উচ্চবিত্তকে সুবিধা দেয়ার বাজেট: সিপিডি
১৪ জুন ২০১৯এই বাজেট ‘‘স্বচ্ছল উচ্চ আয়ের মানুষকে অনেক বেশি সুবিধা দিচ্ছে৷ গরিব মানুষের জন্য প্রান্তিকভাবে এক ধরনের একটা ববস্থা থাকছে৷ বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত, বিকাশমান মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত- এ থেকে খুব বেশি উপকৃত হবে না,'' ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেছেন সংস্থাটির ‘সম্মানীয় ফেলো' দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য৷
ঘোষণার পরদিন শুক্রবার এক সংবাদ সম্মলেনে বাজেট নিয়ে সিপিডির পর্যালোচনা ও মতামত তুলে ধরা হয়৷ বিশ্লেষণে বলা হয়, একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে গরিব মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে কাজ করার যে প্রতিশ্রুতি ছিল, তার প্রতিফলন এই বাজেটে দেখা যাচ্ছে না৷
‘‘যারা অর্থনৈতিক অপশাসনের সুবিধাভোগী, এই বাজেট এবারও তাদের পক্ষেই গেছে৷ কারণ পরিবর্তনের জন্য যে রাজনৈতিক অঙ্গীকার বা অর্থনৈতিক কৌশল প্রয়োজন, তা বাজেটে নেই, অথচ তা ইশতেহারে ছিল৷ এটাই পরিতাপের বিষয়,'' বলেছেন দেবপ্রিয়৷
তিনি বলেন, দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে, কিন্তু গরীব মানুষের মধ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে সক্ষমতা বাড়ছে না৷ বরং আয় বৈষম্য, ধনের বৈষম্য, ভোগের বৈষম্য বাড়ছে৷ গ্রামীণ অর্থনীতিতে এটা আরও প্রকট হচ্ছে৷
‘উপস্থাপনায় অভিনবত্ব, ভেতরটা ফাঁকা'
এবারের বাজেটের নানা দিক উপস্থাপনার ক্ষেত্রে নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অভিনবত্ব দেখালেও ভেতরে তেমন অভিনবত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য৷
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে যে ধরনের চাপ এই মুহূর্তে সরকারের আছে, সেই ‘চাপের স্বীকৃতি' অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় নেই৷ ‘‘যেহেতু সমস্যাটারই স্বীকৃতি নাই, সেহেতু উনারা কোনো অভিনব কৌশল খোঁজেননি৷ মুদ্রানীতির ভেতরে, বাণিজ্যনীতির ভেতরে অথবা ভর্তুকি বিতরণের ক্ষেত্রে- কোনো ক্ষেত্রেই সেই ধরনের অভিনবত্ব নাই,'' বলেন দেবপ্রিয়৷
তিনি বলেন, ‘‘উপস্থাপনার ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রী যে ধরনের অভিনবত্ব দেখিয়েছেন, উনার বাজেট প্রস্তুতের এবং প্রস্তাবনার ভেতরে সেই অভিনবত্বটা আমরা দুঃখজনকভাবে খুঁজে পাইনি৷''
বাজেটে বলা হয়েছে করদাতার সংখ্যা এক কোটিতে উন্নীত করা হবে৷ কিন্তু কত বছরে, কীভাবে তা হবে এবং তার মাধ্যমে কত টাকা রাজস্ব আসবে- সে বিষয়ে কোনো রূপরেখাও বাজেটে নেই বলে মন্তব্য করেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো৷ ‘‘বাতাসের ভেতরে কিছু আশ্বাসের বাণী হয়ত গেছে৷ আমরা মনে করি না সে রকম বাস্তবভাবে সেগুলো এসেছে,'' বলেন তিনি৷
বাজেট নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আর অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যের মধ্যে প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকার তফাৎ পাওয়ার কথা তুলে ধরে দেবপ্রিয় বলেন, ‘‘যদি রাজস্ব বোর্ডের তথ্যগুলো ব্যবহার করেন, তাহলে অবশ্যই ভালো দেখা যাবে হারগুলো৷ যদি অর্থ মন্ত্রণালয়েরটা ব্যবহার করেন, তাহলে হার কম দেখা যাবে৷ মন্ত্রী মহোদয় বোধহয় বিচক্ষণতার সাথে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডেরটাই ব্যবহার করেছেন৷''
তথ্যের ‘সামঞ্জস্যহীনতার' উদাহরণ দিতে গিয়ে দেবপ্রিয় বলেন, ‘‘ট্যাক্সের যে উৎসে কর কাটা হবে, সেটার স্ল্যাবগুলো কী হবে, সেটা বক্তৃতার ভেতরে আছে ২৫ লাখ টাকা৷ আর এনবিআর হিসাব দিয়েছে ১৫ লাখ টাকা৷ এখানে সমস্যা রয়ে গেছে৷ তথ্য উপাত্তের নিশ্চয়তা নিরূপণ করেন এবং সামঞ্জস্য বিধান করেন, বাজেটে আরও স্বচ্ছতা নিয়ে আসেন৷''
বাজেটের আকার বাড়লেও জিডিপি অনুযায়ী সেটাকে যথেষ্ট মনে করছে না সিপিডি৷ এ প্রসঙ্গে ফেলো দেবপ্রিয় বলেন, ‘‘বাজেটের আকার টাকার অংকে বাড়লেও জিডিপির অনুপাতে বাড়েনি৷ লক্ষ্যমাত্রার সাথে বাস্তবায়নের পার্থক্য বেড়ে যাচ্ছে …বাজেটে ঘাটতি ৫ শতাংশের ওপরেই আছে৷ এবার সেটা বাড়বে কি না রাজস্ব আহরণের ওপর নির্ভর করবে৷''
ব্যাংকিং খাতের ভূমিকার ক্ষেত্রে নতুন কিছু এবারের বাজেটে পাওয়া যায়নি বলে মন্তব্য করেন দেবপ্রিয়৷ বৈদেশিক আয়-ব্যয়ে ঘাটতি সৃষ্টি হচ্ছে, বাজেটে সেই বিষয়ে কোনো সচেতনতা লক্ষ্য করা যায়নি বলেই মত তাঁর৷
অর্থমন্ত্রী কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘‘ব্যাংক ও আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা সুদৃঢ় কার জন্য একটি ব্যাংক কমিশন প্রতিষ্ঠার কথা আমরা দীর্ঘদিন শুনে আসছি৷ এ বিষয়টি নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব৷''
মন্ত্রীর এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে দেবপ্রিয় বলেন, ‘‘ব্যাংকিং খাতকে একটা আলোচ্য বিষয় বানিয়ে দিল! সেটার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে আলোচনায় সময়ক্ষেপের ভেতরে চলে গেল আর কি৷ পুরো জিনিস ব্যাংক কমিশনের বিষয়…৷ কোনো সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা স্বীকৃতিতে আসল না৷''
এমবি/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)