ইউক্রেনের নারীর মুখে অত্যাচারের কাহিনি
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২গত ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেন আক্রমণ করে প্রথমেই খারকিভ অঞ্চল দখল করে নিয়েছিল রাশিয়া। বস্তুত, তাদের সেখানে সাহায্য করেছিল রাশিয়াপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। সেপ্টেম্বরে ফের ওই অঞ্চল ইউক্রেন পুনর্দখল করেছে। গত ছয়মাস রাশিয়া সেখানে কীভাবে অত্যাচার চালিয়েছে, তা প্রকাশ পাচ্ছে।
বালাকলিয়ায় মারিনা নয়দিন জেলে ছিলেন
খারকিভেরইএকটি শহরের নাম বালাকলিয়া। মারিনা এবং তার স্বামী সেখানেই থাকেন। রাশিয়া যখন আক্রমণ করে, তারা তখন পালানোর কথা ভাবতে পারেননি। কারণ স্ট্রোক হওয়ার কারণে তার মা চলতে পারেন না। ফলে বালাকলিয়াতেই থেকে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন তারা।
মারিনার কথায়, খারকিভ অঞ্চলে রাশিয়াপন্থি অনেকেই আছেন। রাশিয়া আক্রমণ চালানোয় তারা খুশি। আবার তার মতো ইউক্রেনপন্থিও অনেকে আছেন। প্রথম থেকেই যাদের সন্দেহের চোখে দেখা হতো। বস্তুত, রাশিয়াপন্থিরা রাশিয়ার সেনা এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ইউক্রেনপন্থিদের পরিচয় ফাঁস করে দিয়েছিল। চিনিয়ে দিয়েছিল, কারা ইউক্রেনের হয়ে লড়াই করেছে। গোটা পরিস্থিতি স্ট্যালিনের আমলের মতো হয়ে গেছিল। খারকিভ ফিরে গেছিল ১৯৩০ এর দশকে।
রাশিয়ার সেনা শহরে ঢোকার পরে শুরু হয় লুঠতরাজ। রাস্তায় যখন তখন গাড়ি থামিয়ে সেই গাড়ি নিয়ে নিতে শুরু করে রাশিয়ার সেনা। বাড়ি থেকেও গাড়ি, বাইক চুরি হতে শুরু করে। যখন তখন সেনা বাড়িতে ঢুকে তল্লাশি চালাতে শুরু করে। মারিনার এক বন্ধুর বাড়িতে ঢুকে তার সেলফোন পরীক্ষা করা হয়। সেখানে যুদ্ধের সময় রাশিয়ার সেনার ছবি ছিল। শুধুমাত্র সেই কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মারিনার কাছেও ওই ধরনের ছবি ছিল।
পরিস্থিতি যখন এমন, মারিনা এবং তার স্বামী ঠিক করেন, রাশিয়ার ভিতর দিয়ে তারা পালিয়ে যাবেন। কারণ, ইউক্রেনের দিকে পালানো সম্ভব নয়। বিষয়টি নিয়ে তারা প্রতিবেশীদের সঙ্গেও আলোচনা করেন। খবর পৌঁছে যায় সেনার কানে। ছয়জন মুখোশ পরা ব্যক্তি আচমকাই তাদের তুলে নিয়ে যায় থানায়। সেখানে তাদের মাথার উপর ব্যাগ চাপিয়ে দেওয়া হয়। সেভাবেই বসে থাকতে হয় অনেকক্ষণ। শেষ পর্যন্ত একটি সাত ফুট বাই সাত ফুটের সেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় মারিনাকে। আগামী নয়দিন সেখানেই থাকতে হবে মারিনাকে। ছোট্ট ওই কুঠুরিতে একসঙ্গে থাকতে হয়েছে আটজন মেয়েকে। যার মধ্যে এক ৭০ বছরের বৃদ্ধাও ছিলেন।
এক রাতে ওই বৃদ্ধার বুকে ব্যথা শুরু হয়। অনেক ডেকেও কাউকে পাওয়া যায়নি। পরদিন সকালে থানার লোকেরা অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে আসে। দুইবেলার খাবারে দেওয়া হতো প্রায় পচে যাওয়া ভাত এবং টিনের মাংস। প্রথম দিন খেতে পারেননি মারিনা। পরে খেতে বাধ্য হয়েছেন।
প্রথম আটদিন সেই অর্থে অত্যাচার হয়নি। যদিও ওই কুঠুরিতে কাটানোই একরকমের অত্যাচার। নবম দিন তাকে নিয়ে যাওয়া হয় জেরার ঘরে। নিলডাউন করে বসিয়ে তার হাত পিছমোড়া করে দেওয়া হয়। মুখোশ পরা ব্যক্তিরা এরপর তাকে তার কাজ নিয়ে প্রশ্ন করতে থাকে। তার পায়ে এবং হাতে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়।
মারিনা পরে শুনেছেন, তার স্বামীর উপরেও একইরকম অত্যাচার চালানো হয়েছে। নবম দিনেই অবশ্য ফের সেল থেকে ডেকে পাঠানো হয় মারিনাকে। বাইরে বেরিয়ে তিনি দেখেন তাকে এবং তার স্বামীকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। বিস্মিত হয়েছিলেন মারিনা। পরে জানতে পারেন, পুলিশ স্টেশনে এসে নিজের সমস্ত সোনার গয়না দিয়ে দিয়েছেন তার বোন। তারই বিনিময়ে তাদের মুক্তি হয়েছে।
আনাসতাসিয়া শেপেলেভা/এসজি