ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংস্কারের ডাক দিলেন মাক্রোঁ
১৭ এপ্রিল ২০১৮ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিকদের বিভিন্ন উদ্বেগ ও শঙ্কার মোকাবিলা করার জন্য সংস্কারের ডাক দেন মাক্রোঁ৷ একের পর এক সংকটের মাঝখানে ইউরোপীয় ঐক্যকে জোরদার করাই ছিল তাঁর ভাষণের উদ্দেশ্য৷ স্ট্রাসবুর্গে তিনি ইউরোপীয় সাংসদদের প্রতি ‘‘প্রত্যয় ও প্রস্তাবাবলী সম্পর্কে একটি বাস্তবিক বিতর্ক'' শুরু করার এবং ‘‘ইউরোপীয় গণতন্ত্রকে সঞ্জীবিত করে তোলার'' আহ্বান জানান৷ ২০১৯ সালের মে মাসে ইইউ-তে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ ব্রিটেনের ইইউ ত্যাগের পর তা হবে প্রথম নির্বাচন৷
ইউরোপের মানুষ ‘‘ইউরোপের আশা ছেড়ে দেননি,'' মঙ্গলবার তাঁর আবেগপূর্ণ ভাষণে বলেন মাক্রোঁ, এবং অভিবাসন, ইউরো মুদ্রা এলাকার সংস্কার, ইউরোপীয় ব্যাংকিং প্রণালীর সংস্কার ও একটি ইইউব্যাপী সার্বভৌমত্ব সৃষ্টির ব্যাপারে বিতর্কের ডাক দেন৷ ঐ ইউরোপীয় ইউনিয়নব্যাপী সার্বভৌমত্ব একক সদস্য দেশগুলির সার্বভৌমত্বকে সম্পূর্ণ করবে, বলেন মাক্রোঁ৷
আজকের ব্যাপক পরিবর্তনের বিশ্বে রাজনীতিকদের তাদের চিন্তাধারা পাল্টাতে হবে, তবে তার অর্থ গণতন্ত্রকে প্রত্যাখ্যান করা নয় বলে মাক্রোঁ যোগ করেন৷ ‘‘বলতে কি, এই কঠিন সময়ে ইউরোপীয় গণতন্ত্রই আমাদের সেরা সুযোগ,'' বলেন মাক্রোঁ এবং এই পরিস্থিতিতে নিজেদের ‘‘পন্থা ও সত্তা পরিত্যাগ করাটা সবচেয়ে বড় ভুল হবে'' বলেও মনে করেন তিনি৷
‘‘আমরা চতুর্দিকে কর্তৃত্ববাদীদের দেখছি: কর্তৃত্ববাদী গণতন্ত্র নয়, তার উত্তর হলো গণতন্ত্রের কর্তৃত্ব,'' বলেন মাক্রোঁ৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় মূল্যবোধকে পরিত্যাগ করছে
স্বদেশের ব্যর্থতার জন্য ব্রাসেলসকে দায়ী করার প্রবণতা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভবিষ্যৎসম্পর্কে আলোচনায় অনিচ্ছার সমালোচনা করে মাক্রোঁ বলেন, ‘‘এভাবে চলাটা বোকার কাজ, যা আরামের হলেও, তা দিয়ে কোনো সমস্যার সমাধান হয় না৷''
মাক্রোঁ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের ঘোষিত মূল্যবোধের ফারাকের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘ঐ দেশটির সঙ্গে আমাদের বহু মিল রয়েছে; কিন্তু ঐ দেশ বহুপাক্ষিকতা, মুক্ত বাণিজ্য ও জলবায়ু পরিবর্তন প্রত্যাখ্যান করছে৷''
অপরদিকেমাক্রোঁ ইউরোপীয় ইউনিয়নেরঅভ্যন্তরে পপুলিজমের অভ্যুত্থানের কথা বলেন, যা ইটালি ও হাঙ্গেরির সাম্প্রতিক নির্বাচনের ফলাফলে প্রতিফলিত হয়েছে৷
বার্লিনের প্রতীক্ষা
মাস ছয়েক আগে মাক্রোঁ প্যারিসের সর্বন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদত্ত একটি ভাষণে ইউরোপ সম্পর্কে তাঁর পরিকল্পনা বিধৃত করেন এবং ইউরো এলাকার একটি যৌথ বাজেট ও একজন ইউরোপীয় অর্থমন্ত্রীর পদ সৃষ্টির কথা বলেন৷ তাঁর পরিকল্পনার অন্যান্য উপাদানের মধ্যে ছিল একটি রাজনৈতিক আশ্রয় প্রদান সংক্রান্ত যৌথ অধিকার, বিভিন্ন দেশের কর ব্যবস্থার মধ্যে সমন্বয় ও একটি ইউরোপীয় দ্রুত প্রতিক্রিয়া বাহিনী৷
কিন্তু মাক্রোঁ তাঁর এই পরিকল্পনা নিয়ে বেশিদূর অগ্রসর হতে পারেননি, কেননা, ইইউ-তে ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় সহযোগী জার্মানিতে তখন সরকার গঠন নিয়ে সুদীর্ঘ টানাপোড়েন চলেছে৷ বার্লিনে জোট সরকার দায়িত্ব নেবার পরেও মাক্রোঁর পরিকল্পনা সম্পর্কে উৎসাহের পরিবর্তে সতর্কতাই বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে৷
আগামী বৃহস্পতিবার বার্লিনে মাক্রোঁ-ম্যার্কেল সাক্ষাৎ হতে চলেছে৷ গতমাসে উভয় নেতা তাঁদের মতপার্থক্য দূর করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংস্কার সম্পর্কে জুন মাসের মধ্যে একটি রোডম্যাপ পেশ করার পরিকল্পনা করেন৷
এসি/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স, ডিপিএ)