ইবোলা ভাইরাস মোকাবিলা প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ
১৬ অক্টোবর ২০১৪
বুধবার রাজধানী ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি পরিদর্শন করেন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশেষজ্ঞ দল৷ তাঁদের সঙ্গে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারা এবং বাংলাদেশে কর্মরত ‘ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল' বিভাগের সদস্যরাও ছিলেন৷
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সদস্যদের সঙ্গে ‘বাংলাদেশ সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল'-এর পরিচালক বে-নজীর আহমেদও ছিলেন৷ তিনি জানান, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবন্দরের কড়া স্বাস্থ্য-পরীক্ষা এড়িয়ে যদি সেখানে ভাইরাসটি ঢুকতে পারে, তাহলে বিশ্বের যে কোনো দেশেই এটি ঢুকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে৷ বাংলাদেশেও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক রয়েছে৷ তাই তাঁদের ‘দুশ্চিন্তা'-র যথাযথ কারণও রয়েছে৷''
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়: ভারত সীমান্তে ১৯টি স্থলবন্দর, তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, দুটি সমুদ্রবন্দর এবং মিয়ানমারের সঙ্গে একটি স্থলবন্দর – এই ২৫টি স্থানে ‘মেডিকাল টিম' কাজ করছে৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জানান, ‘‘ইবোলা ভাইরাস মোকাবেলায় অনেক আগেই সতর্কাবস্থা গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ৷ খুব শীঘ্রই দেশের সকল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ‘থার্মাল স্ক্যানিং'-এর ব্যবস্থা করার পাশাপাশি, বাইরে থেকে আসা সকল যাত্রীকে স্বাস্থ্য-পরীক্ষার আওতায় আনা হবে৷''
তিনি বলেন, আফ্রিকার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ইবোলা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় দেশের বন্দরগুলোতে ‘মনিটরিং' কার্যক্রম জোরালো করা হয়েছে৷ এই ব্যবস্থা আগামী কয়েক মাস অব্যাহত থাকবে৷
বাংলাদেশের বিমানবন্দর বা চেকপয়েন্টগুলোতে সবার স্বাস্থ্য-পরীক্ষা এবং ‘থার্মাল স্ক্যানিং'-এর ব্যবস্থা নেই৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিমানবন্দরে দেশের বাইরে থেকে আসা সকল যাত্রীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার আওতায় রাখা কঠিন কাজ৷ তবে তা এ মুহূর্তে জরুরি হয়ে পড়েছে৷ তবে পশ্চিম আফ্রিকা থেকে আগত যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হচ্ছে ইতিমধ্যেই৷ বিমানবন্দরে বাইরে থেকে আগত সকল যাত্রীর জ্বর মাপার যন্ত্র বসানোর চিন্তা-ভাবনা রয়েছে৷''
সরকারের রোগতত্ত্ব, নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাহামুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বর্তমানে বিমানবন্দরে একটি ‘মেডিকাল টিম' কাজ করছে৷ সকল যাত্রীদের স্বাস্থ্য-পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই৷ শুধু পশ্চিম আফ্রিকার দেশ থেকে কেউ স্বাস্থ্যগত সমস্যা নিয়ে আসলে তাঁকে পরীক্ষা করা হবে৷ বিমানবন্দরে বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের মধ্যে ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি আছেন কিনা, তা পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করার জন্য একটি ‘মেডিকাল ডেস্ক'-ও বসানো হয়েছে৷''
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন জাকির হাসান বলেন, ‘‘কোনো যাত্রীকে সন্দেহ হলে তাঁর নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর রাখা হচ্ছে৷ আক্রান্ত কেউ ধরা পড়লে তাঁকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হবে৷ তাঁদের জন্য ২০টি পৃথক শয্যার ব্যবস্থাও করা হয়েছে৷''
তিনি জানান, ‘‘পশ্চিম আফ্রিকা থেকে বিমানে করে কোনো যাত্রী বাংলাদেশে আসছেন কিনা, তা বিমান চলাচলের আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে বাংলাদেশকে আগেই জানানো হচ্ছে৷ এ পর্যন্ত ১০৬ জন যাত্রী বাংলাদেশে এসেছেন৷ তাঁদের প্রত্যেকের ওপর নজর রেখেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর৷ তাঁদের ২১ দিন পর্যন্ত অনুসরণ করা হচ্ছে৷ অন্যদিকে পশ্চিম আফ্রিকার ওই দেশগুলোতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে থাকা বাংলাদেশি সদস্যদের ব্যাপারে নিয়মিত খোঁজখবর রাখছে সরকার৷''
সম্প্রতি শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে লাইবেরিয়া থেকে আগত ছয়জন বাংলাদেশি ইবোলা সংক্রান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই দেশে ঢুকে পড়েন, যা নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে৷ তবে ‘বাংলাদেশ সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল'-এর পরিচালক বে-নজীর আহমেদ দাবি করেন, ‘‘বিমানবন্দরে তাঁদের তাপমাত্রা মাপা হয়েছে৷ এবং তাতে ইবোলার উপস্থিতির কোনো লক্ষণ পাওয়া যায়নি৷''