ইরাকি-জার্মান প্রেমের গল্প
১৯ মার্চ ২০১৬২০১৫ সালে সিরিয়া, ইরাক এবং মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশ থেকে প্রায় ১১ লাখ অভিবাসনপ্রত্যাশী এসেছে জার্মানিতে৷ এমন জনস্রোত সামলাতে গিয়ে দেখা দিয়েছে সংকট৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি এমন সংকটে আর পড়েনি৷ ইউরোপের জন্যও এ এক মহাসংকট৷ সংকট নিরসনের উদ্যোগ হিসেবে ইউরোপে শরণার্থীদের আসার পথ বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্তও নেয়া হতে পারে৷
কিন্তু আলী আর লেনার প্রেমের গল্প শুনলে অনেকেই হয়ত চাইবেন জার্মানিতে যত খুশি শরণার্থী আসুক৷ আগমনে যদি আরো অনেক মানবমানবীর সুমধুর মিলনের গল্প জমে, মন্দ কী!
আলী জার্মানিতে এসেছেন গত বছরের সেপ্টেম্বরে৷ ইরাক থেকে তুরস্ক, তুরস্ক থেকে রাবারের নৌকায় বলকান অঞ্চল হয়ে গ্রিসে, গ্রিস থেকে মেসিডোনিয়া, সার্বিয়া, হাঙ্গেরি আর অস্ট্রিয়া ঘুরে অবশেষে যেদিন মিউনিখে এলেন প্রাণশক্তি বলতে কিছু আর ছিলনা৷ মিউনিখ থেকে ট্রেনে বার্লিন পৌঁছে শরীর চলছিলই না৷
বার্লিন কেন্দ্রীয় রেল স্টেশনেই ‘শরণার্থীদের স্বাগতম' লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন লেনা৷ সঙ্গে কয়েকজন বন্ধুও ছিল৷ সদ্য আসা শরণার্থীদের কোনোভাবে সহায়তা করতেই রেল স্টেশনে গিয়েছিলেন তাঁরা৷
আলী আর তাঁর বন্ধুর তখন বার্লিনে থাকার জায়গা নেই৷ শরণার্থী শিবিরে জায়গা পেতে হলে দু'দিন অপেক্ষা করতে হবে৷ লেনা আর তাঁর বন্ধুরা ওই দু'দিন আলী আর তাঁর দুই সঙ্গীকে এক জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন৷
সেখানেই শেষ হতে পারতো গল্পটা৷ কিন্তু আলী আর তাঁর দুই সঙ্গীকে এক বাসায় পৌঁছে দিয়ে নিজের বাড়িতে ফেরার আগে লেনা একটা ছোট কাগজে নিজের নাম আর টেলিফোন নাম্বারটা লিখে দিয়ে আসায় গল্পটা শেষ না হয়ে শুরু হয়ে যায়৷ একদিন পরই ‘ধন্যবাদ' লিখে টেক্সট মেসেজ পাঠান আলী৷ শুরু হয় মেসেজ চালাচালি এবং তার কিছুদিনের মধ্যেই মন দেয়ানেয়া সারা৷
আলী ২৮ বছরে তরুণ৷ বাগদাদের একটি মেয়ের সঙ্গে প্রেম করেছেন পাঁচ বছর৷ তথাকথিত জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর হামলা সেই প্রেমে ছেদ টেনেছে৷
অন্যদিকে লেনা গত ৬ বছরে কয়েকজন ‘বয়ফ্রেন্ড' পেলেও কারো সঙ্গেই সম্পর্ক টেকেনি৷ আলী প্রথম যেদিন তাঁকে ‘আই মিস ইউ' লিখল, সেদিনও লেনা ভাবেননি অচেনা সংস্কৃতির একটি ছেলের সঙ্গে প্রেম হতে পারে৷ অথচ হলো তা-ই৷ বন্ধুরা বারবার বলেছে, ‘‘সাবধান, ওরা কিন্তু কিছুদিন ভালোবাসার অভিনয় করে, কিন্তু কিছুদিন পরে জার্মানিতে থাকা নিশ্চিত হলেই ছেড়ে যায়৷ দেখো তোমার সঙ্গেও না আবার সেরকম কিছু হয়৷'' লেনা তবু ভালোবেসে ফেলে আলীকে৷
আলীর জন্ম ইরাকের এক গোঁড়া মুসলিম পরিবারে৷ বাপ-চাচারা খুব গোঁড়া৷ তাঁরা মনে করেন, জার্মানির মেয়েরা ‘নোংরা স্বভাবের', কেননা, বিয়ের আগেই তাঁরা যার-তার সঙ্গে শুয়ে পড়ে৷ আলী নিজেই কথাটা বলেছেন লেনাকে৷ তবে নিজের মতামত জানাতে গিয়ে বলেছেন, ‘‘আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো একটি মেয়েকে জানা আর জেনে তাঁকে বিশ্বাস করতে পারা৷''
আলীর কাছে বিশ্বাসটাই ভালোবাসা৷ তাঁর সংস্কৃতিতেও বিশ্বাসের অনেক গুরুত্ব৷ জার্মানিতে এসেও নিজের সংস্কৃতিকে ভোলেনি আলী৷
তাই প্রথম যেদিন ওর সঙ্গে ঘুমালেন, সেদিন খুব অবাক হয়েছিলেন লেনা৷ শুয়েই বলেছিলেন, ‘কিস মি'৷ কিন্তু আলি সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করলেন সেই অনুরোধ, বললেন, ‘‘দুঃখিত, আমি এখন চুমু খেতে পারবো না৷ ইরাকে আমরা বিয়ের অঙ্গীকার না থাকলে কোনো মেয়ের সঙ্গে বেড়াতেও যাই না৷''
খুব তাড়াতাড়িই বিয়ে করবেন লেনা৷ বিয়ে করবেন আলীকেই৷ পরিবারের সবাই এখন আলীকে চেনে৷ আলীকে সবারই খুব পছন্দ৷ বড়দিনে দাদি লেনা আর আলীর হাতে তুলে দিয়েছেন একটি খাম৷ টাকাভর্তি সেই খামের ওপর দাদি ইংরেজিতে লিখে দিয়েছিলেন, ‘ট্রু লাভ'৷
রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পিএইচডি করছেন লেনা৷ আইটি বিশেষজ্ঞ আলীকে পেয়ে তাঁর মনে হয়, অন্য জার্মান তরুণীদেরও উচিত শরণার্থীদের বিয়ে করা৷
আপনারও কি এমন কোনো প্রেমের গল্প জানা আছে? তাহলে জানিয়ে দিন আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷