‘এই পরিস্থিতিতে কোরবানি হলে কিছুটা ঝুঁকি তো থাকবেই’
১৭ জুলাই ২০২০ডয়চে ভেলে : কোরবানি ফরজ, না ওয়াজিব?
এ এফ হাসান আরিফ : আমরা আসলে মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের না৷ তাই এটা নিয়ে ডিটেল বলা আমাদের সাজেও না, সম্ভবও না৷ আমরা আলেমদের কাছ থেকে বয়ানে-বক্তৃতায় শুনি, মক্কায় গিয়ে যে হজ করা হয় সেটা যাদের সামর্থ্য আছে তাদের জন্য৷ কোরবানিও যাদের আর্থিক সামর্থ্য আছে তাদের জন্য৷ হুজুরদের কাছ থেকে আমরা শুনেছি এটা ওয়াজিব৷
কোরবানি পালন করা কি আবশ্যিক, নাকি নয়?
ফরজ হলো আবশ্যিক৷ আর যদি সেটা না হয় তাহলে সেটা ওয়াজিব৷ এর অনেক ব্যাখা বিশ্লেষন আছে৷ আলেম বা ইসলামিক স্কলার যারা তারা হয়তো এই বিষয়গুলো আরো ব্যাখা করে বলতে পারবেন৷ মোটা দাগে আমরা যেটা বুঝি এটা আবশ্যিক না, ওয়াজিব৷
বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে কেউ যদি মনে করে এবার কোরবানি দেবে না, তাহলে কি হতে পারে?
আলেমদের কাছ থেকে আমরা যে নির্দেশনা পেয়েছি, সেটা হলো, শুক্রবারের জুম্মার নামাজ কিছুদিন বন্ধ ছিল৷ পরে একটা সামাজিক দূরত্ব মেনে মসজিদে পড়ার সুযোগ দেওয়া হয়৷ এবারও কোরবানির যে জামাত সেটা বাইরে হচ্ছে না, মসজিদে হবে৷ সেখানেও স্বাস্থ্য বিধি মেনে এই নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ কোরবানি দেওয়ার ব্যাপারে আমরা এখনো আলেমদের কাছ থেকে দিকনির্দেশনা পাইনি৷কারণ, কোরবানির সময় সামাজিক দূরত্ব কিভাবে বজায় রাখা যাবে, বা বজায় রাখা হবে কিনা? ধরেন, বাড়ির কর্তা কোরবানির সময় থাকলেন না৷ কিন্তু যারা কোরবানি দেবেন, তাদের পক্ষে তো সমাজিক দূরত্ব মেনে কাজ করা সম্ভব না৷ তাহলে কি এই জায়গাটাই কিছুটা ছাড় দিতে হবে বা ঝুঁকি নিতে হবে? একটা বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে গিয়ে কিছুটা ঝুঁকি নিতে হবে? এ ব্যাপারে তাদের কাছ থেকে আমরা হয়ত একটা দিক নির্দেশনা পাবো৷
আপনি কোরবানি দেওয়া নিয়ে কিছু ভেবেছেন? আপনি কি কোরবানি দিচ্ছেন?
এই মুহুর্ত পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি৷ আগামীতে কী হয় দেখা যাক৷ এখনো তো সময় আছে৷ ফলে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে৷
আপনি কি মনে করেন এই পরিস্থিতিতে কোরবানি ঝুঁকিপূর্ণ?
একটু আগেই বললাম, আমি হয়তো শারিরিকভাবে সেখানে থাকলাম না৷ কিন্তু যারা জবাই করবেন বা প্রসেস করবেন, তাদের তো দৈহিক সংযোগ থাকবে৷ যে ৫-৬ জন লোক কাজ করবেন তারা তো ঝুঁকির মধ্যেই থাকবেন৷
হজ যেমন সীমিত আকারে হচ্ছে, কোরবানিও কি সীমিত আকারে হতে পারে?
সীমিত আকারে প্রশ্নটা সুন্দর৷ কিন্তু সীমিত আকারে কোন জায়গায় টানা যাবে? একটা হতে পারে কিছু লোক করবে, কিছু লোক করবে না৷ এটা তো তাহলে সীমিত আকারে হলো না৷ যেমন নামাজ হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে৷ তাহলে এখানে এটা কিভাবে কার্যকর করা যাবে, সেটা চিন্তার বিষয়৷ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন বলছে, হজের সময় যেমন কোরবানি হয় তারা সেভাবে করে দেবেন৷ যারা হজে গেছেন, তারা তো জানেন, আমরা টাকা দিয়ে দিলে কোরবানি হয়ে যাচ্ছে৷ আমরা কিন্তু চোখে দেখি না৷ মেকানিক্যাল প্রোসেসে৷ মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ওই প্রসেসে তারা কোরবানি দিয়ে বাসায় বাসায় কোরবানির গোস্ত পৌঁছে দেবেন৷ এটা একটা পদ্ধতি হতে পারে৷ এখানে ঝুঁকিটা আর থাকবে না৷ এটা কত ব্যাপক আকারে করা যাবে সেটা একটা বিষয়৷ কারণ, তাদের ক্যাপাসিটি কত? কারণ, ঢাকা শহরে তো হাজার হাজার পশু কোরবানি হয়৷ তবে উনার পদক্ষেপটা ভালো৷ এটা আগামীতে আরো বিরাট আকারে হতে পারে৷ তাহলে রাস্তায় আর পশু জবাই করতে হবে না৷
কোরবানি উপলক্ষে গরিব ও দুঃস্থ মানুষ বছরের একটা সময় মাংস খাওয়ার সুযোগ পান৷কিন্তু এবার সীমিত আকারে কোরবানি হলে তারা কি বঞ্চিত হবেন না?
এটার তো একটা বড় সামাজিক দিক আছে৷ কোরবানির যে বিলি-বন্টন ব্যবস্থা সেটা হচ্ছে, এক তৃতীয়াংশ গরিব দুঃস্থ মানুষকে দিতে হয়৷ আর এক তৃতীয়াংশ আত্মীয় স্বজনকে দিতে হয়৷ বাকি যে একাংশ থাকে সেটা নিজের পরিবার ও স্বজনরা পান৷ তবে এখানে কোনো বিধিনিষেধ নেই, যে কেউ চাইলে আরো বেশি গরিব দুঃস্থদের দিতে পারবেন৷ আমি সব সময় গ্রামে কোরবানি দেওয়ার পক্ষে৷তাহলে গ্রামের গরিব দুঃস্থ মানুষ তাতে অংশগ্রহন করতে পারে৷ এখন ঝুঁকির কারণে অনেকেই যদি সিদ্ধান্ত নেন, তারা কোরবানি দেবেন না, তাহলে তো নিশ্চিতভাবে একটা বড় দুঃস্থ অংশ যারা সচরাচর মাংস খেতে পারেন না, তারা বঞ্চিত হবেন৷
কোরবানিকেন্দ্রিক পশু ব্যবসার একটা বড় অর্থনীতি দেশে সৃষ্টি হয়েছে৷ এবার সেই অর্থনীতি কি ধাক্কা খাবে না?
করোনা ভাইরাসের কারণে হাটগুলোতে একটা বিধিনিষেধের কথা বারবারই বলা হচ্ছে৷ আগে তো সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি কোরবানি দেবেন কিনা৷ তারপর কেনার বিষয়৷ আমরা দেখছি, বিগত কয়েকবছর ধরে আমাদের দেশে গরুর ফার্মিং ভালোভাবে উন্নত হয়েছে৷ ক্রমান্বয়ে এটা ব্যপকতা লাভ করছে৷ এর ফলে আমাদের বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে না, স্বাবলম্বী হওয়ার একটা চেষ্টা আছে৷ এক্ষেত্রে তো অবশ্যই একটা বিরাট ধাক্কা খাবে৷ নানা কারণেই এবার গবাদি পশুর ব্যবসা একটা ঝুঁকির মধ্যে আছে৷