ব্যর্থ রকেট পরীক্ষা
১৩ এপ্রিল ২০১২হিসেব মিললো না৷ এই প্রথম বিদেশ থেকে একঝাঁক সাংবাদিককে এনে ঢাকঢোল পিটিয়ে রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ঘুরিয়ে দেখানো হয়েছিল৷ প্রথমে খারাপ আবহাওয়ার কারণে উৎক্ষেপণের সময় পিছিয়ে দিতে হয়৷ তারপর শুক্রবার ভোরে রকেট যাত্রা শুরু করে৷ কিন্তু মাঝ আকাশেই ভেঙে পড়ে স্যাটেলাইট সহ রকেটটি৷ দেরি না করেই উত্তর কোরিয়া ব্যর্থতা স্বীকার করে নেয়, যা এক বিরল ঘটনা৷
আরও বিরল ঘটনা হলো উত্তর কোরিয়ার এমন প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে ঘনিষ্ঠ দেশ চীন ও রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া৷ এই প্রথম দুই দেশই প্রকাশ্যে উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে চরম বিরক্তি প্রকাশ করেছে৷ চীন বলেছে, উত্তর কোরিয়া রকেট উৎক্ষেপণের সময় সম্পর্কে আগাম কোনো খবর দেয় নি৷ সরাসরি উত্তর কোরিয়ার নাম নিয়ে খোদ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিউ ওয়াইমিন বলেন, ‘‘কোরীয় গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চীনকে এবিষয়ে কিছু জানানো হয় নি৷'' তবে সব পক্ষের প্রতি সংযম দেখানোর ডাক দিয়েছে বেইজিং৷ এতকাল ধরে সবরকম সহায়তা দেওয়া সত্ত্বেও চীনের প্রতি উত্তর কোরিয়ার এই সাম্প্রতিক অবজ্ঞার পরিণতি নিয়ে কূটনৈতিক মহলে জল্পনা-কল্পনা চলছে৷
রাশিয়া আরও এক ধাপ এগিয়ে উত্তর কোরিয়ার সরাসরি সমালোচনা করেছে৷ মস্কো বলেছে, জাতিসংঘের প্রস্তাব অমান্য করেছে পিয়ং ইয়ং৷ প্রতিবেশী দেশগুলিও এই পদক্ষেপের বিরোধী৷ উৎক্ষেপণের আগেই রাশিয়া উত্তর কোরিয়াকে সতর্ক করে দিয়েছিল৷ শুধু নিজেদের হয়ে নয়, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনার কাঠামোর বাকি দেশগুলির হয়েও মস্কো পিয়ং ইয়ং'কে কড়া ভাষায় সাবধান করে দেয়৷ চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে মস্কোর এমন অবস্থান সত্যি বিরল ঘটনা৷ শুক্রবার মস্কোয় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস এম কৃষ্ণার সঙ্গে আলোচনার পর রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ স্বয়ং এই মন্তব্য করেন৷
ওয়াশিংটন ও তার সহযোগীদের সন্দেহ, উত্তর কোরিয়া আসলে স্যাটেলাইট কার্যক্রমের আড়ালে দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছে৷ শুক্রবারের ব্যর্থতার পরে সেই সমালোচনার সুর আরও কড়া হয়ে উঠেছে৷
এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, কোণঠাসা হয়ে পড়া উত্তর কোরিয়ার প্রশাসন এই সামরিক ও কূটনৈতিক ব্যর্থতার লজ্জা ও অপমান দূর করতে কী পদক্ষেপ নেবে? ২০১২ সালকেই পিয়ং ইয়ং দেশকে ‘শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ' করে তোলার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছিল৷ দেশের নতুন নেতা কিম জং উন'এর মান সম্মান বাঁচাতে প্রয়োজন চটজলদি কোনো সাফল্য৷ কিছু পর্যবেক্ষক মনে করছেন, আরও একটি পারমাণবিক পরীক্ষা অথবা দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে ব্যর্থতার গ্লানি দূর করতে পারে কিম জং উন'এর প্রশাসন৷ সেদেশের সামরিক বাহিনী কোনো প্ররোচনামূলক পদক্ষেপও নিতে পারে৷ বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়ায় এমন আশঙ্কা বাড়ছে৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন, (রয়টার্স, এএফপি)
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ