ভারি অস্ত্র সরবরাহের প্রশ্নে এখনো দ্বিধায় জার্মানি
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২দেশে-বিদেশে প্রবল চাপ সত্ত্বেও ইউক্রেনকে ব্যাটল ট্যাংক সরবরাহের প্রশ্নে এখনো অবিচল রয়েছেন চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস৷ এমন পদক্ষেপ জার্মানির জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, সে বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত না হয়ে তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে নারাজ৷ ইউক্রেনকে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম পাঠানোর ক্ষেত্রে সহযোগী দেশগুলির সঙ্গে সমন্বয় করে ‘ঠাণ্ডা মাথায়' পদক্ষেপ নেবার পক্ষে সওয়াল করছেন জার্মান চ্যান্সেলর৷ জার্মানির এক বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে শলৎস এ ক্ষেত্রে ‘একলা চলো রে' নীতির সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন৷
বর্তমান বিতর্কের প্রেক্ষাপটে চ্যান্সেলর শলৎস আবার মনে করিয়ে দেন, যে জার্মানি ইতোমধ্যে ইউক্রেনকে যে সব অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে, রুশ হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর বর্তমান সাফল্যের পেছনে সেগুলিরও বড় ভূমিকা রয়েছে৷ বিশেষ করে আকাশসীমা ও ট্যাংকের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ইউক্রেনকে শক্তিশালী করে তুলেছে৷ জার্মানির সরবরাহ করা আর্টিলারি দিয়েও দূরের লক্ষ্যবস্তুর উপর হামলা করা সহজ হচ্ছে৷ তাই এমন সামরিক সহায়তা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে সওয়াল করেন তিনি৷
কিন্তু ইউক্রেন এবার জার্মানির কাছ থেকে ব্যাটেল ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান চাওয়ার ফলে জটিলতা দেখা দিচ্ছে৷ রুশ বাহিনীর দখল থেকে এলাকা উদ্ধারের পর সেখানকার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এমন সরঞ্জাম জরুরি বলে কিয়েভ দাবি করছে৷ এখনো পর্যন্ত ন্যাটো-ভুক্ত কোনো দেশ ইউক্রেনকে এখনো পশ্চিমা বিশ্বে তৈরি এমন ট্যাংক সরবরাহ করে নি৷ কারণ এমন ট্যাংক শত্রুর বিরুদ্ধে সরাসরি সংগ্রামের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে৷ ‘আত্মরক্ষামূলক' সামরিক সহায়তার সীমা অতিক্রম করে ইউক্রেনের হাতে ‘আক্রমণাত্মক' সরঞ্জাম কুলে দিতে দ্বিধা করছে অ্যামেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্ব৷ ফলে জার্মানির একক পদক্ষেপ একেবারেই কাম্য নয় বলে মনে করেন ওলাফ শলৎস৷ তিনি এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে সরাসরি সংঘাতের আশঙ্কা সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন৷
শলৎসের এই অবস্থানের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন সরকারের শরিক সবুজ দলের নেতা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক৷ তিনিও সহযোগীদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে ইউক্রেনকে ব্যাটেল ট্যাংক পাঠানোর পক্ষে সওয়াল করেছেন৷ এ প্রসঙ্গে বেয়ারবক মনে করিয়ে দেন, যে জার্মানি এ যাবৎ অন্যান্য সহযোগীদের সঙ্গে শলাপরামর্শ করেই ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা করে এসেছে৷ তবে তিনি সম্প্রতি এই সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে আর বিলম্ব না করার জন্য জোর দিচ্ছেন৷
রুশ বাহিনীর হাত থেকে অনেক এলাকা পুনরুদ্ধার করার পর সেখানে নিপীড়নের চিহ্ন ও গণকবর আবিষ্কারের পর জার্মানি অনেক মহল অবিলম্বে ইউক্রেনকে ভারি অস্ত্র দেবার পক্ষে সওয়াল করছে৷ এমনকি সরকারের তৃতীয় শরিক এফডিপি দলও এ ক্ষেত্রে অন্যান্য ন্যাটো সহযোগীদের জন্য অপেক্ষা না করে ‘সাহসি' পদক্ষেপের দাবি করছে৷ দলের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত এক নেতা ইউক্রেনের আত্মরক্ষা ও অধিকৃত এলাকার উপর আবার নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে সামরিক অভিযানকে আন্তর্জাতিক আইনসিদ্ধ বলে বর্ণনা করে সামরিক সহায়তার ক্ষেত্রে জার্মানির নেতৃত্বের দাবি করেছেন৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, রয়টার্স)