ইসলামিক স্টেটে যোগ দিচ্ছে এশিয়ার মানুষ
২৮ জানুয়ারি ২০১৫সম্প্রতি ‘মধ্য এশিয়ায় মৌলবাদ কায়েমের ডাক দিচ্ছে সিরিয়া' – শিরোনামের এক প্রতিবেদনে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) জানিয়েছে, সাম্প্রতিককালে মধ্য এশিয়ার কাজাখস্তান, কিরঘিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং উজবেকিস্তান থেকে অনেক মানুষ ইসলামি জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটস (আইএস)-এ যোগ দিচ্ছে৷ সরকারগুলোর মৌলবাদ প্রতিরোধে প্রচেষ্টার অভাব, অর্থনৈতিক দুরবস্থা এবং ধর্ম সম্পর্কে সাধারণের জ্ঞানের অভাবের কারণেই আইএস ওই অঞ্চলে সফল হচ্ছে বলে মনে করে আইসিজি-র মধ্য এশিয়ার প্রকল্প পরিচালক ডিয়ারড্রি টাইনেন৷
ডিডাব্লিউ: ইসলামিক স্টেটের এই সমর্থকরা কোথা থেকে আসছে?
ডিয়ারড্রি টাইনেন: এ এলাকায় উগ্রপন্থিরা মূলত মসজিদ এবং প্রার্থনার স্থানগুলোতে গিয়েই লোকজনকে দলে টানছে৷ ফলে সমাজের সব শ্রেণির লোকই থাকছে সেখানে৷ মেয়েরাও যাচ্ছে৷
এ অঞ্চলের আইএস সমর্থকদের বৈশিষ্ট্যগুলো একটু বুঝিযে বলবেন?
আইএস সমর্থকদের নির্দিষ্ট কোনো বৈশিষ্ট্যের কথা বলা কঠিন৷ সমাজের সব স্তরের লোকজনই যে আইএস-এর দিকে ঝুঁকছে, সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা বুঝতে পারে না৷ ১৭ বছর বয়সি হেয়ার ড্রেসার, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, স্বামী পরিত্যক্তা নারী, খেলাফত কায়েম হলে তাঁদের সন্তানরা ভালো থাকবে এ কথা বিশ্বাস করা পরিবার, বেকার তরুণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, স্কুল থেকে ঝরে পড়া কিশোর – বলতে গেলে সব কাতার থেকেই মানুষ আজকাল আইএস-এ যাচ্ছে৷ তারা মনে করে, সোভিয়েত পরবর্তী সময়ের চেয়ে আইএস-এর অঙ্গিকার করা খেলাফত ভালো হবে৷ আসলে আইএস-এর জন্য আফগানিস্তান বা পাকিস্তানের চেয়ে মধ্য এশিয়া থেকে লোক সংগ্রহ করা অনেক সহজ৷
কিন্তু দেশ ছেড়ে তাঁদের আইএস-এ যোগ দিতে যাওয়ার কারণ কী?
প্রধানত প্রান্তিকীকরণ এবং অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণেই এমনটি হচ্ছে৷ আইএস শুধু সম্মুখ সমরে অংশ নিতে সক্ষম লোকদেরই দলে টানছে না, সবাইকেই নিচ্ছে৷ মেয়েরাও যাচ্ছে৷ সবসময় যে ভবিষ্যতে আর্থিকভাবে লাভবান হবে এ আশায় সবাই যাচ্ছে তা-ও নয়৷ অনেকে রোমাঞ্চকর কিছু করা কিংবা অস্ত্র হাতে নেয়ার অভিজ্ঞতা অর্জনের তাড়না থেকেও সেখানে যাচ্ছে৷ তবে মধ্য এশিয়াতে মৌলবাদের দিকে ঝোঁক বাড়ছে৷ ধর্ম সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞানের অভাব এবং ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের প্রতি বিদ্বেষ থাকায় তা আরো দ্রুত হচ্ছে৷
সমর্থকদের কীভাবে সংগ্রহ করে আইএস?
মসজিদ এবং প্রায় সব নামাজখানায় যায় ওরা৷ সমর্থক সংগ্রহে ইন্টারনেট এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমকেও ব্যবহার করছে জঙ্গি গোষ্ঠীটি৷ বাড়িতে বাড়িতে গিয়েও তাদের সঙ্গে যোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়৷ স্থানীয়দের বাড়ি, অভিবাসীদের বাড়িতেও যায় ওরা৷ শুধু মধ্য এশিয়া, রাশিয়া এবং তুরস্কতেই নয়, মিশর, সৌদি আরব বা বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও এমন তৎপরতা বাড়ছে৷
এই তৎপরতা মধ্য এশিয়া এবং আশেপাশের দেশগুলোর সরকারগুলোর জন্য কতটা হুমকিস্বরূপ?
মধ্য এশিয়ায় আইএস-এর হয়ে যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য অনেকেই প্রশিক্ষণ নিচ্ছে৷ সংখ্যাটা দিন দিন বাড়ছে৷ ফলে এসব দেশে নিরাপত্তা ঝুঁকিও বাড়ছে৷ বড় কিছু ঘটার আশঙ্কা দেখা দিলে তা প্রতিহত করা মুশকিল, কেননা সরকারগুলোর এ বিষয়ে প্রস্তুতি খুব দুর্বল৷
এ বিষয়ে মধ্য এশিয়ার সরকারগুলো কী করছে?
তাজিকস্তান এবং কাজাখস্তান বিদেশে সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপে অংশ নেয়া রুখতেও আইন করেছে৷ তাজিকস্তানে তা ২০১৪ সালের জুলাই থেকে আর কাজাখস্তানে গত জানুয়ারি থেকে কার্যকর করা হয়েছে৷ উজবেকিস্তানে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ কিরঘিস্তানের সংসদ বিদেশে যুদ্ধে অংশ নেয়া জঙ্গিকে ৮ থেকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়ার সুপারিশ অনুমোদন করেছে৷
ডিয়ারড্রি টাইনেন ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মধ্য-এশিয়ার প্রকল্প পরিচালক৷