এক কথায় বেরিয়ে এলো অর্থমন্ত্রীর আগের ইতিহাস
৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫বর্তমান অর্থমন্ত্রী একসময় এরশাদ সরকারের মন্ত্রী ছিলেন৷ তথ্যটি মনে করিয়ে দিয়ে শামস রাশীদ জয় ফেসবুকে অর্থমন্ত্রীর শিক্ষকদের নিয়ে করা সবশেষ মন্তব্যের সমালোচনা করেন৷ মন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি লিখেছেন, ‘‘হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকেরা বেশি দ্রুত কঠোর আন্দোলনে নেমেছেন, হতে পারে আরও কয়েকটি ধাপ আগে পার করে নেয়া উচিত ছিল৷ কিন্তু আপনি রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল পদে থেকে জাতির সকল শীর্ষ শিক্ষকদেরকে ঢালাওভাবে জ্ঞানহীন আখ্যা দিতে পারেন কি? আপনার কী কারণে মনে হলো যে জাতি আপনাকে জ্ঞানসম্রাট বলে মনে করে? বাই দ্য ওয়ে, ছাত্রলীগের ভাইয়েরা যখন রাজপথে গুলি খেয়ে মারা যাচ্ছিল তখন অবৈধ সেনাশাসকের ক্যাবিনেটে ছিলেন কোন জ্ঞানশক্তিতে?''
শেরিফ আল সায়ার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘স্বৈরাচার এরশাদ আমলের এবং এখনকার মন্ত্রী বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ‘জ্ঞানের অভাব'! শিক্ষকরা ‘করাপ্ট প্র্যাকটিস' করেন৷ সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমরা এতে অসম্মানিত বোধ করছি৷''
সাংবাদিক জায়েদুল আহসান পিন্টুও একই সুরে কথা বলেছেন৷ অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে তাঁর মতামত একটি অনলাইন মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে৷ তিনি সেটি তাঁর ফেসবুকেও শেয়ার করেছেন৷ পেশাগত জীবনে অর্থমন্ত্রীর আমলা হিসেবে দায়িত্ব পালনের প্রসঙ্গে উত্থাপন করে পিন্টু লিখেছেন, ‘‘...আইয়ুব খানকে স্যার ডেকেছেন৷ ইয়াহিয়াকে স্যার ডেকেছেন৷ জেনারেল জিয়াকে স্যার ডেকেছেন৷ আপনার জ্ঞানের মাত্রা একটু বেশি ছিল বলে জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সামরিক আইন জারির সঙ্গে সঙ্গেই আপনাকে ডেকে নিয়েছেন৷ সব সামরিক জান্তাকে সেবা দিয়েছেন এরশাদকে কেন নয়? এরশাদ আপনাকে মন্ত্রীই বানিয়ে দিল৷ স্যার স্যার ডেকে ডেকেই আপনার জীবন গেল৷ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আপনার কেন ভালো লাগবে? তাদেরকে সবাই স্যার ডাকে৷ আপনার গায়ে তো লাগবেই৷''
অর্থমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে শিক্ষকদের কোথায় মর্যাদার হানি হয়েছে সেটা তাঁর জানা নেই বলে উল্লেখ করেন৷ সাংবাদিক পিন্টু এই প্রসঙ্গটিও তাঁর লেখায় তুলে এনে বলেন, ‘‘...আপনি জানবেন কী করে? আমলারা না বললে তো কিছুই জানেন না দেখি! এ দেশে যে দু'টাকায় চকলেট পাওয়া যায় সেটাও আপনার জানা ছিল না৷ তাই এক টাকা দুই টাকা উঠিয়ে দিতে ৩০০ কোটি টাকা খরচ করতে চেয়েছিলেন৷ শিক্ষকরা দুর্নীতি করে সেটা আপনি জানেন, আপনি আরো জানেন হলমার্ক ৪ হাজার কোটি টাকা চুরি করলেও দেশের অর্থনীতিতে কোনো প্রভাব পরে না৷ আপনি এটাও জানেন দেশের শেয়ারবাজার লুটেপুটে খাওয়ার পরও দেশের কোনো ক্ষতি হবে না৷ আর বিসমিল্লাহ গ্রুপের হরিলুট বা বেসিক ব্যাংকের হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি কোনো ব্যাপারই না৷''
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফাহমিদুল হক মনে করেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য রাজনীতিবিদদের কাছে ধরনা দেন৷ তাই একই রাজনৈতিক দলের হয়েও সরকারের কাছ থেকে দাবি আদায় করে নিয়ে আসার মতো নৈতিক বল ও তেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের থাকেনা৷ বেতন কাঠামো নিয়ে গত জুনে প্রকাশিত ফাহমিদুল হকের এ লেখাটি ফেসবুকে শেয়ার করেছেন সাঈদ ফেরদৌস৷
আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী হোসেইন মনে করেন আমলাতন্ত্র দিয়ে সরকার ক্ষমতায় টিকে আছে৷ তাই আমলাদের খুশি করতে সরকার তৎপর৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘মাস্টারদের আরেকটু জ্ঞান থাকলে তারা তো বুঝতোই যে, সরকার তো আমলা-টামলা দিয়াই পাওয়ারে আছে, পিপলের অল্টারনেটিভ হবার যোগ্যতা মাস্টারদের কি আছে, যেইটা আছে আমলাদের? তো, যারা আপনারে টিকাইয়া রাখছে তাগো বেশি টাকা দেবেন না আপনে?''
এদিকে, বাংলাট্রিবিউনে প্রকাশিত সাংবাদিক গোলাম মোর্তোজার লেখার একটি অংশ ফেসবুকে শেয়ার করেছেন মাওলানা ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোস্তফা কামাল৷ প্রতিবেশী ভারত, শ্রীলঙ্কা এমনকি পাকিস্তানেও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অনেক বেতন দেয়া হয় উল্লেখ করে মোর্তোজা লিখেছেন, বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সৎ উপায়ের উপার্জন দিয়ে স্বচ্ছল জীবনযাপন করা কষ্টকর৷
সংকলন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ