ইস্তানবুল হাতছাড়া, গদি টলমল করছে
২৪ জুন ২০১৯নির্বাচনের ফলাফল পছন্দ নয়, তাই নতুন করে নির্বাচনের আয়োজনের জন্য সব রকম কলকাঠি নেড়েছিলেন দেশের সর্বোচ্চ নেতা৷ যে শহর থেকে মেয়র হিসেবে নিজের রাজনৈতিক উত্থান শুরু, সেখানেই ভোটাররা কী করে বিরোধী প্রার্থীকে ভোট দেয়! এত বছর ধরে তিলে তিলে ক্ষমতাকেন্দ্রে প্রায় লাগামহীন আধিপত্য বিস্তার করার পর এই ব্যথা বড় কষ্ট দিয়েছিল সর্বোচ্চ নেতাকে৷ মাত্র ৩ মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার নির্বাচনের আয়োজন করে তাই ভোটারদের ‘প্রায়শ্চিত্ত' করার সুযোগ দিয়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু এমন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজের হাত পোড়ালেন প্রেসিডেন্ট৷ ভোটাররা আরও বড় ব্যবধানে বিরোধী প্রার্থীকে জয়ী করলেন৷ রাজনৈতিক জীবনে সবচেয়ে বড় এই পরাজয়ের ধাক্কা তিনি সামলাতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে জল্পনাকল্পনা শুরু হয়ে গেছে৷
শহরের নাম ইস্তানবুল, দেশের নাম তুরস্ক ও সর্বোচ্চ নেতার নাম রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ান৷ ২৩শে জুন শহরের মেয়র নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থী এক্রেম ইমামোলু বিপুল ব্যবধানে জয়ী হয়ে এর্দোয়ানের প্রায় ১৬ বছরের শাসনকালের ভীত নাড়িয়ে দিয়েছেন৷ এককালে এর্দোয়ান নিজেই বলেছিলেন, ‘‘ইস্তানবুলে জয় হলে তুরস্কেও জয় হবে৷'' প্রায় ১ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষের এই শহরে তুরস্কের প্রায় এক পঞ্চমাংশ মানুষের বসবাস৷ ব্যবসা-বাণিজ্যেরও প্রাণকেন্দ্র ইস্তানবুল৷
জয়ের পর ইমামোলু বলেন, ‘‘আজ ১ কোটি ৬০ লক্ষ বাসিন্দা নতুন করে গণতন্ত্রের প্রতি আমাদের আস্থা, বিচার ব্যবস্থার প্রতি আমাদের আস্থা দেখিয়েছেন৷'' আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত অপেক্ষা না করে এর্দোয়ানের একেপি দলের প্রার্থী ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম পরাজয় মেনে নিয়ে ইমামোলুকে অভিনন্দন জানান৷ স্বয়ং এর্দোয়ানও এক টুইট বার্তায় নতুন মেয়রকে অভিনন্দন জানিয়েছেন৷
গত ১৬ বছর ধরে বিরোধী দলগুলি এর্দোয়ানের জয়যাত্রা থামাতে পারেন নি৷ তাই ইমামোলুর এই সাফল্য গোটা বিশ্বের নজর কেড়েছে৷ দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য অভিনন্দনবার্তা পাচ্ছেন তিনি৷ নির্বাচনি প্রচারে তিনি সরাসরি এর্দোয়ানের সমালোচনা করেন নি৷ তার বদলে শহরের সমস্যাগুলির সমাধানের লক্ষ্যে সব শ্রেণির মানুষের সমর্থন চেয়েছিলেন৷ বেহিসাবি ব্যয় ও দুর্নীতি দূর করে তিনি আরও স্বচ্ছ এক প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷ এমনকি ক্ষমতাসীন একেপি দলের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত
ইস্তানবুলে দলের পরাজয়ের ফলেপ্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান ঘর সামলাতে মন্ত্রিসভায় দ্রুত রদবদল করতে পারেন, এমন সম্ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছে৷ এমনকি ২০২৩ সালের জন্য নির্ধারিত সাধারণ নির্বাচনের তারিখও তিনি এগিয়ে আনতে পারেন বলে জল্পনাকল্পনা চলছে৷ ১৬ বছর আগে ক্ষমতায় এসে এর্দোয়ান দেশের অর্থনীতিকে বেশ চাঙ্গা করতে পারলেও সাম্প্রতিক কালে নানা অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সংকটের কারণে তুরস্কের অবস্থা বেহাল হয়ে পড়েছে৷ অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব পড়ছে মানুষের জীবনযাত্রার উপর৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে বার বার সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছেন এর্দোয়ান৷ ফলে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও বিনিয়োগের মাত্রাও কমছে৷ সমালোচকদের মতে, ক্ষমতাকেন্দ্রের উপর নিজের কর্তৃত্ব জোরালো করার প্রক্রিয়ায় বিচার ব্যবস্থা, সংবাদ মাধ্যম ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানকে কমজোর করে এর্দোয়ান গণতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি করছেন৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, রয়টার্স)