ইয়েমেন: দাতাসংস্থাগুলোর অর্থ ফুরিয়ে যাচ্ছে
ইয়েমেনে যুদ্ধ চলছে৷ দেশটির অনেক বাসিন্দার জীবনই বিদেশি সহায়তানির্ভর৷ কিন্তু সেসব দাতাসংস্থার অর্থ দ্রুতই শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে৷
ত্রাণের স্বল্পতা
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনের মানবিক পরিস্থিতির আবারো অবনতি ঘটছে৷ জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)-র দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে এক কোটি ত্রিশ লাখ মানুষ এখন অনাহারে থাকার ঝুঁকিতে রয়েছেন৷ ইয়েমেনে চলমান গৃহযুদ্ধ এবং মানবিক সহায়তার ঘাটতির কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে৷
উচ্চ নির্ভরশীলতা
করোনা মহামারি শুরুর পর থেকেই অনেক মানুষ ক্ষুধার্ত অবস্থায় সময় কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন৷ ইয়েমেন হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম বঞ্চিত রাষ্ট্র, যেটির চল্লিশ শতাংশ মানুষই ডাব্লিউএফপির ত্রাণ সহায়তার উপর নির্ভরশীল৷
অর্থসংকট
‘‘আমরা তিনকোটি মানুষের একটি দেশের এক কোটি ত্রিশ লাখ মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা করছি, এবং আমাদের অর্থ ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে,’’ বলেন ডাব্লিউএফপির প্রধান ডেভিড বিসলি৷ ‘‘আমি এখন ইয়েমেনের শিশুদের জন্য কী করবো? ইথিওপিয়া বা আফগানিস্তান বা নাইজেরিয়া বা সিরিয়ার শিশুদের কাছ থেকে খাবার চুরি করে নিয়ে আসবো? সেটা ঠিক হবে না,’’ যোগ করেন তিনি৷
আংশিক সহায়তা
মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকায় ডাব্লিউএফপির পরিচালক কোরিনে ফ্লাইশার বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে যারা ক্ষুধায় মরে যাওয়ার আশঙ্কায় আছেন শুধু তারাই পূর্ণ সহায়তা পাচ্ছেন৷ এরকম মানুষের সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশ লাখ৷’’ ইয়েমেনে কাজ করার জন্য ডাব্লিউএফপির প্রায় দুই বিলিয়ন ইউরো প্রয়োজন হলেও তার মাত্র আঠারো শতাংশ পাচ্ছে সংস্থাটি৷
ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি নাজুক করেছে
ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের কারণে পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়েছে, কেননা, ডাব্লিউএফপি খাদ্য সহায়তা দিতে প্রয়োজনীয় গমের অর্ধেক ইউক্রেন থেকে আমদানি করে৷ এমনকি যুদ্ধের আগেই গমের দাম এত বেড়েছিল যে, সেটির সরবরাহ সীমিত করতে হয়েছিল৷ বিশ্বব্যাংকও আশঙ্কা করছে ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে৷
রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধ
গত সাত বছর ধরে ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ চলছে৷ বাহ্যিক বিভিন্ন শক্তির অংশগ্রহণও রয়েছে সেখানে৷ ২০১৫ সাল থেকে সেখানে সৌদি জোটের সঙ্গে ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের যুদ্ধ চলছে, যারা বর্তমানে দেশটির অধিকাংশ অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে৷ রাজধানী সানাও তাদের দখলে রয়েছে৷
এডেনেও বিশৃঙ্খলা
দেশটির দক্ষিণের শহর এডেন ২০২০ সাল থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে৷ ইয়েমেনের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়-স্বীকৃত সরকারও এই শহরে অবস্থান করছে৷ হুতিরা সানা থেকে তাদের সরিয়ে দিলে এখানে আশ্রয় নেয় আবেদ রবো মানসুর হাদি সরকার৷ তবে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীও এডেনে সক্রিয় রয়েছে৷ ছবিতে ২০২১ সালে সেখানে এক হামলার পরের পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে৷
কোনো আশ্রয় নেই
তেলসমৃদ্ধ নগরী মারিবে কঠিন লড়াই চলছে৷ কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহরটিতে ধারাবাহিকভাবে বোমা বর্ষণ করে যাচ্ছে সৌদিরা৷ যুদ্ধ থেকে বাঁচতে শহরের বাসিন্দারা নিয়মিতই অন্য কোথাও আশ্রয় খুঁজছেন৷
ভরে গেছে হাসপাতাল
ইয়েমেনের স্বাস্থ্যসেবা পরিস্থিতি ক্রমশ আরো খারাপ হচ্ছে৷ চলমান যুদ্ধ এবং করোনা মহামারি আরব উপদ্বীপটির দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অবস্থা আরো সঙ্গীন করে দিয়েছে৷
বিদ্যালয়ে বোমা হামলা
চলতি বছর এক প্রতিবেদনে ইউনিসেফ জানিয়েছে, ইয়েমেনে যুদ্ধে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে শিক্ষাখাতের৷ দেশটির বিশ লাখেরও বেশি ছেলেমেয়ে স্কুলে যেতে পারছে না৷ যুদ্ধ শুরুর আগের পরিস্থিতির তুলনায় সংখ্যাটি দ্বিগুণ৷ দেশটির অনেক বিদ্যালয়েও বোমা হামলা চালানো হয়েছে৷
সীমাহীন ভোগান্তি
বিদ্যুৎ, বিশুদ্ধ পানি কিংবা পেট্রোল - ইয়েমেনে সবসময়ই কিছু না কিছুর সংকট দেখা দেয়৷ পেট্রোল স্টেশনের সামনে গাড়ির এমন ভিড় ক্রমশ বড় হচ্ছে৷ দাতাসংস্থাগুলোর অর্থ-সংকট তৈরি হলে ইয়েমেনিদের ভোগান্তি আরো বেড়ে যাবে৷