এইডস দমনে সনাতন চিকিত্সা
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩জাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া জামেহ বেশ কয়েক বছর ধরে ম্যালেরিয়া ও এইডসকে দমন করতে সনাতন পদ্ধতি যেমন স্পর্শ থেরাপি ও ভেষজ ওষুধের মাহাত্ম্য তুলে ধরছেন৷ জাম্বিয়ায় এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত প্রায় ৩৬০০০ মানুষকে নিখরচায় এই ধরনের বিকল্প থেরাপি দেয়ার সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে৷
বিশেষ হাসপাতাল
প্রেসিডেন্ট জামেহ নববর্ষের শুভেচ্ছা বাণীতে এমন একটি হাসপাতাল নির্মাণ করার ঘোষণা দিয়েছেন, যেখানে শুধু মাত্র আফ্রিকার সনাতন পদ্ধতিতে চিকিত্সা দেয়া হবে৷ সেখানে এমন ধরনের ভেষজ ওষুধপত্র ব্যবহার করা হবে, যার মাধ্যমে কয়েক দিনের মধ্যেই এইচআইভিতে আক্রান্তরা সুস্থ হয়ে উঠবেন৷ এই হাসপাতালে ১১১১ টি বেড থাকবে৷ প্রেসিডন্ট জামেহ আশা করেন, মাস ছয়েকের মধ্যেই ১০ হাজার এইডস রোগী আরোগ্য লাভ করবেন৷ ২০১৫ সালের মধ্যে হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শেষ হবে৷ আফ্রিকার বহু অসুস্থ মানুষের মনে এই ধরনের চিকিত্সা পদ্ধতি আশা আলো জাগাচ্ছে৷
তবে এই বিষয়টি খুব বিপজ্জনক, মনে করেন ডক্টর্স উইদ আউট বর্ডার্স-এর অলিভার মল্ডেনহাউয়ার৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘এই ধরনের বক্তব্য রোগীদের জন্য জীবন বিপন্নকারী৷ আমরা প্রায়ই লক্ষ্য করেছি, অনেক রোগীই মৃত্যু মুখে ঢলে পড়ছেন, যাঁরা এই ধরনের কথায় আস্থা রেখে জীবন রক্ষাকারী থেরাপি প্রত্যাখ্যান করেছেন৷ হঠাৎ করে আশ্চর্যজনকভাবে এই ধরনের কঠিন রোগ ব্যাধি ভালো হয়ে যাবে, বিষয়টি একেবারে অবাস্তব৷''
এইডস নিরাময়কারী ওষুধ বের হয়নি
শরীরের প্রতিরক্ষা শক্তিকে দুর্বল করে দেয়া ব্যাধি এইডসকে নিরাময় করার মত থেরাপি এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি৷ এখন যে সব অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল ওষুধ এইডস প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়, সেসব ওষুধ রোগটিকে কেবল নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে৷ অবশ্য এই পদ্ধতির সঠিক প্রয়োগে এইচআইভি ভাইরাসকে কঠোরভাবে দমন করা যায়৷ রোগীরা প্রায় স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারেন৷ এইসব ওষুধপত্র নিয়মিত গ্রহণ করলে প্রায় সুস্থ মানুষের মতোই আয়ু তারা পেতে পারেন৷ তবে এই সব ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও কম নয়৷ এছাড়া এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অনেকটা নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন, কেননা রোগটি সম্পর্কে এখনও অনেক নেতিবাচক ধারণা রয়েছে মানুষের মনে৷ আর এক্ষেত্রেই সনাতন চিকিত্সা পদ্ধতি সুফল বয়ে আনতে পারে৷ বলেন আফ্রিকান সনাতনী চিকিত্সকদের কেন্দ্রীয় সংগঠনের সমন্বয়কারী ফেপসাইল মাসেকো৷ তিনি ঐতিহ্যবাহী আফ্রিকান চিকিত্সা পদ্ধতির ইতিবাচক দিকটি তুলে ধরছেন৷ মাসেকো জানান, ‘‘এটি একটি পরিপূর্ণ চিকিত্সা পদ্ধতি৷ একজন মানুষের মন, দেহ ও আত্মার দিকটি বিবেচনা করা হয় এই পদ্ধতিতে৷''
স্বাস্থ্য রক্ষায় তিন দিক
সনাতন চিকিত্সা পদ্ধতি স্বাস্থ্য রক্ষায় এই তিনটি দিককেই গুরুত্ব দেয়৷ বলেন মাসেকো৷ এ কারণে অনেক রোগী হাসপাতালে যাওয়ার বদলে এই পদ্ধতির দিকেই ঝুঁকে পড়েন৷
তবে সনাতন পদ্ধতির সব চিকিত্সকই যে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অধিকারী, একথা বলা যায় না৷ তবু ভুক্তভোগীদের ৮০ শতাংশই এই সব চিকিত্সকের শরণাপন্ন হন প্রথমে৷ এর একটা সামাজিক কারণও রয়েছে৷ বলেন, এইডস ফাউন্ডেশনের আন্দ্রে মিটি৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘একজন সনাতন চিকিত্সক কারো বাড়িতে গেলে আশেপাশের মানুষের মনে কঠিন কোনো রোগের কথা মনে হয় না৷ যেমন ওই বাড়িতে একজন টিবি রোগী রয়েছে কিংবা আরেক বাড়িতে বাস করছেন একজন এইডস রোগী৷ কিন্তু কোনো নার্সকে দেখলে মারাত্মক অসুখের কথাই জেগে ওঠে মানুষের মনে৷''
নানা সমস্যায় পরামর্শ
সনাতনী ধারার চিকিত্সকরা শুধু রোগ বালাইয়ের চিকিত্সাই নয়, জীবনের নানাবিধ সমস্যাতেও পরামর্শ দিয়ে থাকেন৷ মানুষের আস্থাভাজন ব্যক্তিও তারা৷ এ কারণে এইডস ফাউন্ডেশন এই সব চিকিত্সকের সঙ্গে একত্রে কাজ করতে আগ্রহী৷ এদের মাধ্যমে সংস্থাটি এমন সব মানুষের সংস্পর্শেও আসে, যাঁরা নিজে থেকে কখনও হাসপাতালে যেতেন না৷ সনাতনী চিকিত্সকদের রোগটি সম্পর্কে বিশদভাবে নানাবিধ তথ্য দেয়া হয়৷ পরে তারা নার্স ও ডাক্তারদের সঙ্গে একত্রে কাজ করেন৷ হাসপাতালে গিয়েও তারা রোগীদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন৷ ডাক্তাররা রোগীদের অবস্থা সম্পর্কে সনাতনী চিকিত্সকদের অবগত করান৷ রোগী বাড়িতে ফিরে এলে সনাতনী পদ্ধতিতে ভেষজ ওষুধ দিয়ে চিকিত্সা করেন তাঁরা৷ নজর রাখেন রোগীর স্বাস্থের প্রতি৷ প্রয়োজন হলে আবার হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন৷ এইভাবে তারা এইডস-এর চিকিত্সায় পরিপূরক হতে পারেন৷ আফ্রিকার এইডস প্রতিরোধী সংস্থাগুলি সাদরে গ্রহণ করছে তাদের সহযোগিতা৷