ইডি-র তলব এড়িয়ে প্রচারে মহুয়া মৈত্র
২৮ মার্চ ২০২৪ঘুসের বিনিময়ে প্রশ্ন মামলায় তদন্ত চলছে তৃণমূলের বহিষ্কৃত সংসদ মহুয়ার বিরুদ্ধে। সিবিআই এই মামলার তদন্ত চালাচ্ছে। পাশাপাশি বিদেশি মুদ্রার লেনদেন সংক্রান্ত মামলার তদন্ত করছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট।
ইডির তলব
এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে শিল্পপতির বিরুদ্ধে সংসদে প্রশ্ন তোলার অভিযোগ। এর জেরে লোকসভার সদস্যপদ হারাতে হয় মহুয়া মৈত্রকে।
ব্যবসায়ী দর্শন হিরানন্দানি তৃণমূলের সাংসদকে উপহার ও টাকা দিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন। মহুয়া সে কারণেই শিল্পপতি গৌতম আদানির বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলেন বলে অভিযোগ। সাংসদের নিজস্ব আইডি ও পাসওয়ার্ড অন্যদের দিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে মহুয়ার বিরুদ্ধে।
এই অভিযোগের ভিত্তিতে সিবিআই ও ইডি, দুই কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তের মুখে পড়েছেন মহুয়া। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ও ১১ মার্চ বহিষ্কৃত সাংসদকে তলব করেছিল কেন্দ্রীয় সংস্থা। কিন্তু সেই সময় হাজিরা না দিয়ে কয়েক সপ্তাহের সময় চেয়ে নেন মহুয়া।
সপ্তাহ দুয়েক পর বৃহস্পতিবার ইডি দিল্লিতে ডেকে পাঠায় মহুয়াকে। তাকে এবারও কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এদিন সকালে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেননি মহুয়া। বরং নিজের কেন্দ্র কৃষ্ণনগরে জনসংযোগ করেছেন তিনি।
আজ এই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত কালীগঞ্জ বিধানসভার নয়াচর গ্রামে প্রচার করেন মহুয়া। কখনো হেঁটে, হুডখোলা জিপে ঘোরেন তিনি। ঢুকে পড়েন চায়ের দোকানে। বলেন, "ইডির কাজ ইডি করছে। আমার কাজ আমি করছি। নির্বাচনী আচরণবিধি কার্যকর হয়ে গিয়েছে, তাই আমি প্রচার করছি। ওরা তো কৃষ্ণনগরে চলে এসেছে তদন্তের জন্য। আমি আর কেন যাব!"
রাজ্য বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেন, "জেনেশুনে একজন অপরাধীকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। বারবার সাড়া না দিয়ে কী ফল হয়, তা অরবিন্দ কেজরিওয়াল বুঝেছেন। মহুয়া মৈত্র বুঝতে পারবেন।"
গ্রেপ্তারির আশঙ্কা?
মহুয়ার বিরুদ্ধে তদন্তের গতি বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। সিবিআই কলকাতায় তার বাবার বাড়িতে অভিযান চালায়। কৃষ্ণনগরে মহুয়ার কার্যালয় ও করিমপুরে তার ভাড়াবাড়িতেও হানা দেন আধিকারিকরা।
মহুয়াকে গ্রেপ্তারের দাবি তুলেছে বিজেপি। সুপ্রিম কোর্ট বহিষ্কৃত সাংসদকে রক্ষাকবচ না দেয়ায় এই দাবি জোরালো হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠলে তাদের রক্ষাকবচ দিতে চায় না সর্বোচ্চ আদালত। ইডি ও সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে নির্বাচন কমিশনেও দরবার করেছেন মহুয়া।
গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফোন করেছিলেন কৃষ্ণনগরের বিজেপি প্রার্থী অমৃতা রায়কে। তাদের আলাপচারিতায় মহুয়াকে গ্রেপ্তারের প্রশ্ন উঠে আসে।
কৃষ্ণনগরের রাজপরিবারের সদস্য অমৃতা দাবি করেন, মানুষের কাছে আমি জানতে চাই, মহুয়া মৈত্রের কী হবে? তারা বলছেন, ওকে তো জেলে যেতেই হবে।" এ কথা শুনে মোদী উত্তর দেন, "আচ্ছা, মানুষ বলছে তাই।"
অতীতের মত এখনো প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করে চলেছেন মহুয়া। অমৃতার সঙ্গে আলাপচারিতায় মোদীর মুখে উঠে আসে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের নাম। অমৃতা এই পরিবারেরই সদস্য। কৃষ্ণচন্দ্রকে সমাজ সংস্কারের তকমা দেন প্রধানমন্ত্রী।
এ নিয়ে তাকে কটাক্ষ করে মহুয়া এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, "রাজা রামমোহন রায়ের সঙ্গে কৃষ্ণচন্দ্র রায়কে গুলিয়ে ফেলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি ঠিকমতো হোমওয়ার্ক করেননি।"
পাল্টা বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট নদিয়ায় পাকিস্তানের পতাকা উড়েছিল। এই রাজপরিবারের জন্য নদিয়া ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয় ১৮ই আগস্ট। যিনি কৃষ্ণনগর থেকে সাংসদ হয়েছেন, তার এই ইতিহাস জানা উচিত। জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা থেকে নারী শিক্ষা, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের অবদানও ইতিহাসের বিষয়।"
নির্বাচনে প্রভাব
সংসদ থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পরও মহুয়ার প্রতি আস্থা রেখেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রার্থী পদের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগেই তিনি জনসভা থেকে বলে দেন, মহুয়া আরও বেশি ভোটে জিতবেন। গতবার মহুয়া ৬৩ হাজার ভোটে জিতেছিলেন। আগামী ৩১ মার্চ মমতা কৃষ্ণনগরে প্রচারে আসবেন।
কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির তৎপরতায় ভারতে বিভিন্ন বিরোধী দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বা তাদের পরিবারের সদস্যরা এখন জেলবন্দি। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল ছাড়াও ঝাড়খণ্ডের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন এখন কারাগারে। ভারত রাষ্ট্র সমিতির প্রধান কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের কন্যা কে কবিতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের কন্যা বীণা বিজয়নের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে ইডি।
মহুয়া-সহ বিরোধীদের অভিযোগ, প্রার্থীদের ভোট ঘোষণার পর তলব করে প্রচারে অসাম্য তৈরি করা হচ্ছে। এটা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে।
পর্যবেক্ষক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তীর বক্তব্য, "জর্জ ফার্নান্ডেজ জেলে থেকে ভোটে লড়ে জিতেছিলেন। এমন আরো উদাহরণ আছে। সুতরাং প্রচারে অসাম্যের যুক্তি খাটে না। কোনো অভিযুক্ত বা অপরাধী ভোটে দাঁড়ালে কি তদন্ত চলবে না?"
সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্য ডি ডাব্লিউ কে বলেন, "আমার ধারণা মহুয়া মৈত্রকে কেন্দ্রীয় সংস্থা গ্রেপ্তার করবে। এটা আঁচ করে ৩১ তারিখ মুখ্যমন্ত্রী কৃষ্ণনগরে প্রচারে যাচ্ছেন। কেজরিওয়ালের পর মহুয়া গ্রেপ্তার হলে, এটাকে সামনে রেখে তৃণমূল প্রচার করবে। এজেন্সি অপব্যবহারের প্রচার আরো জোরালো করে তুলবে। শুধু কৃষ্ণনগর নয়, দেশ জুড়ে এটা বিরোধীদের হাতিয়ার হয়ে উঠছে।"