ইস্তফা নয়, শেষ বল পর্যন্ত লড়বো: ইমরান
১ এপ্রিল ২০২২বৃহস্পতিবার রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। সেখানেই ইমরান জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি ইস্তফা দেবেন না। শেষ বল পর্যন্ত লড়বেন। পাশাপাশি তিনি বিদেশি চক্রান্তের অভিযোগ করে বলেছেন, বিদেশি শক্তি হুমকি চিঠি দিয়েছিল। তারা বলেছে, পাকিস্তানকে তখনই ক্ষমা করা হবে, যদি ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে সরানো হয়। প্রধান বিরোধী দলনেতাদের বিরুদ্ধে ইমরানের অভিযোগ, তারা এই বিদেশি শক্তির দালাল হিসাবে কাজ করছেন।
পাকিস্তানের সংবাদপত্র ডন এবং বিরোধী নেতাদের দাবি, ইমরান খান ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন। এমকিউএম তাকে ছেড়ে বিরোধী জোটে নাম লেখানোর পর ন্যাশনাল অ্যসেম্বলিতে বিরোধীদের সদস্যসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭৭। ১৭২ জন সদস্য থাকলেই এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া য়ায়।
কোন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ?
ডন জানাচ্ছে, জাতির প্রতি ভাষণে ইমরান খান একবার মুখ ফসকে অ্যামেরিকার নাম নিয়ে ফেলেছিলেন। তারপরই দ্রুত সংশোধন করে বলেন, অ্যামেরিকা নয়, অন্য একটি রাষ্ট্র এই চক্রান্ত করছে। ইমরান বলেছেন, ''৮ মার্চ বা সম্ভবত ৭ মার্চ আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে একটি বার্তা পাই। ...না, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়, অন্য একটি বিদেশি রাষ্ট্রের কাছ থেকে বার্তা পাই। এই বার্তা শুধু প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নয়, আমাদের দেশের বিরুদ্ধে।''
ইমরানের দাবি, তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব হলো বিদেশি রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্রের কারণ, তিনি ও তার সরকার স্বাধীন বিদেশ নীতি নিয়ে চলছেন। তিনি সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, তার দলের বিক্ষুব্ধ ও বিরোধী নেতাদের পরবর্তী প্রজন্ম ক্ষমা করবে না। যে বিদেশি শক্তির হয়ে তারা কাজ করছে, তাদেরও নয়।
বিরোধীদের নিশানা
ইমরান তার ভাষণে বিরোধী নেতাদের নিশানা করেছেন। তিনি বলেছেন, বিরোধী নেতাদের সঙ্গে বিদেশি শক্তির যোগাযোগ ছিল বলে মনে হচ্ছে। আর উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, এই চক্রান্ত পাকিস্তানের নেতাদের বিরুদ্ধে নয়, সরকারের বিরুদ্ধে নয়, শুধু ইমরান খানের বিরুদ্ধে। ওই দেশ হুমকি চিঠিতে বলেছিল, তারা পাকিস্তানের উপর ক্ষুব্ধ। তারা পাকিস্তানকে তখনই ক্ষমা করবে, যখন ইমরান আস্থাভোটে হারবেন।
ইমরানের প্রশ্ন, ''আমি আমার জাতির কছে জানতে চাই, এটাই আমাদের ভবিতব্য? আমরা ২২ কোটি মানুষের দেশ, সেখানে একটি বিদেশি রাষ্ট্র হুমকি দেবে আর বলবে, ইমরান খান নিজের সিদ্ধান্তে রাশিয়া গিয়েছিল? আমি আমার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সেনার সঙ্গে কথা বলে রশিয়া গেছি।''
ইমরান বলেছেন, বিদেশি শক্তি শাহবাজ শরিফ, ফজলুর রহমান, আসিফ আলি জারদারিকে পছন্দ করে, তারা জানে এই নেতাদের টাকা ও সম্পদ কোথায় আছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, যারা অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন, তাদের সঙ্গে বিদেশি শক্তির যোগ রয়েছে। তারা তাদের রাজকীয় ভৃত্যের মতো কাজ করছে।
ইমরানের সামনে বিকল্প
আগামী রোববার আস্থাভোটে হেরে গেলে ইমরানই হবেন পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি আস্থাভোটে হেরে পদ খোয়াবেন। গণতন্ত্রে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব যদি অনুমোদিত হয়, তাহলে প্রধানমন্ত্রী আর সরকারে থাকতে পারেন না।
ইমরানের সামনে দ্বিতীয় বিকল্প হলো, অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটি হওয়ার আগে তিনি ইস্তফা দিলেন। তৃতীয় বিকল্প হলো, তিনি বিরোধীদের সঙ্গে সমঝোতায় এসে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ভেঙে দিয়ে নতুন করে সাধারণ নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিলেন। তবে বিরোধীদের সম্মতি ছাড়া তা সম্ভব নয়।
জিএইচ/এসজি (এপি, রয়টার্স, ডন)