1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইরান প্রশ্নে স্পষ্ট বৈশ্বিক মেরুকরণ

৪ জানুয়ারি ২০১৮

গেল সপ্তাহ জুড়ে ইরানে যে বিক্ষোভ দানা বেঁধেছে, ২০০৯ সালের পর আর এতটা দেখা যায়নি৷ এই বিক্ষোভের সুযোগ নিয়ে দেশটির বর্তমান সরকারকেই উৎখাত করার দাবি তুলেছে কোনো কোনো দেশ৷

https://p.dw.com/p/2qL7C
Iran Protest in Stadt Kashan
ছবি: UGC_pessarbad

আপাতভাবে বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে মনে হলেও এই আন্দোলন নিয়ে চলছে নানা রকম খেলা৷ প্রথমত, দেশের ভেতরে বিক্ষোভকারীরা যেমন পুরো সপ্তাহ জুড়ে উত্তাল ছিল, তেমনি পরবর্তীতে সরকার সমর্থকদেরও মিছিল দেখা গেছে৷ শুধু তাই নয়, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ব্লকগুলোও নিজেদের মতো করে সক্রিয় ছিল৷

দ্বিতীয়ত, বহির্বিশ্বে আন্দোলনকারীদের জন্য সহমর্মিতা দেখা গেছে৷ কেউ কেউ হাসান রুহানির সরকারকেই হটিয়ে দেবার দিবাস্বপ্ন দেখছে, কেউ কেউ আবার বাইরের ইন্ধন যেন দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে না পড়ে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে৷

 

সরকার পতনের দাবি

এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য যুক্তরাষ্ট্র৷ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তো নববর্ষের টুইটেই সরকার পতনের ডাক দিয়ে দিয়েছেন৷

ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ওয়াশিংটনের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বিশ্লেষক অ্যারিয়েইন তাবাতাবাই বলেন যে, এ ধরনের ডাক পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে নিয়ে যেতে পারে৷

‘‘ইরানের জনগণের কি করা উচিত সেটা না বলে, আমরা বরং ইরান সরকারকে জনগণের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর আহ্বান জানাতে পারি৷'' বলছিলেন তিনি৷

জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দল সিডিইউ-এর সংসদ সদস্য নর্বার্ত রৎগেন বলেন, এ ধরনের লাগামহীন বক্তব্যের কারণে তেহরান দাবি করতেই পারে যে, আন্দোলনে বাইরের ইন্ধন রয়েছে৷

ঠিক এমন মন্তব্যই করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনি৷ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘ইরানের শত্রুরাই' এ ঘটনা ঘটাচ্ছে৷ এটা ইসলামী শাসনতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে মন্তব্য করেন তিনি৷

এমন দাবি করেছে তুরস্কও৷ তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সিএনএন টার্ককে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ইরানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের যে কোনো ইন্ধনকে সমর্থন করে না তুরস্ক৷

জার্মান সংসদ সদস্য রৎগেন মনে করেন যে, এই ইস্যুতে ট্রাম্প বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছেন৷ ‘‘ইরানের বিরুদ্ধে সুন্নীদের ক্ষেপিয়ে তোলার সব চেষ্টাই করছেন তিনি৷''

সতর্ক ইউরোপীয় ইউনিয়ন

শুধু জার্মানিই নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন পর্যন্ত এই বিক্ষোভ নিয়ে খুব সতর্ক মন্তব্য করছে৷ এই ব্লকের বৈদেশিক বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোগেরিনি বলেন, ‘‘ইরানের বিক্ষোভ পর্যালোচনা করছে ইইউ৷ সহিংসতা কিংবা মৃত্যু কোনোভাবেই কাম্য নয়৷'' তিনি সরকার বা বিরোধীপক্ষ সবাইকেই সহিংসতা পরিহার করার আহ্বান জানিয়েছেন৷

জার্মানিরও বক্তব্য অনেকটা এমনই৷ বুধবার এক সরকারি বক্তব্যে বিরোধীদের সঙ্গে ইরানকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানানো হয়৷

এদিকে, ইউরোপের এমন অবস্থানের কঠোর সমালোচনা করেছে ইসরায়েল৷ নতুন বর্ষের বক্তব্যে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, ‘‘দুঃখজনক হলেও সত্য, যখন ইরানের সাহসী তরুনরা রাস্তায় মার খাচ্ছে, তখন ইউরোপের সরকারগুলো বসে বসে দেখছে৷ ওরা স্বাধীনতা চায়৷ অন্যায়ের অবসান চায়৷''

Syrien Hezbollah und syrische Flaggen in Qalamoun
সিরিয়া ও লেবাননে শিয়া প্যারামিলিটারি দল হিজবুল্লাহকে মদদ দিচ্ছে ইরানছবি: Reuters/O. Sanadiki

মধ্যপ্রাচ্যে দ্বিধাবিভক্তি

কাতার ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের বাকি প্রায় সব দেশই ইরানের সরকারবিরোধীদের সমর্থন করছে৷ এই বিভক্তি মূলত এ অঞ্চলে ক্ষমতার ভূ-রাজনৈতিক কৌশলকেই প্রকাশ করে৷

তাদের মূল এজেন্ডা মধ্যপ্রাচ্যের শিয়া অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোকে ইরানের প্রভাবমুক্ত করা৷ তাদের দুশ্চিন্তার কারণ, সিরিয়ার বাশার আল আসাদ সরকার, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী, লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ইরাকের বর্তমান সরকারের প্রতি ইরানের মদত ও প্রভাব৷

তুরস্কের মতো কাতারও মনে করছে, এই অচলাবস্থার কারণ বৈদেশিক ইন্ধন৷

তবে আরব বসন্তের অভিজ্ঞতা থেকে ইরান মরিয়া হয়েই চাইছে, এই আন্দোলন আর কোনোভাবেই যেন ডালপালা না মেলে৷

জেডএ/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)