ইয়েমেনে আল কায়দার প্রভাব বাড়ছে
২ ফেব্রুয়ারি ২০১০গত সপ্তাহান্তে শোনা গিয়েছিল, যে সৌদি সীমান্তে ইয়েমেনের সেনাবাহিনীর সঙ্গে শিয়া বিদ্রোহীদের সংঘর্ষ প্রায় শেষ পর্যায়ে৷ কিন্তু বিদ্রোহী নেতা আবদুল মালিক আল হুতি অস্ত্রবিরতির প্রস্তাবে রাজি হওয়া সত্ত্বেও সরকারের পূর্বশর্ত ছিল – যতদিন না বিদ্রোহীরা সৌদি আরবের বিরুদ্ধে তৎপরতা বন্ধ করে, ততদিন কোন যুদ্ধবিরতি সম্ভব নয়৷
অভ্যন্তরীণ সমস্যা
গত প্রায় ৬ বছর ধরে ইয়েমেনের নিরাপত্তা বাহিনী উত্তরে শিয়া জাইদি সম্প্রদায়ের হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে৷ বার বার অস্ত্রবিরতির উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে, কিন্তু সংঘর্ষ থামে নি৷ সৌদি ভূখণ্ডে একাধিক হামলার ফলে সম্প্রতি সৌদি আরবের বিমানবাহিনী সীমান্ত পেরিয়ে বিদ্রোহীদের উপর হামলা শুরু করেছে বলে শোনা যাচ্ছে৷ ইরানও এই সঙ্কটে জড়িয়ে পড়েছে৷ তেহেরান থেকে অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ ও প্রচারণা সহ বিভিন্ন রকম সাহায্য পাচ্ছে শিয়া বিদ্রোহীরা৷
উত্তরের এই সংঘর্ষই ইয়েমেনের একমাত্র সমস্যা নয়৷ দক্ষিণেও মাথা চাড়া দিচ্ছে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন৷ ১৯৯১ সালে পুনরেকত্রিকরণের আগে সেখানে এক সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত ছিল৷ এখন তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ করছে৷ ফলে আবার বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার দাবি তুলছে কিছু গোষ্ঠী৷
আল কায়দার ক্ষমতাবৃদ্ধি
ইয়েমেনের এই দুই অভ্যন্তরীণ সঙ্কটের পাশাপাশি যে সমস্যা আন্তর্জাতিক মাত্রা পেয়েছে, তা হল সেদেশে আল কায়দার বেড়ে চলা শক্তি৷ ১১ই সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, তাদের মধ্যে বেশীরভাগই ছিল সৌদি আরব ও ইয়েমেনের নাগরিক৷ সন্ত্রাসীরা দেশে ফিরে এসেও যথেষ্ট স্বীকৃতি ও সম্মান পেয়ে সমাজে মিশে যাচ্ছে৷ বেশ কয়েক বছর ধরেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, যে আল কায়দা ইয়েমেনকে ঘাঁটি হিসেবে শক্তিশালী করে তুলছে৷ মার্কিন ও পশ্চিমা স্থাপনার উপর হামলা বেড়ে চলেছে৷ সম্প্রতি আমেরিকায় যে সন্ত্রাসী হামলার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল, তার সঙ্গে জড়িত নাইজেরিয়ার আততায়ীও ইয়েমেনে প্রশিক্ষণ পেয়েছিল৷
সরকারের বিড়ম্বনা
ইয়েমেনের সরকার অত্যন্ত দুর্বল – অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহ'র পক্ষে আমেরিকার সঙ্গে বেশী ঘনিষ্ঠতার পথে যাওয়াও কঠিন৷ প্রকাশ্যে না হলেও মার্কিন সেনাবাহিনী ইয়েমেনের বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজে এবং আল কায়দার বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযানেও জড়িত রয়েছে৷ মনে রাখতে হবে, সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা না পেলেও আল কায়দা ইয়েমেন, সৌদি আরব সহ গোটা অঞ্চলে সক্রিয় রয়েছে৷ ইয়েমেনের অদূরে সোমালিয়াও আল কায়দায় ঘাঁটি বলে পরিচিত৷
ইয়েমেন ও তার সংলগ্ন অঞ্চলে যা ঘটে চলেছে, তা পাকিস্তানে দীর্ঘদিন আগেই বাস্তবে পরিণত হয়েছে৷ আফগানিস্তানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তালেবান বিদ্রোহীদের ক্ষমতাকেন্দ্র আজ পাকিস্তানে ফিরে গেছে৷ সেখানেই তাদের জন্ম হয়েছিল, সেখান থেকেই তারা আবার আফগানিস্তানে ক্ষমতা কব্জা করার স্বপ্ন দেখছে৷ তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে যাবতীয় মার্কিন প্রচেষ্টা এখনো পর্যন্ত বিফল হয়েছে৷ সন্ত্রাসবাদীদের উপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা আফগানিস্তান, পাকিস্তান, সোমালিয়া বা ইয়েমেন – কোথাও কার্যকর হয় নি৷
প্রতিবেদন: পেটার ফিলিপ, ভাষান্তর: সঞ্জীব বর্মন, সম্পাদনা: দেবারতি গুহ