ইরানে বন্দিদের কঠিন শর্তে সাধারণ ক্ষমা, তবে মৃত্যুদণ্ড চলবে
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩রবিবার দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, দেশটিতে ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের ৪৪ তম বার্ষিকী উপলক্ষে এই সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হলো। তবে মুক্তি পেতে হলে বেশ কিছু শর্ত মানতে হবে তাদের৷
ঘোষণায় বলা হয়েছে, বন্দিদের মধ্যে যাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে, তারা এই ক্ষমার আওতায় পড়বেন না। এছাড়া সামাজিক বা রাজনৈতিক অস্থিরতা ছড়ানো, বিদেশি গুপ্তচর হিসেবে কাজ করা এবং সরকারবিরোধী শক্তিগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক রাখার অভিযোগ রয়েছে যাদের বিরুদ্ধে, তারাও এই সাধারণ ক্ষমা পাবেন না। ধর্মীয় বিশ্বাস ভাঙা বা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা লঙ্ঘনের অভিযোগ থাকলেও কাউকে মুক্তি দেওয়া হবে না।
গত সেপ্টম্বরে ২২ বছর বয়সি কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনি পুলিশ হেফাজতে মারা যাওয়ার পর ইরানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ঠিকমতো হিজাব না পরার অভিযোগে ১৩ সেপ্টেম্বর তাকে গ্রেফতার করে তেহরানের পুলিশ। পুলিশের দাবি, মাহসা অসুস্থ হয়ে পড়লে ১৬ সেপ্টেম্বর তাকে হাসপাতালে নেয়া হয় এবং সেখানে তার মৃত্যু হয়।
তার মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পুরো ইরান। নারীদের ওপর নিপীড়ন- দুঃশাসনের প্রতিবাদে রাস্তায় নামে লাখো মানুষ। বিক্ষোভ দ্রুত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক নারী বিক্ষোভের প্রতি সমর্থন জানিয়ে নিজেদের হিজাব খুলে ফেলেন। বিক্ষোভে পুলিশের হামলায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়।
এদিকে রবিবার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার দিনই এলনাজ মোহাম্মাদি নামে এক নারী সাংবাদিককে আটক করা হয়। সংস্কারবাদী ‘হাম্মিহান' পত্রিকায় কাজ করেন এলনাজ। তার বোন এলাহি মোহাম্মাদিও সাংবাদিক৷ এলাহ গত সেপ্টেম্বরে মাহসা আমিনির শেষকৃত্যানুষ্ঠানের প্রতিবেদন করার পর গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
ইরানে প্রায় প্রতিবছরই ইসলামি বিপ্লবের বার্ষিকীর আগে এরকম সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। তবে এবারের ঘোষণাটিকে বশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ এবারের সরকারবিরোধী আন্দোলনকে ১৯৭৯-র ইসলামি বিপ্লবের পর ক্ষমতাসীনদের ওপর সবচেয়ে বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান গোলামহোসেইন মোহসেনি-এজেই-র অনুরোধে বন্দিদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হলো বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনা। বিচার বিভাগের উপপ্রধান সাদেক রাহিমির বরাত দিয়ে সংস্থাটি জানায়, মুক্তি পাওয়ার জন্য বন্দিদের ‘অনুশোচনা' প্রকাশ করতে হবে। তারা আর কখনোই আগের মতো কার্যক্রমে যুক্ত হবে না বলে মুচলেকাও দিতে হবে।
ঠিক কত জনকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় মুক্তি দেওয়া বা কত জনের সাজা কমানো হবে তা জানাতে পারেনি ইরানি সংবাদ মাধ্যমগুলো। তবে মানবাধিকার নিয়ে কর্মরত সংগঠনগুলো বলছে, আন্দোলনের কারণে ২০ হাজারের মতো মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে অন্তত ১০০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, এরইমধ্যে ১৮ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরও করা হয়ে গেছে।
এদিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ইরানের সাবেক রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ খাতামি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী মীর হোসাইন মৌসাভি গত সপ্তাহে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।
এসএফ/এসিবি (এএফপি,এপি, রয়টার্স)