ইরান ইস্যুতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে রাশিয়া, চীনের সংঘাত
৭ আগস্ট ২০২০করোনা সংকট সত্ত্বেও বিশ্বে সংঘাতের কারণগুলি থেমে যায়নি৷ যেমন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে৷ অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে ইরানের উপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানোর সময় এসে যাওয়ায় সেই সংঘাত আবার প্রকাশ্যে আসছে৷ আগামী ১৮ই অক্টোবরের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও আগামী সপ্তাহে নিরাপত্তা পরিষদে এই প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটির ঘোষণাকরেছেন৷ জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ইরানকে ‘বিশ্বের এক নম্বর সন্ত্রাসের মদতকারী দেশ' হিসেবে বর্ণনা করেছেন৷ নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাবে চীন বা রাশিয়া বাধা দিলে সেই দেশগুলিও সন্ত্রাসবাদের ‘কো স্পনসর' বা দোসর হয়ে যাবে বলে সতর্ক করে দিয়েছে অ্যামেরিকা৷
জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেলি ক্রাফট রাশিয়া ও চীনের কাছে এই সিদ্ধান্তের বৃহত্তর গুরুত্ব তুলে ধরেছেন৷ ক্রাফট বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির গুরুত্ব বিবেচনা করে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত প্রস্তাবে এই দুই দেশ বাধা দেবে না বলে অ্যামেরিকা আশা করছে৷ তবে ইরান ছাড়াও অন্য অনেক ক্ষেত্রে রাশিয়া ও চীনের সহযোগিতার ফলে এই দুই দেশের সীমানার বাইরে অরাজকতা, সংঘাত ও সংঘর্ষে মদত দিয়ে যাবে৷ তাই তাদের কোণঠাসা করতে হবে৷
রাশিয়া ও চীনও হাত গুটিয়ে বসে নেই৷ এই দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গত মাসে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও নিরাপত্তা পরিষদের উদ্দেশ্যে চিঠি লিখে অ্যামেরিকার কড়া সমালোচনা করেছেন৷ ইরান সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন করতে ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে প্রয়োজনীয় নয়টি ভোট সম্ভব হলে এই দুই দেশ নিজস্ব ভেটো শক্তি প্রয়োগের ইঙ্গিত দিয়েছে৷ রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচার অভিযানের অভিযোগ এনেছেন৷ অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে ইরানের উপর স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চাপানোর প্রচেষ্টার জন্য তিনি সব দেশের উদ্দেশ্যে অ্যামেরিকার নিন্দার আহ্বান জানিয়েছেন৷ চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই আগামী ১৮ই অক্টোবর সরাসরি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পক্ষে সওয়াল করেছেন৷
পম্পেও জানিয়ে দিয়েছেন যে, সেই প্রস্তাব অনুমোদন করা সম্ভব না হলে অ্যামেরিকা তথাকথিত ‘স্ন্যাপব্যাক' প্রক্রিয়ার আশ্রয় নেবে, যার ফলে ইরানের উপর জাতিসংঘের যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা আবার কার্যকর হবে৷ উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরের সময়ে এই শর্ত রাখা হয়েছিল৷ এর আওতায় ইরান নিজস্ব পরমাণু কর্মসূচির উপর নিয়ন্ত্রণের শর্ত লঙ্ঘন করলে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে ছাড় প্রত্যাহার করা হবে৷ তবে ট্রাম্প প্রশাসন একতরফাভাবে এই চুক্তি বর্জন করলেও রাশিয়া, চীন, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি এখনো সেই চুক্তি চালু রাখতে বদ্ধপরিকর৷
এদিকে ওয়াশিংটনের ইরান-নীতির কেন্দ্রস্থলে এক নাটকীয় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে৷ ইরান-নীতির দায়িত্বপ্রাপ্ত দূত ব্রায়ান হুক আচমকা পদত্যাগের ঘোষণা করেছেন৷ রাষ্ট্রদূত কেলি ক্রাফটের সঙ্গে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেবার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এই সিদ্ধান্তের কথা জানা গেছে৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এক টুইট বার্তায় ইঙ্গিত দিয়েছেন, যে হুক প্রশাসনের কাজ ছেড়ে বেসরকারি ক্ষেত্রে সক্রিয় হতে চলেছেন৷
এসবি/এসিবি (এপি, রয়টার্স)