ইউরোপ-জার্মানি
১৮ জুলাই ২০১২মূলত জার্মানির নেতৃত্বেই ইউরোপীয় স্তরে স্থায়ী উদ্ধার তহবিল ইএসএম ও বাজেট ঘাটতি সংক্রান্ত ফিসক্যাল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে৷ উদ্দেশ্য, দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে সংকটের মোকাবিলা করা৷ কিন্তু প্রয়োজন প্রতিটি দেশের সংসদ বা মন্ত্রিসভার অনুমোদন৷ আপাতত এই দুই প্রকল্পের চাবিকাঠি জার্মানির হাতে৷ আগামী ১২ই সেপ্টেম্বর জার্মানির সাংবিধানিক আদালত এবিষয়ে রায় দিতে চলেছে৷ ফলে গোটা প্রক্রিয়ায় বেশ বিলম্ব ঘটছে৷ আর জার্মানিতে এমন অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় বাকি দেশগুলির কাছে ভুল বার্তা পৌঁছচ্ছে৷ তবে ধরে নেওয়া হচ্ছে, যে আদালত এত গুরুত্বপূর্ণ এক সিদ্ধান্ত বাতিল করবে না৷ বড়জোর ভবিষ্যতে এ সব ক্ষেত্রে সংসদের হাতে আরও ক্ষমতা তুলে দেওয়ার ডাক দেবে৷
জার্মানির সরকার ও বিরোধীদের বড় অংশ ইউরোপকে সাহায্য করার পক্ষে৷ গ্রীষ্মের ছুটি সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার জার্মান সংসদের বিশেষ অধিবেশনে স্পেনের ব্যাংকিং জগতকে সহায়তা দেবার সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আগামী ২০১৩ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি সরকারের নেত্রী হিসেবে ইউরোপ'কেই প্রচারের মূল বিষয় করতে চলেছেন৷
জোটসঙ্গী বাভেরিয়ার সিএসইউ দল গ্রিস'কে ইউরো এলাকা থেকে বহিষ্কারের যে দাবি করছে, সেই প্রসঙ্গে ম্যার্কেল বলেন, ‘‘আগামী বছরের সাধারণ নির্বাচনের আগেই আমরা গ্রিসের অবস্থা সম্পর্কে রিপোর্ট জানতে পারবো বলে আমি আশা রাখি৷ কিন্তু আমার মতে, প্রতিটি দেশকে কতগুলি বিষয় সম্পর্কে ভাবতে হবে৷ যেমন কোনো সিদ্ধান্তে অটল থাকা, বা অন্যদের সংহতির বদলে নিজস্ব দায়িত্ব পালন করা৷ ফলে আগামী বছরের নির্বাচনে ইউরোপ একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে৷ ইউরোপ আজ কোথায় দাঁড়িয়ে, ইউরোপ সম্পর্কে আমাদের ধারণাই বা কী? ইউরোপ'কে স্থিতিশীলতার ভিত্তিতে এক ইউনিয়ন হতে হবে বলে আমি এবং আমার জোট সরকার মনে করি৷ এই ইউরোপ গোটা বিশ্বের সামনে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করবে, ঘরে কর্মসংস্থান বাড়াবে, যাতে দেশের মানুষ ভালো থাকতে পারেন৷''
চলতি সপ্তাহের কিছু ইতিবাচক ঘটনার কারণে ইউরোপের পুঁজিবাজার মোটামুটি শান্ত৷ অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হবার কারণে সংশয় রয়ে গেছে৷ আগামী শুক্রবার ইউরো এলাকার অর্থমন্ত্রীরা টেলিকনফারেন্স'এর মাধ্যমে স্পেনের ব্যাংকিং ক্ষেত্রকে সহায়তার বিষয়ে আলোচনা করবেন৷ আশা করা হচ্ছে, এদিনই ১০,০০০ কোটি ইউরো পর্যন্ত সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে যাবে৷
গ্রিস, স্পেন, ইটালি, পর্তুগাল – চারটি দেশের ক্ষেত্রেই বেশ কিছু ভালো খবর পাওয়া যাচ্ছে৷ পর্তুগাল ভালো ফল করায় আইএমএফ সেদেশকে প্রায় ১৫০ কোটি ইউরো সহায়তা দিচ্ছে৷ পুঁজিবাজারে ইটালির ব্যাংকগুলির শেয়ার স্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছেছে৷ বন্ড বাজারে গ্রিস ও স্পেনের কিছুটা উন্নতি দেখা যাচ্ছে৷ মঙ্গলবার গ্রিস ৩ মাসের ঋণের বোঝা নিলাম করে প্রায় ১৬২ কোটি ইউরো সংগ্রহ করেছে৷ স্পেনের সরকার বাজার থেকে প্রায় ৩৫৬ কোটি ইউরো নতুন ঋণ তুলতে পেরেছে৷ স্পেনের বাণিজ্য খাতেও উন্নতি হয়েছে৷ এই অবস্থায় দুই দেশের উপর চাপ কিছুটা কমবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ বিশেষ করে স্পেনের সরকার মন্দা, বেকারত্ব ইত্যাদি সমস্যার মোকাবিলা করার কিছুটা সুযোগ পাবে৷
স্পেনের ব্যাংকিং ক্ষেত্রে সংকটের ফলে ইউরোপে ব্যাংকিং ইউনিয়ন গড়ে তোলার যে পরিকল্পনা চলছে, তার প্রেক্ষাপটে ফ্রান্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান প্রস্তাব দিয়েছেন যে, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকই এই কাঠামোর তত্ত্বাবধান করতে পারে৷ এই কাঠামো তৈরি হলে কোনো সরকারকে সরাসরি সমস্যায় না ফেলে সরাসরি ব্যাংকগুলিকে সাহায্য করা সম্ভব হবে৷
এসবি / ডিজি (এএফপি, রয়টার্স)