ইন্দোনেশিয়ার যেখানে শরিয়া আইন চালু আছে
জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম অধ্যুষিত দেশ ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের আচেহ প্রদেশে শরিয়া আইন চালু আছে৷ শাস্তি হিসেবে সেখানে বেত্রাঘাত করার পাশাপাশি মাথার চুলও কেটে নেয়া হয়৷
যেভাবে শুরু
ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে অবস্থিত আচেহ প্রদেশে এখনো শরিয়া আইন চালু আছে৷ ঐ অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন থামানোর লক্ষ্যে সরকার ২০০১ সালে ঐ প্রদেশের জন্য ‘বিশেষ স্বায়ত্তশাসন’এর ব্যবস্থা করার পরই ইসলামি শরিয়া আইন বাস্তবায়ন শুরু হয়৷ এরপর ২০০৫ সালে শান্তিচুক্তি সই হওয়ার পর আইনের প্রয়োগ আরও জোরালো হয়৷
যেসব অপরাধে শাস্তি দেয়া হয়
জুয়া খেলা, অ্যালকোহল পান করা, সমকামিতা, বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক স্থাপন ইত্যাদি নানা কারণে অপরাধীদের শাস্তি দেয়া হয়ে থাকে৷ শাস্তি হিসেবে সাধারণত বেত্রাঘাত করা হয়৷ অপরাধের ধরণ বিবেচনায় নিয়ে বেত্রাঘাতের পরিমাণ ঠিক করা হয়৷
অবিবাহিতদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক
সোমবার (১৩ অক্টোবর) আচেহ প্রদেশের রাজধানী বান্দা আচেহ’র একটি মসজিদ প্রাঙ্গণে শরিয়া আইন না মানার কারণে ১৩ জনকে শাস্তি দেয়া হয়৷ এর মধ্যে ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সি ছয় জোড়া তরুণ-তরুণীও ছিল৷ তাঁদের অপরাধ, বিয়ে না করেই ঘনিষ্ঠ হয়েছেন৷ শরিয়া আইন বলছে, বিয়ে না করে ছেলে-মেয়েদের একে অপরকে ছোঁয়া, চুমু দেয়া, জড়িয়ে ধরা অপরাধ৷
নিভৃত স্থানে একসঙ্গে সময় কাটানো
ছয় জোড়া যুগল ছাড়াও সোমবার আরেক ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়ার কারণ, তাকে গোপন স্থানে বিপরীত লিঙ্গের একজনের সঙ্গে এমনভাবে সময় কাটাতে দেখা গেছে যা হয়ত ব্যভিচার পর্যন্তও গড়াতে পারত৷
হাসিঠাট্টায় মগ্ন দর্শক
বেতের আঘাতে ব্যথা পেয়ে একজন তরুণী যখন চিৎকার করে কাঁদছিল তখন চারদিকে দাঁড়িয়ে জনতা সেটি উপভোগ করছিল৷
ডেপুটি মেয়রের আশা
আচেহ’র ডেপুটি মেয়র জয়নাল আরিফিনের আশা, এই ধরণের শাস্তির ব্যবস্থা করার কারণে ভবিষ্যতে নাগরিকরা শরিয়া আইন ভাঙার মতো কাজে জড়াবে না৷
নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি
সাম্প্রতিক সময়ে আচেহ’তে শাস্তি দেয়া বেড়েছে৷ আগের চেয়ে এখন বেশি সংখ্যক নারীকে এই আইনের আওতায় শাস্তি দেয়া হচ্ছে৷
মানবাধিকার কর্মীদের প্রশংসা
না, শরিয়া আইন বাস্তবায়নের জন্য প্রশংসা নয়, বরং বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছে আচেহ প্রদেশ কর্তৃপক্ষ৷ তবে সম্প্রতি এক সিদ্ধান্তের কারণে মানবাধিকার কর্মীরা আচেহর প্রশংসা করেছে৷ সেটি হচ্ছে, চাকরিরত নারী কর্মীদের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয়মাস করা হয়েছে৷ ইন্দোনেশিয়ার যে-কোনো প্রদেশের চেয়ে এটি বেশি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিগুন৷
জুয়া খেলার শাস্তি
২০১২ সালের ৫ অক্টোবরের এই ছবিতে জুয়া খেলার দায়ে এক ব্যক্তিকে শাস্তি পেতে দেখা যাচ্ছে৷ সেদিন মোট তিনজনকে এই অপরাধে শাস্তি দেয়া হয়৷
যে কারণে এই শাস্তি
২০১১ সালের ডিসেম্বরে ‘পাংক’ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ৷ তারপর তাদের এই শাস্তি দেয়া হয়৷ এরপর তাদের জন্য ১০ দিনের একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচির ব্যবস্থা করা হয়৷ সেখানে তাদের মানসিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা দেয়া হয়৷