আর্থিক সংস্কার
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১২জার্মানির প্রতি ব্যবসা-বাণিজ্য জগতের আস্থা আচমকা কিছুটা কমে যাওয়ার ফলে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে৷ অন্যদিকে খোদ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল মঙ্গলবার বলেছেন, ইউরো এলাকার কিছু দেশের ঋণ শোধ করার ক্ষমতা আছে কি না, তা নিয়েও পুঁজিবাজার উদ্বিগ্ন৷ তবে তাঁর মতে, পুঁজিবাজারে এই আস্থার অভাব সাময়িক নয়, লগ্নিকারীরা অদূর ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন৷ বার্লিনে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান মারিও দ্রাগি'র সঙ্গে আলোচনার পর দুই নেতাই অর্থনৈতিক সংস্কারের উপর জোর দিয়েছেন৷ তাঁদের মতে, একমাত্র এভাবেই আস্থা অর্জন করা সম্ভব৷
গত কয়েক সপ্তাহে বেশ কিছু ইতিবাচক সংকেতের পর আচমকা এমন অনিশ্চয়তার কারণ ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷ আসলে ইউরো এলাকার সংকট কাটাতে যে সব বাধা দূর হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছিল, তার মধ্যে কিছু বিষয় নিয়ে আবার নতুন করে অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছে৷
যেমন জনরোষের ফলে পিছু হঠছে কিছু দেশ৷ স্পেন আদৌ বেলআউট'এর আবেদন করবে কি না, তা স্পষ্ট নয়৷ ঋণের উপর সুদের হার বেড়ে চলেছে৷ স্পেনের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও উত্তাল হয়ে উঠেছে৷ বিশাল ঋণের ভারকে কেন্দ্র করে কাতালুনিয়া রাজ্যের সঙ্গে ফেডারেল সরকারের বিরোধ চরমে উঠেছে৷ এমনকি স্পেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের হুমকিও শোনা যাচ্ছে৷ একের পর এক সংকটের ফলে চাপের মুখে পড়ছেন প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাখই৷ এই অনিশ্চয়তা বাড়তি ঝুঁকির সৃষ্টি করছে৷
পর্তুগালের সরকার সোমবার জানিয়েছে, তারা ব্যয় সংকোচ নীতি নতুন করে খতিয়ে দেখবে৷ তবে একতরফাভাবে কোনো পরিবর্তন করা হবে না৷ এদিকে ইটালির উৎপাদনশীলতা কমে চলেছে৷ এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী মারিও মন্টি এই বাস্তব স্বীকার করে নিয়ে পরিস্থিতির উন্নতির আশ্বাস দিচ্ছেন৷ গ্রিসের পরিস্থিতি সম্পর্কে এই মুহূর্তে কোনো স্পষ্ট চিত্র নেই৷ আইএমএফ, ইসিবি ও ইউরোপীয় কমিশনের যৌথ রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে৷
অর্থাৎ লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যে বন্ড বাজারে ইসিবি'র হস্তক্ষেপের ঘোষণার ফলেও বাজার শান্ত হতে পারছে না৷ ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজনে যে কোনো মূল্যে রাষ্ট্রীয় বন্ড কেনার যে সিদ্ধান্তের ঘোষণা করেছে, এর মধ্যে তার পথে বাধার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে৷ প্রশ্ন উঠছে, ইসিবি'র আড়ালে ইউরো এলাকার সদস্য রাষ্ট্রগুলিই এই কাজ করছে কি না, যা বে-আইনি৷ এমন সিদ্ধান্তের আইনি বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ইউরোপীয় আদালতের কাছে অভিযোগ পেশ করা হতে পারে৷ সেক্ষেত্রে বন্ড কেনার সিদ্ধান্ত থমকে যেতে পারে৷
এমন বিলম্ব ঘটলে বা কিছু সিদ্ধান্ত কার্যকর করা সম্ভব না হলে ইউরো এলাকার সংকট আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ৷ আইএমএফ প্রধান ক্রিস্টিন লাগার্দ সম্প্রতি বলেছেন, বিশ্ব অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ইউরোপকে দ্রুত কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ যেমন দ্রুত ব্যাংকিং ইউনিয়ন কার্যকর করতে হবে, ইসিবি'র বন্ড কেনার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে হবে৷ তবে ব্যাংকিং ইউনিয়নের প্রশ্নে বিশেষ করে জার্মানি আরও সময় চাইছে৷ মোটকথা অস্পষ্টতা কাটিয়ে ইউরোপীয় নেতারা বিনা বাধায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলি গ্রহণ করবেন, সেগুলি কার্যকর করবেন, আইনি বাধা দূর হবে, এমন স্থায়িত্বের স্বপ্ন দেখছে গোটা বিশ্ব৷
এসবি/ডিজি (এএফপি, রয়টার্স)