিয়ে যায়, অথচ আমাদের এলগোরিদমে উঠে আসে ওই ছবিটিই সবচেয়ে বেশি দেখা হয়েছে৷

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সাবরিনাকে নিয়ে অজস্র স্ট্যাটাস৷ অনেকে সংবাদও শেয়ার করেছেন৷ সেগুলোর মন্তব্যের ঘরে কেউ লিখেছেন, ‘‘পর্ণ স্টারের মত লাগে, একে ধর্ষণ করলে উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হবে এছাড়া ভাষায় প্রকাশ করা যায় না এমন গালাগালি৷’’

একজন নারীর চেহারা দেখেই যদি আমাদের সমাজের ও গণমাধ্যমের ভিন্নভাবে তাকে উপস্থাপনের ইচ্ছে হয়, তাহলে বলতেই হবে আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলান৷ সাবরিনাকে নারী হিসেবে না দেখে একজন মানুষ হিসেবে দেখুন৷ আর যদি সাবরিনার সাজগোজ বা ছবি আপলোডে আপনাদের সমস্যা হয়, তাহলে তার ব্যক্তিগত ছবি ফেসবুকে পোস্ট না করে চোখে ঠুলি পরে থাকুন৷ এটাই সবচেয়ে বড় সমাধান৷

গত জানুয়ারির ছবিঘরটি দেখুন...

ডয়চে ভেলের সাংবাদিক অমৃতা পারভেজ৷
অমৃতা পারভেজ ডয়চে ভেলের মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক৷