ইসলামি দলের ভাবমূর্তিতে ধস
২২ ডিসেম্বর ২০১৩আগামী বছরের নির্বাচনে এসব ঘটনা দলটির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷
বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম অধ্যুষিত দেশ ইন্দোনেশিয়ার রাজনীতিবিদদের বরাবরই বেশ রক্ষণশীল বলে ধরা হয়৷ কিন্তু সম্প্রতি বেশ কিছু ঘটনায় দেশটির বৃহত্তম ইসলামি পার্টির ভাবমূর্তি ধসে পড়েছে৷
‘প্রোসপারাস জাস্টিস পার্টি' বা পিকেএস নামে ঐ দলটির সাবেক সভাপতি লুথফি হাসান ইসহাককে গত সপ্তাহে ১৬ বছরের কারাদণ্ড দেয় সেদেশের দুর্নীতি বিরোধী আদালত৷ ঘুস নেয়া এবং অর্থ জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন তিনি৷ এর ফলে পুরো দেশে ইসলামিক দলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়৷
তদন্তের সময় দুর্নীতি দমন কমিশন এমন কিছু তথ্য প্রকাশ করে যাতে পুরো দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার জোগাড়৷ ইসহাকের কাছে থাকা ৬টি গাড়ি জব্দ করা হয়৷ ৫২ বছর বয়সি এই নেতা এরই মধ্যে চারটি বিয়ে করেছেন৷ সবশেষ গত বছর এক কিশোরীকে বিয়ে করেন, যার কথা তাঁর অন্য তিন স্ত্রী জানতেন না৷
গত মাসে জার্কাতার একটি হোটেলে পুলিশি অভিযানে লুথফির অন্যতম সহযোগী আহমাদ ফাতানাহকে এক কলেজ ছাত্রীর সাথে নগ্ন অবস্থায় আটক করা হয়৷ অর্থের বিনিময়ে ঐ মেয়েকে যৌনকর্মে রাজি করানো হয়েছিল বলে মেয়েটি পরে আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়৷ এমনকি প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য একটি পত্রিকার মডেলসহ ৪৫ জন নারী তারকাকে গাড়ি, হীরাসহ নানা উপহার দিয়েছেন ফাতানাহ – এমন খবরও জানতে পারে তদন্ত সংস্থা৷ অনৈতিক কাজ ও দুর্নীতির অভিযোগে তাঁকে নভেম্বরেই ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত৷
ক্ষমতাসীন জোটের অন্যতম শরিক পিকেএস থেকে এরইমধ্যে পদত্যাগ করেছেন ইসহাক৷ তবে এসব অভিযোগের বিরুদ্ধে তিনি আবেদন করবেন বলে জানিয়েছিলেন৷ অন্যদিকে, পিকেএস এই ঘটনাকে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করে আসছে৷
জাকার্তা'র ‘গ্লোব' পত্রিকা সম্প্রতি তাদের ওয়েবসাইটে লিখেছে, পিকেএসকে যারা সমর্থন করছে তাদের নৈতিকতা বোধ এবং মতামতের স্বাধীনতা নেই৷ জরিপ সংস্থা ‘লেমবাগা সার্ভেই ন্যাশনাল' বা এলএসএন এর এক কর্মকর্তা উমর এস বাকরি মনে করেন, এইসব ঘটনায় সব ইসলামিক দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে৷
সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, পিকেএস এর সমর্থন মাত্র ৮ ভাগ এবং তাদের বিরুদ্ধে মানুষের ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে৷ এলএসএন এর করা এক জরিপে ৪২.৮ ভাগ মানুষ বলেছেন, পিকেএস এর জনপ্রিয়তায় ধস নামবে এবং মাত্র ২১.৬ ভাগ মনে করেন, তাঁরা আগের চেয়ে বেশি ভোটে জয়ী হবে৷
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভির্সিটির ইন্দোনেশিয়া বিশেষজ্ঞ গ্রেগ ফিলি জানান, কয়েক বছর আগেও একজন নিষ্ঠাবান মুসলিম ইসলামিক দলগুলোকেই ভোট দিত, কিন্তু এখন পরিস্থিতি একেবারে ভিন্ন৷
এপিবি/জেডএইচ (এএফপি)