ইউরোপের মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে টানাপোড়েন
৭ নভেম্বর ২০১০যে কোন চাকরিজীবি মেয়ের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ৷ প্রতিটি মেয়েই স্বাবলম্বী হতে চায় আবার স্বামী সংসার নিয়ে সুখীও হতে চায়৷ মাতৃত্বকালীন ছুটি বাড়ানো হলে যে কোন মেয়ের জন্যই তা সুখবর৷ গত মাসে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ইউরোপের দেশগুলোতে মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে প্রস্তাব পাশ করা হয়৷ প্রস্তাবে পরিষ্কার উল্লেখ করা হয়েছে যে, মাতৃত্বকালীন ছুটি ১৪ সপ্তাহ থেকে বাড়িয়ে ২০ সপ্তাহ করা হবে৷
তবে প্রতিটি দেশে এসব আইন-কানুন করার এখতিয়ার সেই সব দেশেরই৷ ইউরোপীয় কমিশনের কাছে মাতৃত্বকালীন ছুটি ২০ সপ্তাহ করার প্রস্তাবটি পাঠানো হয়েছে৷ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো গ্রহণ করা হয়নি৷ তবে ইউরোপীয় কমিশন নিজেই ১৮ সপ্তাহ ছুটির পক্ষে৷ মানবাধিকার সংস্থা এবং অন্যান্য নারী সংগঠনগুলোর দাবি, ১৮ নয় ২০ সপ্তাহ করতে হবে মাতৃত্বকালীন ছুটিকে৷ এই সময়ে পুরো বেতন মা পাবেন এবং এর পাশাপাশি বাবাকেও দুই সপ্তাহের ছুটি দিতে হবে৷
চৌদ্দ সপ্তাহ থেকে কুড়ি
বর্তমানে ইউরোপের বেশির ভাগ দেশেই মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ ১৪ সপ্তাহ৷ জার্মানিতে প্রথম ১৪ সপ্তাহ মায়েরা ছুটির সঙ্গে পুরো বেতন পান৷ এর পাশাপাশি বাবা এবং মায়ের পরবর্তী এক বছর ছুটি নেওয়ার সুযোগ রয়েছে৷ তবে সে সময় পুরো বেতন নয় মূল বেতনের দুই তৃতীয়াংশ দেওয়া হয়৷
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যা জার্মানির এলিজাবেথ শ্রোয়েডার৷ তিনি জার্মানির রাজনৈতিক দল গ্রিন পার্টির সঙ্গে জড়িত৷ তিনি জানান, এই প্রস্তাব গৃহীত হলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন মায়েদের স্বার্থ রক্ষা করবে বিশেষ করে যে সব মায়েরা একা সন্তানের লালন পালন করেন৷ শ্রোয়েডার জানান,‘‘ এই আইন সেসব মায়েদের রক্ষা করবে যারা একা সন্তানের লালন-পালন করেন৷ যারা একাই পুরো দায়িত্ব বহন করেন৷ তারা যেন ২০ সপ্তাহ ছুটি কাটিয়ে আবারো কাজে ফিরে যেতে পারেন সেই সুযোগ দেওয়া জরুরি৷ তাহলে তারা কাজ হারানোর ভয় থেকে মুক্ত থাকবে৷''
বিরোধী পক্ষের যুক্তি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে এলিজাবেথ শ্রোয়েডার বলেন, এই দীর্ঘ ছুটি শুধু মায়ের জন্যই শুধু নয়, শিশুর জন্যও ভাল৷ তবে বেশ কিছু রাজনীতিক পুরোপুরি এর বিরোধিতা করছেন৷ তাদের যুক্তি অর্থনৈতিক মন্দার এই সময়ে এ ধরণের প্রস্তাব একটি দেশকে আরো তীব্র আর্থিক মন্দার দিকেই ঠেলে দেবে৷ জার্মানির রক্ষণশীল রাজনীতিক টোমাস মান এই প্রস্তাবের বিপক্ষে৷ তিনি জানান, ‘‘কমিশনের ভাষ্য অনুযায়ী, ২০ সপ্তাহ মাতৃত্বকালীন ছুটির জন্য ফ্রান্সকে ব্যয় করতে হবে বছরে প্রায় দুই বিলিয়ন ইউরো৷ বৃটেনে প্রায় তিন বিলিয়ন ইউরোর কাছাকাছি৷ জার্মানির খরচ বাড়বে আরো প্রায় ১.৭ বিলিয়ন ইউরো৷ ইদানিং আমরা সারাক্ষণই খরচা-পাতির দিকে তাকিয়ে থাকি৷ এটা হবে আরেকটি বাড়তি খরচ৷''
আর ঠিক এ কারণেই বৃটিশ সরকার দেশের সার্বভৌমত্বের ওজর টেনে একটি বিল পাশ করানোর পরিকল্পনা করছে৷ এর ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে কোন আইন চ্যালেঞ্জ করতে পারবে বৃটেন৷
বৃটেনের শুধু রক্ষণশীল দলই নয় বরং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও টাকা গোনা শুরু করে দিয়েছে৷ বোঝা যাচ্ছে এই প্রস্তাব নিয়ে অনেক দেশই চিন্তিত৷ জার্মানির সামাজিক গণতান্ত্রিক দলের কন্সটান্স ক্রেল বললেন, ‘‘আমরা চিন্তিত এই কারণে যে, যদি মায়েরা ২০ সপ্তাহ কাজ থেকে বাইরে থাকে তাহলে কাজে আবার ফিরে যাওয়া তাদের জন্য কঠিন হয়ে উঠবে৷ ফলে আমাদের সম্ভাব্য শক্তি দিয়ে আমরা তা প্রতিরোধ করবো৷''
জার্মানির ক্ষমতাসীন জোটভুক্ত দল এফডিপি পুরোপুরি এই প্রস্তাবের বিপক্ষে৷ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট এফডিপি দলের সিলভানা কখ-মেরিন৷ তিনি এই প্রস্তাবকে পুরোপুরি অপ্রয়োজনীয় বলে আখ্যায়িত করেছেন৷ তিনি বলেন, ২০ সপ্তাহ ছুটির ফলে যে কোন মেয়ের জন্য কাজ পাওয়া সহজ হবে না৷ কাজ ফিরে পেতে এখন যে কোন মেয়েকে আগের চেয়ে অনেক বেশি সংগ্রাম করতে হবে৷ তিনি আরো জানান, ঠিক যে সময় আমাদের দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন ঠিক সে সময়েই আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ কঠিন করে দিচ্ছি৷
ইউরোপীয় পার্লামেন্টে অনুমোদিত ২০ সপ্তাহের মাতৃত্বকালীন ছুটির প্রস্তাবটি এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের মন্ত্রীপরিষদে আলোচনা করা হবে৷ পরিষদে প্রস্তাবের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলে এই প্রশ্নে দিকনির্দেশনার পরবর্তী এক বাধা দূর হবে৷ কিন্তু এই মন্ত্রী পরিষদের অন্যতম সদস্য দেশ বৃটেন, জার্মানি, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, নেদারল্যান্ডস এবং সুইডেন প্রস্তাবের বিরোধিতা করার কথা ঘোষণা করেছে৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক