ইউক্রেনে আটকে কলকাতার বহু ছাত্রছাত্রী, উদ্ধারে বিমানবাহিনী
১ মার্চ ২০২২বাঙ্কারে বসে আছেন কলকাতার দেবারতি দাস। খারকিভ ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী দেবারতি এখনো দেশে ফিরতে পারেননি। ভিডিও কলে বাবা-মাকে তিনি জানিয়েছেন, লড়াই শুরু হওয়ার পর তাদের হস্টেল থেকে বাঙ্কারে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এখন সেখানেই দিন কাটছে তাদের। লাগাতার বিস্ফোরণ আর গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে বাইরে। খাওয়ার জল, শুকনো খাবার ক্রমশ কমে আসছে। কিন্তু কোনোভাবেই বাঙ্কারের বাইরে বেরনোর সাহস পাচ্ছেন না তারা।
দেবারতি একা নন। ইউক্রেনে এভাবেই এখনো আটকে আছে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক ছাত্রছাত্রী। তেমনই আরেক ডাক্তারির ছাত্রী তিয়াসা বিশ্বাস। বারাসতের তিয়াসা পড়েন ইউক্রেনের লভিভ ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে। তার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, কার্যত নাওয়া-খাওয়া ভুলে মেয়ের ফোনের অপেক্ষায় বসে আছেন বাবা-মা। তিয়াসাকে সবসময় ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তিয়াসা জানিয়েছেন, ভারতীয় রেসকিউ মিশনের ফ্লাইট ধরার চেষ্টা করছেন তিনি।
ইউক্রেনের আকাশপথ বন্ধ করে রেখেছে সে দেশের সরকার। ফলে ভারতীয় বিমান রোমানিয়ায় গিয়ে নামছে। ছাত্রছাত্রীদের সীমান্ত পার করে রোমানিয়া যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশ মেনে টারনোপিল মেডিক্যাল কলেজে ছাত্র পুষ্পক স্বর্ণকার সীমান্ত পর্যন্ত গিয়েছিলেন। বাড়িতে তিনি জানিয়েছেন, প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সীমান্তে পৌঁছেছিলেন তিনি। কিন্তু সীমান্ত বন্ধ থাকার কারণে রোমানিয়ায় পৌঁছাতে পারেননি তিনি। এখনো প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সীমান্তে অপেক্ষা করছেন পুষ্পক।
এমন আরো হাজার হাজার ভারতীয় ছাত্রছাত্রী আটকে আছেন ইউক্রেনে। অনেকেরই অভিযোগ, ভারতীয় বিদেশমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তারা যোগাযোগই করতে পারছেন না। এর আগে ভারতীয় প্রশাসন জানিয়েছিল, সমস্ত ছাত্রছাত্রী যেন কিয়েভে চলে আসার চেষ্টা করেন। মঙ্গলবার দুপুরে ফের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সকলে যেন কিয়েভ থেকে দ্রুত পালানোর চেষ্টা করেন। যে কোনো উপায়ে তাদের রোমানিয়ায় পৌঁছাতেই হবে।
শুধু তা-ই নয়, ছাত্রছাত্রীদের উদ্ধারের জন্য এবার ভারতীয় বিমানবাহিনীকে পাঠানোর সিদ্ধান্তও নিয়েছে সরকার। এতদিন এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান পাঠিয়ে উদ্ধারের চেষ্টা চলছিল। মঙ্গলবার দুপুরে বিমানবাহিনীকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, সব মিলিয়ে ২০ হাজারেরও বেশি ভারতীয় নাগরিক ইউক্রেনে আটকে আছেন। বহু নাগরিক বিদেশ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। কিন্তু সকলকে রোমানিয়ায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা এখনো করা যায়নি।