ক্লাবগুলো টাকা ওড়াচ্ছে
৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩স্পেনের দিকে না তাকিয়ে যদি ইংল্যান্ডের দিকে তাকানো যায়, তাহলে দেখা যাবে প্রিমিয়ার লিগের টপ ক্লাবগুলো এই গ্রীষ্মে ট্রান্সফার উইন্ডো বন্ধ হবার আগে – গত সোমবার – ৬৩০ মিলিয়ন পাউন্ড, মানে প্রায় এক বিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে৷ এর পর আগামী জানুয়ারি মাস অবধি ইউরোপের বিগ লিগ ক্লাবগুলো কোনো নতুন প্লেয়ার ভাড়া করতে পারবে না৷
ইংলিশ ক্লাবগুলো এবার তাদের ২০০৮ সালের ট্রান্সফার ফি-র রেকর্ড – ৫০০ মিলিয়ন পাউন্ড – নিজেরাই ভেঙেছে৷ সব মিলিয়ে প্রিমিয়ার লিগ আজও বিশ্বের সবচেয়ে ধনি জাতীয় প্রতিযোগিতা৷ এ মরশুমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবং প্রিমিয়ার লিগের অন্যান্য ১৯টি ক্লাবের মোট আমদানি হবে প্রায় এক দশমিক ছয় বিলিয়ন পাউন্ড৷ বিস্কাইবি, বিটি এবং বিশ্বের অন্যান্য সম্প্রচারকদের সঙ্গে নতুন চুক্তি কার্যকরি হয়েছে গত মাস থেকে৷ এটা তারই ফল৷
এ বলে আমায় দ্যাখ, ও বলে আমায়
ব্রিটেন ছেড়ে ফেরা যাক স্পেনের কাহিনিতে৷ বার্সেলোনা ৭৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করে ব্রাজিলের উঠতি সুপারস্টার নাইমারকে কেনার পর, রেয়াল এবার টটেনহ্যামের কাছ থেকে গ্যারেথ বেলকে কিনেছে ১৩২ মিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ ১০০ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে৷ সেটা যে স্পেনে, বিশ্বে এবং ফুটবলের ইতিহাসে একটা রেকর্ড, তা বলে দেওয়ার দরকার রাখে না৷
আর্থিক এবং অর্থনৈতিক বিচারে স্পেনের যখন হাঁড়ির হাল, তখন ফুটবল ক্লাবগুলো এভাবে টাকা ওড়াচ্ছে কি করে, সে প্রশ্নের জবাব হলো: রেয়াল অথবা বার্সেলোনা নিজেরাই তাদের খেলা সম্প্রচারের টেলিভিশন স্বত্ব বিক্রি করে থাকে – যেখানে ইংল্যান্ড কিংবা জার্মানিতে সেই স্বত্ব সামগ্রিকভাবে বিক্রি হয় এবং সব ক্লাব সেই চুক্তিলব্ধ অর্থের আনুপাতিক ভাগ পায়৷
লাগে টাকা, দেবে...
কাজেই একক আমদানির দিক দিয়ে রেয়াল আর বার্সেলোনা বিশ্বের সবচেয়ে ধনি ক্লাব৷ স্পেনের মিডিয়াপ্রো প্রোডাকশন এবং ডিসট্রিবিউশন কোম্পানির সঙ্গে টিভি স্বত্ব সংক্রান্ত চুক্তি ছাড়াও কাতার এয়ারওয়েস বা এমিরেটস এয়ারলাইনের সঙ্গে স্পন্সরশিপ চুক্তি রয়েছে৷ তা সত্ত্বেও রেয়ালের একারই বাজারে ধার নাকি আধা বিলিয়ন ইউরোর আশে-পাশে৷ স্পেনের ব্যাংকগুলি এই সব বড় ক্লাবগুলোকে দরাজ হাতে ঋণ দিয়ে থাকে৷
কিন্তু তারপর যদি এই সব ক্লাব ঋণ পরিশোধ না করতে পারে, কিংবা দেউলে হয়, তাহলে কিন্তু ঐ ব্যাংকগুলোই আবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্বারস্থ হবে, অর্থাৎ রেয়ালের গ্যারেথ বেলকে কেনার শেষ কড়িটা চুকোতে হবে ইউরোপের করদাতাদের – এই ধরনের নানা বিপর্যয়ের সিনারিও বাজারে চলছে বটে, কিন্তু তা-তে বিশ্বাস কিংবা তোয়াক্কা করার মতো ফুটবলমোদী কি পৃথিবীতে কেউ কোথাও আছে?
প্লেয়ার ট্রেডিং
আর শেয়ার ট্রেডের মতোই এই প্লেয়ার ট্রেডও এক বিচারে ফেয়ার ট্রেড: হিসেব করে কেনাবেচা৷ রেয়ালই তো গ্যারেথ বেলকে কেনার ১০০ মিলিয়নের মধ্যে ৫০ মিলিয়ন উশুল করে নিয়েছে মেসুত ও্যজিলকে ঐ ইংল্যান্ডেরই আর্সেনালের কাছে বেচে দিয়ে৷ আর এরপর যদি বলা যায়, এই গ্রীষ্মে স্পেনের ক্লাবগুলো প্লেয়ার কেনাবেচা করে মোট ৯৫ মিলিয়ন পাউন্ড মুনাফা করেছে, তাহলে কি আর তাদের ঝানু ব্যবসাবুদ্ধি আর পাক্কা বুককিপিং সম্পর্কে আর কিছু বলা চলবে?
এসি/ডিজি (রয়টার্স)