ইউক্রেন সংকটের বলি হতে পারে মহাকাশ স্টেশন
৩১ মে ২০২২আইএসএস-এর মাধ্যাকর্ষণহীন পরিবেশে মহাকাশচারীরা শাকসবজি চাষ করেন, ক্যানসারের চিকিৎসা পদ্ধতি পরীক্ষা করেন৷ উপর থেকে তারা পৃথিবীতে জলবায়ু পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করেন৷ সেইসঙ্গে হাইটেক উপাদানও পরীক্ষা করেন, যেগুলি হয়তো কোনোদিন চাঁদের উপর স্টেশন তৈরির প্রচেষ্টা সম্ভব করবে৷
তবে স্পেস স্টেশনে থাকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো পৃথিবীর দৃশ্য দেখার সুযোগ৷ জার্মানির মহাকাশচারী আলেক্সান্ডার গেয়ার্স্ট একবার বলেছিলেন, ‘‘জানালা দিয়ে পৃথিবীর অসাধারণ সুন্দর দৃশ্যের অভাব অবশ্যই অনুভব করবো৷ কক্ষপথ থেকে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত সত্যি অনবদ্য৷ অনেকবার দেখলেও প্রতিবার চোখে পানি চলে আসে৷''
আরও কত মহাকাশচারী আইএসএস থেকে সেই দৃশ্য দেখতে পাবেন, তা স্পষ্ট নয়৷ কারণ মডিউলগুলি পুরানো হয়ে গেছে৷ এখনই ঘনঘন বিকল হয়ে যাচ্ছে৷ তাছাড়া এই স্টেশন চালানোর খরচ অত্যন্ত বেশি৷ তাছাড়া আন্তর্জাতিক সহযোগীদের মধ্যে চুক্তির মেয়াদ ২০২৪ সালে শেষ হচ্ছে৷ এসা ও নাসা চুক্তির মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়াতে চায়৷
কিন্তু ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলার ফলে উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার মহাকাশ কর্মসূচির উপরেও প্রভাব পড়ছে৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়ার উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা চাপাতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘‘আমরা রাশিয়ার হাইটেক আমদানির প্রায় অর্ধেক বিচ্ছিন্ন করে দেবো বলে আমাদের অনুমান৷ সেনাবাহিনীর আধুনীকিকরনের ক্ষমতার উপর আমরা আঘাত করবো৷ এর ফলে মহাকাশ কর্মসূচিসহ তাদের এয়ারোস্পেস শিল্পের মান কমে যাবে৷''
প্রতিক্রিয়া হিসেবে রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থা রসকসমস আইএসএস-এ সহযোগিতার সমাপ্তি এবং স্টেশনের রুশ অংশটি বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দিয়েছে৷ সংস্থার প্রধান দিমিত্রি রোগোসিন এক টুইট বার্তায় মনে করিয়ে দিয়েছেন, যে পশ্চিমা বিশ্ব এ ক্ষেত্রে রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল৷ কারণ রাশিয়ার মহাকাশ যানগুলি নিয়মিত আইএসএস-কে নির্ধারিত কক্ষপথে ফিরিয়ে আনে৷ গ্যাসের অণুর সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে সেটি প্রতিদিন ৭০ মিটার করে উচ্চতা হারায় বলে এমনটা করা জরুরি৷
অন্যদিকে আবার রসকসমসও নাসার উপর নির্ভরশীল৷ বিদ্যুতের সিংহভাগই মার্কিন মডিউল থেকে আসে৷ নাসার ক্যাথি লুয়েডার্স বলেন, ‘‘আমাদের পক্ষে একা সেটি চালানো অত্যন্ত কঠিন হবে৷ আইএসএস এক আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ফসল৷ পারস্পরিক নির্ভরতার ভিত্তিতেই সেটি সৃষ্টি করা হয়েছিল৷ সে কারণেই এটি অসাধারণ এক কর্মসূচি৷''
পশ্চিমা বিশ্বের মহাকাশ সংস্থাগুলি বেশ কিছুকাল ধরেই রাশিয়ার উপর নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ বেসরকারি সংস্থাগুলিও এই ব্যবসায় অংশ নিচ্ছে৷ বেসরকারি উদ্যোগেই মানুষ ও রসদ মহাকাশে পাঠানো হচ্ছে এবং কক্ষপথ থেকে আইএসএস-এর বিচ্যুতি সংশোধনের চেষ্টা চলছে৷
কিন্তু তার জন্য আরও সময় লাগবে৷ তাই আইএসএস অক্ষত রাখতে হলে আপাতত রাশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্বের সামনে সহযোগিতা চালিয়ে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই৷
মিশায়েল হার্টলেপ/এসবি