ইউরোপের অজানা আকর্ষণ সোফিয়া
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯পাহাড়ের কোলে অবস্থিত বুলগেরিয়ার রাজধানী সোফিয়ার মূল আকর্ষণ হলো আলেক্সান্ডার নিয়েফস্কি ক্যাথিড্রাল৷ পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপের মধ্যে প্রায় ৭,০০০ বছরের ইতিহাসের সাক্ষী এই শহর৷ রোম, বাইজেন্টাইন, ওসমানি – প্রায় সব শক্তি সেখানে আধিপত্য কায়েম করেছে৷
স্টানিস্লাভ কেয়ারটিকভ একই সঙ্গে অভিনেতা ও পর্যটকদের গাইড হিসেবে কাজ করেন৷ নিজের শহরের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তিনি বেশ আশাবাদী৷ তিনি বলেন, ‘‘১০ বছর আগে সোফিয়া অনেক বেশি ধূসর ছিল৷ এখন রং ও বৈচিত্র্যে ভরা৷ অনেক আকর্ষণীয় জায়গা ও আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান রয়েছে৷''
কুয়াশা না থাকলে শহরের প্রায় সব জায়গা থেকেই ভিটোশা পাহাড় দেখা যায়৷ শহরের সবচেয়ে পুরানো বাজারের নাম ‘নারীদের বাজার'৷ সকালে সেখান থেকেই শহর ভ্রমণের সূচনা হয়৷ গোটা বুলগেরিয়া থেকে চাষিরা এসে সেখানে তাঁদের পণ্য বিক্রি করেন৷ সেখানে শহরের ভিন্ন ধরনের এক স্মারক পাওয়া যায়৷
প্রাচীনকালে রোমানরা সোফিয়া-কে সেরদিকা নামে ডাকতেন৷ এখন এক মেট্রো স্টেশনেরও একই নাম৷ পাতাল রেল তৈরির খননকাজের সময় শহরের আদি রূপ বেরিয়ে পড়ে৷ তারপর সেটি অক্ষত রাখার সিদ্ধান্ত হয়৷
রোমান আমলের সেই সাইটের একশো মিটারের মধ্যেই ওসমানি আমলের বানিয়া বাশি মসজিদ অবস্থিত৷ তার প্রায় পাশেই সেফারডিক সিনাগগ৷ অনেক মুসলিম ও ইহুদি দেশ ছেড়ে চলে গেলেও তাদের উপাসনালয়গুলি রয়ে গেছে৷ স্টানিস্লাভ কেয়ারটিকভ বলেন, ‘‘আমরা এতক্ষণ কী দেখলাম? একটি মসজিদ, একটি সিনাগগ, দুটি খ্রিষ্টান অর্থোডক্স গির্জা পরস্পরের খুব কাছাকাছি অবস্থিত৷ তাই আমরা এই চত্বরকে ‘স্কোয়্যার অফ টলারেন্স' বা সহিষ্ণুতা চত্বর বলি৷ কারণ সেগুলি এত কাছাকাছি অবস্থিত৷ কিন্তু তাদের মধ্যে কোনো সংঘাত নেই৷''
শীতের নিম্ন তাপমাত্রা ও শহরের গভীর ইতিহাস থেকে কিছুটা বিরতি চাইলে সোফিয়ার উষ্ণ প্রস্রবণে চলে যেতে পারেন৷ তবে সেখানে আর স্নান করা সম্ভব না হলেও মানুষ তার গরম, ধাতুসমৃদ্ধ পানি চেখে দেখতে পারেন৷ স্টানিস্লাভ কেয়ারটিকভ বলেন, ‘‘গির্জাসহ এই রোমান কমপ্লেক্সের চারিদিকে কেন এমন সব ভবন রয়েছে, তা অনুমান করতে পারেন কি? উত্তর হলো, এ সব গোপন রাখতে, লুকিয়ে রাখতেই এমনটা করা হয়েছে৷ যেমনটা বলেছিলাম, কমিউনিস্টরা মোটেই ধর্ম নিয়ে আন্তরিক ছিল না৷ হয় লেনিন বা স্টালিনের মতো ঈশ্বরপ্রতিম কমিউনিস্ট নেতা, কিংবা ঈশ্বরের মধ্যে একটিকে বেছে নিতে হবে৷''
আদি খ্রিষ্টান যুগের এই গির্জার ফ্রেস্কো প্রায় এক হাজার বছর আগে বাইজেন্টাইন যুগে সৃষ্টি করা হয়েছিল৷ এই গির্জা ইতিহাসের অনেক উত্থানপতনের সাক্ষী৷ রংয়ের কয়েকটি স্তরের মধ্যে তার প্রতিফলন দেখা যায়৷ বিংশ শতাব্দীতে আবার সেই রং সরানো হয়েছে৷ স্টানিস্লাভ বলেন, ‘‘সোফিয়া সম্ভবত ইউরোপের সবচেয়ে কদরহীন স্থান৷ অনেক ইতিহাস, অনেক চমকপ্রদ বস্তু এখানে রয়েছে৷ তাই আমি বিশ্বের সব মানুষকে আমাদের শহরের সৌন্দর্য চাক্ষুষ করতে আমন্ত্রণ জানাতে চাই৷''
দ্রুত অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে৷ তবে শহরের কেন্দ্রস্থলের আলোর মেলা মানুষকে আকর্ষণ করে৷ ছোট একটি সাধারণ গলি দিয়ে এগোলেই ‘ফ্রাইডে বার' চোখে পড়ে৷ সোফিয়ার সবচেয়ে আকর্ষণীয় আড্ডার জায়গাগুলির মধ্যে এটি পড়ে৷
স্টানিস্লাভ গাইডের তকমা সরিয়ে রেখে সেখানকার মঞ্চে বন্ধুদের সঙ্গে অভিনেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন৷ বুলগেরিয়ার ভাষা না জানলেও সুন্দর সেই পরিবেশ মানুষকে মুগ্ধ করে বৈকি৷
নিকোলাস কনোলি/এসবি