জার্মানিতে ‘ইহুদি ভাড়া প্রকল্প'
১৭ ডিসেম্বর ২০১৬জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলে সোলিঙ্গেন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ কোনো ইহুদিকে চেনো?' ২০ জনের মধ্যে ১৫ জনের উত্তরই ছিল ‘না'৷ একজন শিক্ষার্থী বলেছে, ‘‘আমি রাস্তায় একজনকে দেখেছিলাম৷ কিন্তু তার সঙ্গে কোনো কথাবার্তা হয়নি৷'' এ কারণেই ‘রেন্ট এ জিউ' প্রকল্প৷ প্রকল্পের প্রতিপাদ্য ‘তুমি তোমার শেকড় ভুলতে পারো না', যা চালু করেছে মিউনিখভিত্তিক ইউরোপিয়ান ইয়ানুৎস কোরসাক অ্যাকাডেমি৷
এই প্রকল্পের আওতায় কাজ করছে ৫০ জন সদস্য৷ জার্মানির বিভিন্ন প্রাইভেট ও পাবলিক সেক্টরে, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সেমিনারের আয়োজন করে তারা৷ এদের প্রধান লক্ষ্য ইহুদি সম্প্রদায়কে জার্মানদের কাছে পরিচিত করে তোলা৷ জার্মানদের মধ্যে ইহুদিদের নিয়ে কোনো ধরনের কুসংস্কার বা ভুল ধারণা থাকলে তা যাতে দূর হয়ে যয়৷ এই প্রকল্পে কাজ করছেন মাশা স্মারলিং এবং মন্টি ওট৷ তারা দু'জনেই ইহুদি৷ তাদের কাছে ডয়চে ভেলের প্রশ্ন ছিল, প্রকল্পের এমন অদ্ভুত নাম রাখার কারণটা কী?
তারা জানালেন, এই প্রশ্নটা করাই স্বাভাবিক৷ এটা আসলে মানুষকে প্ররোচিত করার জন্য, যাতে এ থেকে আলোচনার সূত্রপাত হয়৷ অনেকেই নিজেদের ইহুদি বলে পরিচয় দিতে দ্বিধা বোধ করে৷ তাই আমরা চাই না ইতিহাস থেকে ইহুদিদের সম্পর্কে জার্মানরা জানুক৷
১৯৯২ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে মা এর সঙ্গে জার্মানিতে এসেছিলেন স্ম্যারলিং, যেমনটা জার্মানিতে অন্য ইহুদিরা এসেছে৷ স্ম্যারলিং-এর ভাষ্য ‘‘ইহুদিদের অনেকেই এখানে ‘আকস্মিক শরণার্থী' বলা হয়৷ অথচ এই ধরনের ইহুদিরাই ১ লাখ ইহুদির ৮০ শতাংশ৷
আমরা একটা সুযোগ করে দিতে চাই যাতে ইহুদি সম্প্রদায়ের সঙ্গে কথা বলার একটা প্লাটফর্ম তৈরি হয়৷ হলোকস্টের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে আমরা জার্মানদের সঙ্গে ইহুদিদের পরিচয় করিয়ে দিতে চাই না৷''
তবে কেবল জার্মানিতেই নয় ইউরোপের পশ্চিমাঞ্চলে সম্প্রতি ইহুদিবিরোধী মনোভাব সোচ্চার হচ্ছে৷ আর সেকারণেই এ ধরনের প্রকল্পের খুব প্রয়োজন হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন ওটো৷ মার্চে বার্লিনের এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে জার্মানির রাজধানীতে ৩৪ ভাগ বেশি ইহুদি বিদ্বেষের ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে৷ ২০১৫ সালে বার্লিনে ৪০১ টি ঘটনা ঘটেছে, জার্মানিজুড়ে এ ধরনের ঘটনার সংখ্যা ১৩০০টি৷ এ বছরের শুরুতে ২১ বছয় বয়সি এক ইহুদি যুবককে মারধোর করে তিন জার্মান যুবক, যা নিয়ে শিরোনাম হয় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে৷
‘রেন্ট এ জিউ' প্রকল্পের এ সব সেমিনারে ইহুদি সম্প্রদায়ের ধর্ম, সংস্কৃতি, খাবার সম্পর্কেও জানানো হয়৷ তবে সেমিনারে অংশগ্রহণকারীদের যখন প্রশ্ন করা হয় ইহুদিদের সম্পর্কে তারা কী জানে৷ বেশিরভাগই উত্তর দেয়, ‘তারা শিক্ষিত এবং ধনী'৷ সেমিনারে অংশ নিয়েছিলেন ১৭ বছরের মোহাম্মদ৷ যিনি জানালেন, ‘‘আমি এ প্রকল্পের মাধ্যমে ইহুদিদের দৈনন্দিন জীবন যাপন সম্পর্কে পুরো ধারণা পেয়েছি৷ এমনকি আমি আগে এমন অনেক বিষয় জানতাম, যা ছিলো ভুল৷'' ওটো বললেন, মোহাম্মদের মতো অনেকেই যে তাদের ভুল ধারণাগুলো থেকে বেরিয়ে এসে চিন্তা করছে, এটাই তাদের প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য৷
কেট ব্র্যাডি/এপিবি
ইহুদিদের জানার এ উদ্যোগটি আপনার কেমন লেগেছে? লিখুন নীচে, মন্তব্যের ঘরে৷