ইউরোপ, অ্যামেরিকায় আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে
২১ অক্টোবর ২০১১জাতিসংঘের দেয়া তথ্য অনুযায়ী গত বছর, অর্থাৎ ২০১০ সালে ইউরোপ এবং অ্যামেরিকায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার মানুষ আশ্রয় চেয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আবেদন করেছিল৷ এ বছরের প্রথম ছয় মাসেই আবেদনপত্র জমা পড়েছে গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৭ শতাংশ বেশি৷ বিভিন্ন জরিপে জানা গেছে, জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত প্রায় দুই লক্ষ আবেদনপত্র হাতে পেয়েছে শিল্পোন্নত দেশগুলো৷
মধ্যপ্রাচ্যের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ফলেও আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে৷ মার্চ মাসে টিউনিশিয়া এবং লিবিয়া সঙ্কটের পর অনেকেই সেদেশগুলো থেকে নিরাপত্তার কারণে পাড়ি জমিয়েছে ইউরোপে৷ জাতিসংঘের শরণার্থী দপ্তরের কমিশনার এ্যান্টোনিও গুটেরেস সতর্ক করে দিয়ে বলেন, পরিস্থিতি চলে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রণের বাইরে৷ তিনি জানান, ‘‘টিউনিশিয়ার সীমান্তে প্রায় প্রতিদিনই ৪০ হাজার মানুষ অপেক্ষা করছে দেশ ছাড়ার জন্য – যেভাবেই হোক৷ টিউনিশিয়া পড়েছে বিপাকে৷ তারাও এই সমস্যা সামাল দিতে পারছে না৷ প্রতিদিন প্রায় দশ হাজারেরও বেশি মিশরীয় আসছে সেদেশে৷ এদেরও জায়গা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে টিউনিশিয়া৷ আমরা পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি, পুরো বিষয়টি এগিয়ে যাচ্ছে মানবিক সংকটের দিকে৷ এখনই যদি যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হয়, তাহলে এসব মানুষকে সাহায্য করা সম্ভব হবে না৷ আমাদের প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে সাহায্য এবং পূর্ণ সহযোগিতা৷''
আফ্রিকা থেকে আশ্রয়প্রার্থী এসেছে কম
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে এই সতর্কবাণীর পরও আশ্রয়প্রার্থীরা হু হু করে আসছে৷ তবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে যেভাবে আসবে আশঙ্কা করা হয়েছিল, ঠিক সেভাবে মানুষ আসছে না৷ মধ্যপ্রাচ্য ছাড়াও পশ্চিম আফ্রিকা থেকে মানুষ আশ্রয় চাইছে, তবে তাদের মধ্যে অনেকে আশেপাশের দেশগুলোতেও চলে যাচ্ছে৷ প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে ১৭ শতাংশ বেশি আশ্রয়প্রার্থীরা কোথা থেকে আসছে? জাতিসংঘের শরণার্থী এজেন্সির মুখপাত্র এ্যাড্রিয়ান এডওয়ার্ডস জানান, আরব দেশগুলোতে অভ্যুত্থান অথবা আফ্রিকার অন্যান্য দেশে সংকট – এগুলো মূল কারণ নয়৷ তাঁর কথায়, ‘‘আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা বেড়েছে অনেক বেশি সে বিষয়ে সন্দেহ নেই৷ তবে আমরা যেসব দেশগুলো থেকে আশা করেছিলাম, সেসব দেশ থেকে আবেদনকারীরা আসেনি৷ যে দেশগুলো আমাদের তালিকায় শীর্ষে ছিল, সে দেশগুলো থেকে আশ্রয়প্রার্থী এসেছে কম৷ উদাহরণস্বরূপ আইভরি কোস্টের সংকট অথবা সোমালিয়ায় সংকটের কথা বলা যেতে পারে৷ আমরা ধরে নিয়েছিলাম এরাই আসবে বেশি, অথচ তা হয়নি৷ সবচেয়ে বেশি আবেদনপত্র এসেছে আফগানিস্তান, ইরান, সার্বিয়া এবং কসোভো থেকে৷ এই দেশগুলোতে আমরা সংকট দেখেছি, মানুষ অন্যত্র চলে যাচ্ছে তাও জেনেছি৷ কিন্তু এর সঙ্গে আরব অভ্যুত্থান বা আফ্রিকার সমস্যা সম্পৃক্ত নয়৷''
আফগানিস্তান উদ্বেগের কারণ
নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে, আফগানিস্তান জাতিসংঘের জন্য উদ্বিগ্নের বেশ বড় একটি কারণ৷ দশ বছর আগে ন্যাটো বাহিনী দেশটিতে হামলা চালিয়েছিল৷ কিন্তু এখনো দেশটি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে৷ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে সাধারণ মানুষ৷ যেসব মানুষ একসময় আফগানিস্তান ছেড়ে চলে গিয়েছিল তারা ফিরে যেতে আগ্রহী নয়৷ এছাড়া হাজার মানুষ যে কোন মুহূর্তে আফগানিস্তান ছেড়ে যেতে প্রস্তুত৷ এ্যাড্রিয়ান এডওয়ার্ডস আরো বলেন, ‘‘আফগানিস্তানের পরিস্থিতি খুবই জটিল এবং চিন্তিত হবার মত বিষয়৷ নিরাপত্তার কারণেই আফগানরা সেখানে থাকতে চাইছে না৷ গত এক দশকে আমরা দেখেছি কয়েক লক্ষ মানুষ আশেপাশের দেশ থেকে আফগানিস্তানে ফিরে গেছে৷ কিন্তু গত দুই বছরে এদের সংখ্যা কমে গেছে অর্ধেকেরও বেশি৷ সেসব আফগান এখন নিজ দেশে ফিরে যেতে চাইছে না তারা আসতে চাইছে ইউরোপে৷''
অর্থাৎ আফগানিস্তানের পর সার্বিয়া, কসোভো, চীন এবং ইরাক থেকে আবেদনকারীরা ঝাঁকে ঝাঁকে আসছে ইউরোপের দিকে৷ তবে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি আবেদনপত্র হাতে পাচ্ছে তাদের মধ্যে অ্যামেরিকা রয়েছে শীর্ষে৷ এরপরই রয়েছে ফ্রান্স, জার্মানি, সুইডেন এবং ব্রিটেন৷ জাতিসংঘ আশঙ্কা করছে এ বছরের শেষে আবেদনকারীদের সংখ্যা হয়তো সাড়ে চার লক্ষের কাছাকাছি হবে৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন