ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝে রাশিয়াকে অস্ত্র দেবে চীন?
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগেই রাশিয়া ও চীন ‘সীমাহীন' বন্ধুত্বের অঙ্গীকার করেছিল৷ ইউক্রেনের উপর হামলা সত্ত্বেও মস্কোর নিন্দা করে নি বেইজিং৷ উলটে ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহের জন্য পশ্চিমা বিশ্বের সমালোচনা করে আসছে চীন৷ তবে নৈতিক সমর্থন সত্ত্বেও যুদ্ধের সময়ে রাশিয়াকে সামরিক সহায়তা দেয়নি বেইজিং৷ সপ্তাহান্তে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে ইউক্রেন সংকট মেটাতে চীনের কূটনৈতিক উদ্যোগের পূর্বাভাস দিয়েছেন সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই৷ উল্লেখ্য, রাশিয়ার উপর প্রভাব কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন মহল চীনকে ইউক্রেন সংকট অবসানের প্রচেষ্টার অনুরোধ করে এসেছে৷
চীনের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানানোর বদলে সে দেশের ‘আসল উদ্দেশ্য' সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছে অ্যামেরিকা৷ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, চীন রাশিয়াকে ‘লিথাল অ্যাসিস্টেন্স' বা প্রাণঘাতি অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি বিবেচনা করছে৷ এমন সন্দেহের কারণ অবশ্য প্রকাশ্যে উল্লেখ করেন নি তিনি৷ অ্যামেরিকার এনবিএস নেটওয়ার্ককে ব্লিংকেন আরও বলেন, যুদ্ধ শুরু হবার পর চীন এখনো পর্যন্ত রাশিয়াকে এমন অস্ত্র সরবরাহ করে নি বলে ওয়াশিংটন মনে করে৷ বেইজিং এবার সত্যি এমন পদক্ষেপ নিলে চীন ও অ্যামেরিকার সম্পর্কে কঠিন সমস্যা দেখা যাবে বলে তিনি চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সতর্ক করে দিয়েছেন৷
অ্যামেরিকার আকাশে চীনা ‘গুপ্তচর' বেলুন ধ্বংসের জের ধরে বেইজিং সফর বাতিল করার পর ব্লিংকেন মিউনিখে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন৷ অ্যামেরিকার রিপাব্লিকান দলের প্রভাবশালী সেনেটন লিন্ডসে গ্রাহাম মিউনিখে বলেন, চীন সত্যি এমন পদক্ষেপ নিলে সেটা সত্যি অত্যন্ত বোকামির পরিচয় হবে৷ তাঁর মতে, সেটা হবে টাইটানিক চলচ্চিত্র দেখার পর সেই জাহাজের টিকিট কাটার মতো আচরণ৷ জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূতও রাশিয়াকে সতর্ক করে দিয়েছেন৷
বিনা প্ররোচনায় আক্রান্ত দেশ হিসেবে ইউক্রেন পশ্চিমা বিশ্ব থেকে লাগাতার অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সামরিক সরঞ্জাম পেয়ে আসছে৷ অ্যামেরিকা ও ব্রিটেনের মতো দেশের গোয়েন্দা সংস্থা সে দেশকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে সহায়তা করছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউক্রেনে গোলাবারুদের অভাব মেটাতে দ্রুত উৎপাদনের উদ্যোগ নিচ্ছে৷ অন্যদিকে রাশিয়ার সামরিক সরঞ্জাম ও গোলাবারুদ কমে আসছে৷ ইরান ও উত্তর কোরিয়ার মতো দেশ থেকে ড্রোনসহ কিছু সরঞ্জাম পেলেও চীন এতকাল রাশিয়াকে সামরিক সহায়তা করে নি৷ সেই নীতির পরিবর্তন ঘটলে পশ্চিমা বিশ্বে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷
মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউরোপের সঙ্গে শিল্প-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আরও নিবিড় সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন৷ করোনা সংকট ও ইউক্রেন যুদ্ধের কালো ছায়া কাটিয়ে তুলে আবার আগের মতো পণ্য ও পরিষেবার আদানপ্রদান চালু করে নিজস্ব অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তুলতে চায় চীন৷ কিন্তু ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের সময় রাশিয়াকে সামরিক মদত দিলে সেই সম্ভাবনা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে৷ এমনকি সে ক্ষেত্রে চীনের বিরুদ্ধে পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, এএফপি)