‘একজন মাহফুজ আনামকে টার্গেট করা ঠিক নয়’
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘‘ডিজিএফআই-এর সঙ্গে ওনার (মাহফুজ আনামের) কি সখ্য ছিল? তা না হলে ওনাকে তারা যা ধরিয়ে দিত, তাই হুবহু ছাপিয়ে দিতেন কেন? যুদ্ধাপরাধীদের যেমন বিচার হচ্ছে, ঠিক সেভাবে একদিন তাদেরও বিচার হবে৷''
হাসিনা একই সঙ্গে আরো একটি পত্রিকার নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘‘দু'টি পত্রিকা ডিজিএফআই-এর লিখে দেওয়া মিথ্যা সংবাদ ছাপিয়ে সে সময় রাজনীতি থেকে আমাকে এবং খালেদা জিয়াকে চিরদিনের জন্য সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে৷ ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম সম্প্রতি তা স্বীকারও করেন৷''
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম মঙ্গলবার বলেন, ‘‘১/১১-এর পুরো ঘটনা জানার জন্য একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা প্রয়োজন৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত সত্য ও স্পষ্ট কথা বলেছেন৷ যারা সে সময় ভিলেন ছিল, তাদের অনেকে এখন হিরো হয়ে যাচ্ছে৷''
তাঁর কথায়, ‘‘একজন মাহফুজ আনাম বললেন ভুল করেছেন৷ এই ভুলের জন্য শুধু ভুল স্বীকার করলে হবে না, তাঁর পদত্যাগ করা উচিত ছিল৷ ১/১১-এর সময় শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে চক্রান্ত করে রাজনীতি থেকে সরানোর চক্রান্ত করা হয়েছিল৷ কিছু অশুভ শক্তি ক্ষমতা দখল করতে চেয়েছিল৷''
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশো অনুষ্ঠানে ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বর্তমান প্রধনিমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে সেনা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই-এর সরবারাহ করা তথ্য নিশ্চিত না হয়ে ছাপার ভুল স্বীকার করেন মাহফুজ আনাম৷ আনাম বলেছিলেন, ‘‘এটি ছিল আমার সম্পাদকীয় নীতিমালার ভুল৷'' এরপর থেকে প্রতিদিনই ডেইলি স্টার সম্পাদকের বিরুদ্ধে সারাদেশের আদালতেই মামলা হচ্ছে৷
সোমবার পর্যন্ত, অর্থাৎ ১৪ দিনে, মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে মোট ৭৭টি মামলা করা হয়েছে৷ এর মধ্যে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে করা হয়েছে ২১টি মামলা৷ এছাড়া মানহানির মামলাগুলোর মধ্যে ৫১টিতে ১ লাখ ২২ হাজার ৪৭০ কোটি ৫৫ লাখ টাকার মানহানি হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে৷ মামলাগুলির কয়েকটিতে মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে সমন এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে বলে খবর৷
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজের অতিরিক্ত বার্তা প্রধান প্রভাষ আমিন এই পরিস্থিতি সম্পর্কে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কেউই আইনের ঊর্ধে নয়৷ মাহফুজ আনামও নন৷ তিনি যদি কোনো অপরাধ করে থাকেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়াই যায়৷ কিন্তু দেশের প্রধানমন্ত্রী যখন আইনগত ব্যবস্থা বা বিচারের কথা নিজমুখে বলেন, তখন বিষয়টি ভালো দেখায় না৷ তিনি যখন বিচারের আওতায় নেয়ার কথা বলেন, তখন বিষয়টি তো আমলে নেয়ার মতোই৷''
তিনি বলেন, ‘‘আমরা যদি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা চিন্তা করি, তাহলে রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে এভাবে ক্ষোভ প্রকাশ না করলেই ভালো হতো৷ আমার কাছে বিষয়টি ভালো লাগেনি৷''
প্রভাষ আমিনের কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মনে করেন মাহফুজ আনামসহ দু'জন সম্পাদক ২০০৭ সালে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নেপথ্যে কাজ করেছেন৷ আমি মনি করি, এ জন্য শুধু মাহফুজ আনামকে দায়ী করা ঠিক না৷ আরো যারা এতে ‘রোল প্লে' করেছেন, যারা তখন জবানবন্দি দিয়েছেন, যারা জবানবন্দি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে ছাপিয়েছেন, তাদের সকলকেই দরকার হলে তদন্তের আওয়তায় আনা যেতে পারে৷ এককভাবে শুধু মাহফুজ আনামকে নয়৷ তিনি তো তাঁর ভুল স্বীকার করেছেন৷''
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে প্রভাষ আমিন বলেন, ‘‘মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে এতগুলো মামলা হয়রানিমূলক৷ যারা মামলা করেছেন বা করছেন, তারা কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, কীভাবে তাদের মানহানি হয়েছে? কিছু হয়ে থাকলে সেটা তো শেখ হাসিনার হয়েছে৷''
বন্ধু, আপনি কি প্রভাষ আমিনের সঙ্গে একমত? জানান মন্তব্যের ঘরে৷