ইউরোপেও প্রশ্নবিদ্ধ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা
বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স৷ সাংবাদিকদের সব সময় ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয় এমন দেশগুলোর উল্লেখ তো আছেই, সঙ্গে মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য প্রশংসিত ইউরোপের সমালোচনাও রয়েছে প্রতিবেদনে৷
সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় ‘জেলখানা’ তুরস্ক
কোন দেশে গণমাধ্যম কতটা স্বাধীন বা পরাধীন, তা মূল্যায়ন করে প্রকাশিত এ বার্ষিক প্রতিবেদনে তুরস্ককে উল্লেখ করা হয়েছে ‘সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় জেল’ হিসেবে৷ ২০১৬ সালের কথিত ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর থেকে সে দেশে অনেক সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করেছে এর্দোয়ান সরকার৷ প্রতিবেদনে তুরস্ক আছে ১৫৭ নম্বরে৷
গণমাধ্যমের ‘শত্রু’ ট্রাম্প
ট্রাম্পের আমলে যুক্তরাষ্ট্রে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্রমাগত প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বলে মনে করে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স৷ ট্রাম্পকে প্রায়ই মিডিয়ার বিরুদ্ধে আপত্তিকর কথা বলতে শোনা যায়৷ গণমাধ্যমকে ‘জনগণের শত্রু’ বলে বিষোদগার করতেও দেখা গেছে তাঁকে৷ তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ৪৫তম স্থানে৷
রাশিয়া এবং চীনে গণমাধ্যমের দুরবস্থা
রাশিয়া, চীন এবং উত্তর কোরিয়ারও সমালোচনা করেছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স৷ প্রতিবেদনে বলা হয়, পুটিন ক্রেমলিনে ফেরার পর থেকে নানাভাবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে৷ সাংবাদিকরা গ্রেপ্তার হচ্ছেন৷ সাম্প্রতিক সময়ে অন্তত ৫০ জন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করার কথা উল্লেখ করে চীনেরও সমালোচনা করেছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স৷ তালিকায় রাশিয়ার অবস্থান ১৪৮, চীন তার অনেক নীচে ১৭৬তম স্থানে৷
সেরা দশে এখনো ইউরোপের প্রাধান্য
গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য ইউরোপ সবসময়ই প্রশংসিত৷ এবারও সেরা দশে ইউরোপেরই প্রাধান্য৷ তাই প্রথম থেকে পঞ্চম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে নরওয়ে, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, ফিনল্যান্ড এবং সুইজারল্যান্ড৷ তারপর সপ্তম ও নবম স্থানেও ইউরোপের দুই দেশ বেলজিয়াম ও ডেনমার্ক৷ সবাইকে অবাক করে সেরা দশের ষষ্ঠ স্থানে ঢুকে পড়েছে ক্যারিবীয় দেশ জ্যামাইকা৷ নবম স্থানে রয়েছে নিউজিল্যান্ড৷
ইউরোপের কলঙ্ক?
ইউরোপের কয়েকটি দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ভয়ানকভাবে খর্ব হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স৷ গাড়িবোমা বিস্ফোরণে সাংবাদিক, ব্লগার ডাফনে কারুয়ানা গালিজিয়া নিহত হওয়ার পর ১৮ ধাপ পিছিয়ে ৬৫ নম্বরে নেমে গেছে মাল্টা৷ স্লোভাকিয়াতেও এক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন৷ তাই সেই দেশ ১০ ধাপ পিছিয়ে ২৭-এ৷ সাংবাদিকদের ‘স্লোভাকবিরোধী নোংরা বেশ্যা’ বলেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো৷
সবচেয়ে খারাপ কারা?
১৮০টি দেশকে নিয়ে তৈরি করা তালিকার শেষ দশে ইউরোপের কোনো দেশ নেই৷ সেখানে ১৭১তম দেশ ইকোয়েটোরিয়াল গিনি৷ তারপর থেকে ১৮০তম স্থান পর্যন্ত যথাক্রমে রয়েছে কিউবা, জিবুতি, সুদান, ভিয়েতনাম, চীন, সিরিয়া, তুরস্ক, ইরিত্রিয়া এবং উত্তর কোরিয়া৷
এবং বাংলাদেশ
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে অন্তত ২৫ জন সাংবাদিক ও কয়েকশ’ ব্লগার এবং ফেসবুক ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে আইসিটি অ্যাক্টে মামলা হয়েছে৷ দেশে সংবিধান এবং ইসলামের সমালোচনা করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে আরো বলা হয়, বাংলাদেশে প্রায়ই স্পষ্টবাদী ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তি, সাংবাদিক এবং ব্লগারদের অনলাইনে হত্যার আহ্বান জানায় ইসলামী জঙ্গিরা৷ সূচকে এবার বাংলাদেশের অবস্থান আগের বছরের মতোই আছে, ১৪৬৷
এসিবি/জেডএইচ (এএফপি, রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স)