ইফতার উৎসবে অন্যরকম ঢাকা
রমজান এলেই সাজ সাজ রব পড়ে ঢাকায়৷ পাড়া-মহল্লা, অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সর্বত্রই থাকে ভিন্ন আমেজ৷ এর বেশির ভাগই ইফতারকে ঘিরে৷ পরিবার-বন্ধুমহলে, সামাজিক থেকে রাজনৈতিক সংগঠন, ইফতারকে ঘিরে সব জায়গাতেই চলে নানা আয়োজন৷
ঘরে ফেরার তাড়া
প্রায় দেড় কোটি মানুষের শহর ঢাকার অধিকাংশ মানুষ রোজার দিনে সন্ধ্যার পূর্বে ঘরে ফিরতে চায়৷ এমনিতেই এই নগরে সব কর্মদিবসেই ব্যাপক যানজট হয়৷ তবে রোজার দিনে দুপুরের পরের ঘরমুখো মানুষের এই তাড়ায় যানজট আরো তীব্র হয়৷ তবে সন্ধ্যার দিকে অধিকাংশ রাস্তাই মোটামুটি ফাঁকা হয়ে যায়৷ সূর্য পশ্চিমাকাশে অস্ত যেতেই রোজাদার সারাদিনের উপোসের অবসান করে ইফতার করেন৷
পুরান ঢাকার ইফতার
ঢাকার ইফতার আয়োজনের কেন্দ্রে থাকে এই নগরীর আদি অধিবাসী পুরান ঢাকার মানুষের সংস্কৃতি৷ নানা আয়োজনে ইফতারকে তারা উৎসবে পরিণত করেন৷ পুরান ঢাকার চকবাজারের ইফতারির প্রধান হাট বসে৷
বায়তুল মোকাররমে ইফতার
ঢাকার ইফতার আয়োজনে নানা মাত্রা রয়েছে৷ প্রায় সব মহল্লাতেই রয়েছে মসজিদ৷ মসজিদে মসজিদে চলে ইফতার৷ এখানে বিনামূল্যে ইফতারের আয়োজন করা হয়৷ তবে ঢাকার অধিকাংশ মসজিদেই নারীদের প্রবেশাধিকার নেই৷ তাই এই ইফতারেও নারীর ভাগ নেই৷ ইসলামি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে শত শত মানুষ প্রতিদিন ইফতারে অংশ নেন৷
টিএসসির ইফতার
ইফতার মুসলমানদের উপাসনার অংশ হলেও এর একটি অসাম্প্রদায়িক চরিত্রও আছে৷ সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষ এতে অংশ নিয়ে থাকেন৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এ রকমই একটি জায়গা৷ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ-তরুণীদের পাশাপাশি সাবেক শিক্ষার্থীরাও রোজার বিকালে ভীড় করেন এখানে৷ ইফতার আয়োজন চলতে চলতে বন্ধু-বান্ধব মিলে গল্পে আড্ডায় কেটে যায় আরো এক সন্ধ্যা৷
ইফতার রাজনীতি
ইফতার কেবল ধর্মীয় বিষয়েই সীমাবদ্ধ নেই৷ ইফতার আয়োজন অন্যরকম মাত্রা দিয়েছে রাজনীতিতেও৷ রাজনৈতিক দলগুলো সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের জন্য এই ইফতার আয়োজন করে থাকে৷ অনেক সময়ই এটা পরিণত হয় মিলনমেলা বা জনসংযোগে৷ ইফতার আয়োজনে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ই পরস্পরের প্রধানকে দাওয়াত দেন৷ তবে তা সীমাবদ্ধ থাকে দাওয়াত পর্যন্তই৷
বৌদ্ধ মন্দিরে ইফতার
নগরজুড়ে ইফতার আয়োজনের কাজটি মূলত মুসলিমরা করলেও ব্যতিক্রম হিসাবে রয়েছে বাসাবোর ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহার৷ এখানে প্রতিদিন শত শত মানুষের মাঝে ইফতার বিতরণ করা হয়৷ সাম্প্রতিক সময়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠা জঙ্গিবাদের সময়ে এটা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে৷ তবে দুঃখজনকভাবে এই মহাবিহারের প্রধান ধর্মগুরুও ২০১৬ সালে হত্যার হুমকি পেয়েছিলেন৷
এক টাকায় সেহরি-ইফতার
রাজধানীজুড়ে ইফতার উৎসবের রং ছড়ালেও সেটা পৌছায় না অনেক হত দরিদ্র মানুষের কাছে৷ অনটনের জীবনে সেহরি-ইফতারে বিশেষ কোনো খাবার খেতে পারেন না তারা৷ কষ্টে কাটানো তাদের এই জীবনে অনেককে পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়৷ বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন নামে একটি বেসরকারি সংগঠন রাজধানী ঢাকাসহ কয়েকটি শহরে এক টাকায় মানসম্মত সেহরি-ইফতারের ব্যবস্থা করেছে৷ পথশিশুদের জন্য করা এই আয়োজন বছরের অন্য সময়েও চলে৷
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি
বাংলাদেশে ইফতার মানেই থাকবে ভাজা-পোড়া, যা অনেক সময় আবার তৈরি হয় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে৷ সারাদিন রোজা রাখার পর এমন খাবারেই মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে৷