বাংলাদেশে জঙ্গি অর্থায়ন
১৭ নভেম্বর ২০১৫গত আগস্ট মাসে বাংলাদেশের তিনজন আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করে র্যাব৷ তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে, তাঁরা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন শহীদ হামজা ব্রিগেডকে ৷ তাঁরা ঐ সংগঠনটিকে ব্যাংকের মাধ্যমে মোট এক কোটি আট লাখ টাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ করে ব়্যাব৷ এই তিনজন আইনজীবী হলেন – ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা, লিটন এবং বাপন৷
বাংলাদেশের তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান – ইসলামী ব্যাংক, এইচএসবিসি ব্যাংক এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড বা এসআইবিএল-এর বিরুদ্ধেও আছে জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগ৷ যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট কমিটির এক প্রতিবেদনেও এই তিনটি ব্যাংকের মাধ্যমে মুদ্রা পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের অভিযোগ রয়েছে৷
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক প্রতিবেদনে জানায়, ‘‘ইসলামী ব্যাংকে এমন কিছু অ্যাকাউন্ট হোল্ডার পাওয়া গেছে, যাঁদের নাম ছিল জাতিসংঘের সন্দেহের তালিকায়৷ এ সব অ্যাকাউন্টের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ‘লুকিয়েছিল' ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ৷''
এছাড়া অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাতও তাঁর গবেষণায় বলেছেন, ‘‘ইসলামী ব্যাংক জামায়াত নিয়ন্ত্রিত একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান৷ এই ব্যাংক নানা ধরণের অদৃশ্য খাতে অর্থ খরচ করে৷ তাই তাদের পক্ষে জঙ্গি অর্থায়ন অসম্ভব কিছু না৷''
সরকার জঙ্গি অর্থায়ন প্রতিরোধে ২০১২ সালে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ অধ্যাদেশ, সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংশোধন অধ্যাদেশ-২০১২ এবং অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে পারস্পরিক সহায়তা অধ্যাদেশ-২০১২ নামে তিনটি অধ্যাদেশ জারি করে৷
এছাড়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন সম্পর্কিত মামলা দায়েরের জন্য দু'টি পৃথক যৌথ তদন্ত ইউনিট গঠন করা হয়েছে৷ যৌথ এ তদন্ত ইউনিটে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ইন্টেলিজেন্স ইউনিট রয়েছে৷
এদিকে মুদ্রা পাচার ও জঙ্গি বা সন্ত্রাসী অর্থায়ন বন্ধে বাংলাদেশের নেয়া পদক্ষেপের সত্যতা যাচাইয়ে গত অক্টোবর মাসে এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ (এপিজি) অন মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত একটি বিশেষজ্ঞ দল প্রায় দু'সপ্তাহ ঢাকায় অবস্থান করে৷ তারা জঙ্গি অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশের সক্ষমতা নিয়ে তখন প্রশ্নও তোলে৷
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে জঙ্গি অর্থায়ন হয় প্রধানত ইনফর্মাল সেক্টরের মাধ্যমে৷ কয়েকটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগ থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংক তা এখনো তদন্তের মাধ্যমে প্রমাণ করতে পারেনি৷ তাই জঙ্গি অর্থায়ন প্রতিরোধে এদের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থের লেনদেন পর্যন্ত ব্যাংক নজরদারি করতে পারে৷ তবে কোন খাতে শেষ পর্যন্ত এই অর্থ ব্যবহার করা হয়, তা বের করার মতো গোয়েন্দা দক্ষতা এখনো বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর হয়নি৷''
তাঁর কথায়, ‘‘বাংলাদেশ ব্যাংক-এ জঙ্গি অর্থায়ন বিরোধী ইন্টেলিজেন্স সেল গঠন করা হয়েছে৷ এটা নিয়ে দুদক কাজ করছে, কাজ করছে পুলিশের বিশেষ তদন্ত বিভাগও৷ তবে তাদের দক্ষ হতে সময় লাগবে৷''
বাংলাদেশে কি সত্যিই জঙ্গি অর্থায়ন হচ্ছে? আপনি কি শুনেছেন এমন কিছু? জানান নীচের ঘরে৷