অবসরপ্রাপ্তদের দরিদ্রতা
৬ জানুয়ারি ২০১৩ইউরোপের প্রতি চারজনের একজন এখন অবসরপ্রাপ্ত৷ মোট সংখ্যা প্রায় ১২০ মিলিয়ন৷ ইউরোপীয় কমিশনের হিসেব এটা৷ আরও জানা গেছে, প্রতি বছরই ষাটোর্ধ্ব মানুষের সংখ্যা বাড়ছে প্রায় দুই মিলিয়ন করে৷ যেটা দশ বছর আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুন৷
ইউরোপের সরকারগুলো বর্তমানে তাদের জিডিপি'র প্রায় দশ শতাংশ ব্যয় করে পেনশন খাতে৷ এখন যেহেতু অবসরপ্রাপ্তের সংখ্যা বাড়ছে তাই পেনশন দিতে সরকারগুলোর ব্যয় আরও বাড়বে৷
কিন্তু সরকার রয়েছে অর্থ সমস্যায়৷ আর্থিক মন্দার কারণে সরকারের কাছে পর্যাপ্ত টাকা নেই৷ তাই আগের মতো আর বেশি বেশি পেনশন দিতে পারছে না সরকারগুলো৷
আর্থিক মন্দা ছাড়াও মানুষের আয়ু বেড়ে যাওয়া আর জন্মহার কমে যাওয়ার কারণে সমস্যায় রয়েছে ইউরোপের সরকারগুলো৷ কেননা আয়ু বেড়ে যাওয়ায় অবসরপ্রাপ্তদের অনেকদিন ধরে পেনশন দিতে হচ্ছে৷ অন্যদিকে, জন্মহার কমে যাওয়ায় কর্মক্ষম লোকের সংখ্যা যাচ্ছে কমে৷ এর ফলে পেনশন খাতে অর্থ জমা হওয়ার পরিমাণও কমে যাচ্ছে৷
অর্থাৎ, একদিকে পেনশন তহবিলে অর্থ জমা হচ্ছে কম, অন্যদিকে বেশি মানুষকে পেনশন দিতে হচ্ছে৷ এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ইউরো সংকট৷ সব মিলিয়ে সরকারগুলো পড়েছে বিপদে৷
জার্মানির সামাজিক গণতন্ত্রী দল এসপিডি'র গবেষণা শাখা ফ্রিডরিশ এবার্ট ফাউন্ডেশন এ বিষয়ে একটি গবেষণা করেছে৷ তাতে বলা হয়েছে ইউরোপের সমস্যাগ্রস্ত দেশ স্পেন, পর্তুগাল আর গ্রিসে বয়স্করা বেশি দারিদ্রতার মুখোমুখি হচ্ছে৷ অবস্থা ভাল নয় গ্রেট ব্রিটেনেরও৷ সেখানে এমনিতেই অন্যান্য দেশের তুলনায় পেনশনের হারটা কম৷
তবে ফ্রিডরিশ ফাউন্ডেশনের গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, হল্যান্ডের অবসরপ্রাপ্তরা এদিকে থেকে কিছুটা ভাগ্যবান৷ জার্মানির অবস্থা মোটামুটি৷ অর্থাৎ ভাল আর খারাপের মাঝামাঝি৷ জার্মানির যেসব নাগরিকের বয়স ৬৫ তাদের মধ্যে দারিদ্রতার হার ১৫ শতাংশের মতো বলে জানিয়েছে ঐ গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি৷
বয়স্কদের মধ্যে পুরুষদের তুলনায় নারীর অবস্থা খারাপ৷ ইউরোপে এখনো নারীরা পুরুষের তুলনায় গড়ে ১৭ শতাংশ কম বেতন পান৷ আর কম বেতন মানে পেনশন তহবিলে কম জমা, মানে অবসর সময়ে কম প্রাপ্তি৷ এছাড়া মাতৃত্বকালীন ছুটি অথবা পরিবারের বয়স্কদের দেখভাল করার জন্যও নারীরা কর্মজীবনে পুরুষের চেয়ে কম সময় কাজ করে থাকেন৷
বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে ইউরোপীয় কমিশন অবসর নেয়ার সময়সীমা বৃদ্ধি ও নারীদের জন্য পুরুষের সমান কাজ করার ব্যবস্থা চালুর সুপারিশ করেছে৷ এক জরিপে দেখা গেছে ৬১ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন অবসরের পরও তারা কাজ করতে আগ্রহী৷