ইসরায়েলে বার্লিনের কদর
৩ নভেম্বর ২০১৩‘‘বার্লিনই হলো আসল যাবার জায়গা'': তেল আভিভে গেলেই চতুর্দ্দিকে এই পোস্টার দেখতে পাওয়া যাবে৷ কেননা আগামী ৮ই নভেম্বর থেকে সেখানে চলবে তথাকথিত ‘‘বার্লিন ডে'জ'', তেল আভিভের গ্যোটে ইনস্টিটিউট যার উদ্যোক্তা৷ জার্মান থিয়েটার, ফিল্ম ও চিত্রকলা থেকে শুরু করে বার্লিন থেকে আসা ডিজে-দের নিয়ে ডিস্কো নাইট, সবই থাকবে সেই আয়োজনে৷
এক বছর ধরে প্রস্তুতি চলেছে এই ‘‘বার্লিন ডে'জ''-এর৷ তবে বার্লিনের প্রতি ইসরায়েলিদের এই আগ্রহে গ্যোটে ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষা হাইকে ফ্রিজেল আশ্চর্য নন৷ তিনি বলেন: ‘‘শুধু বার্লিনের নামটা লিখলেই লোকে দেখতে চায়, শুনতে চায়৷'' কথাটা সত্যি: বার্লিন সংক্রান্ত যা কিছু, তা এখন তরুণ ইসরায়েলিদের কাছে ‘হিপ', মানে ফ্যাশনেবল৷ প্রায় সকলেরই কোনো না কোনো বন্ধু কিংবা আত্মীয় আপাতত বার্লিনে আছেন৷ প্রায় সকলেই একবার না একবার বার্লিন ঘুরে এসেছেন৷ তাঁরা যখন বার্লিনের ফ্রিডরিশহাইন কিংবা প্রেন্সলাউয়েরব্যার্গ ইত্যাদি এলাকার কথা বলেন, তখন মনে হয়, সেগুলো যেন তেল আভিভেরই শহরতলি!
বর্তমানে বার্লিনে প্রায় ১৮ হাজার ইসরায়েলির বাস, এবং তাঁদের সংখ্যা বাড়ছে বৈ কমছে না৷ এছাড়া ইসরায়েল থেকে আসা ট্যুরিস্টদের সংখ্যা এক বছরের মধ্যে ২৩ শতাংশ বেড়েছে৷ শুধু তাই নয়, ইসরায়েলিদের জার্মান শেখার আগ্রহও ক্রমাগত বেড়ে চলেছে: তেল আভিভ আর জেরুসালেমের গ্যোটে ইনস্টিটিউট দু'টিতে জার্মান ভাষার পাঠক্রমে ছাত্রছাত্রীর অভাব নেই৷ বিশেষ করে তেল আভিভের ক্ষেত্রে: বার্লিন আর তেল আভিভ যেন দু'টি ভাই-বোন৷ দু'টি শহরেই মুক্তচিন্তা, কল্পনা এবং সৃজনশীলতার স্থান আছে৷ দু'টি জায়গাতেই নতুন বিজনেস আইডিয়া-কে সাদরে স্বাগত জানানো হয়৷ দু'টি জায়গাতেই জীবনধারা চঞ্চল, প্রাণবন্ত৷ দু'টি শহরেই ‘পার্টি' করাটা শুধু আমোদ নয়, বেঁচে থাকার একটা কারণ বটে৷
বার্লিন মানে হলো স্বাধীনতা
এবং ইসরায়েলিদের কাছে এক বিশেষ ধরনের স্বাধীনতা, কেননা বার্লিনে তারা ইসরায়েলি সমাজের চাপ থেকে মুক্তি পায়, ইসরায়েলের রাজনৈতিক পরিস্থিতির শ্বাসরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি পায়৷ ইসরায়েলে জীবন চলে বাঁধা ছকে: স্কুল শেষ করে সেনাবাহিনী, তারপর কম বয়সে বিবাহ এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গে সন্তানের দায়িত্ব৷ এছাড়া থাকে ইহুদি ধর্মের দায়দায়িত্ব, খোলামেলা তেল আভিভেও যার প্রভাব এড়ানোর কোনো সম্ভাবনা নেই৷ কাজেই বহু ইহুদি শিল্পী বার্লিনেই তাদের জীবন ও শিল্পকর্মের উপযুক্ত পরিবেশ খুঁজে পেয়েছেন৷ ইত্যবসরে আসছেন আরো বেশি গবেষক ও বিজ্ঞানী৷ সকলেই চান বার্লিনে তাঁদের নিজের মতো করে বেঁচে থাকতে, কাজ করতে৷
হলোকস্ট আর কোনো বাধা নয়
আজ যাঁরা বার্লিনে আসছেন, সেই সব ইসরায়েলিদের অনেকেই হলোকস্টে নিহত কিংবা নিপীড়িতদের পরিবারের সন্তান৷ নব্বই-এর দশকেও বহু ইসরায়েলি হলোকস্টের কথা স্মরণ করে জার্মানির মাটিতে পা রাখার কথাও ভাবতে পারতেন না৷ কিন্তু আজ তা বদলে গেছে৷ আজকের ইসরায়েলিরা অন্যভাবে অতীতের কথা স্মরণ করেন৷ হলোকস্ট আর বিভাজনরেখা নয়, বরং উভয় দেশের মধ্যে যোগাযোগের সূত্র৷ উভয় দেশের মানুষ যেন যুগ্মভাবে সেই নারকীয় নাৎসি অতীতের মোকাবিলা করতে চাইছে৷ কিন্তু অতীত আর বর্তমানের মধ্যে ফারাক আছে৷ তরুণ ইসরায়েলিদের চোখে বার্লিন একটি মুক্ত, স্বাধীন শহর, যেখানকার মানুষজন মুক্ত, উদারমনা৷