রাশিয়া ও ইউক্রেনের অর্থোডক্স চার্চ বিপরীত অবস্থানে
১০ মার্চ ২০২২রাশিয়ার অর্থোডক্স গির্জার প্রধান প্যাট্রিয়ার্চ কিরিল ভ্লাদিমির পুটিনের ইউক্রেন নীতিকে পুরোপুরি সমর্থন জানিয়েছেন৷ মস্কোয় তিনি ইতিমধ্যে বলেছেন, রাশিয়ার ইউক্রেন অভিযান আসলে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে যৌক্তিক প্রতিরোধ৷ পুটিন যেমন ইউক্রেন হামলাকে ‘যুদ্ধ' না বলে ‘বিশেষ অভিযান' বলছেন, প্যাট্রিয়ার্চ কিরিল ঠিক তা না বললেও ইউক্রেনে যা ঘটছে তাকে ‘ঘটনা', ‘সামরিক ব্যবস্থা' ইত্যাদি হিসেবে আখ্যায়িত করে পুটিনের মতো ‘নরম শব্দ' ব্যবহারের কৌশলই গ্রহণ করেছেন৷
অথচ ইউক্রেনের অর্থোডক্স চার্চগুলো শুরু থেকেই রুশ বাহিনীর হামলাকে যু্দ্ধ হিসেবে আখ্যায়িত করে অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানিযে আসছে৷
ম্যুনস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকুমেনসিয়াল থিওলজি, ইউরোপিয়ান চার্চ স্টাডিজ অ্যান্ড পিস রিসার্চের অধ্যাপক টোমাস ব্রেমার রাশিয়ার অর্থোডক্স চার্চ প্রধানের বক্তব্য শুনে বিস্মিত এবং হতাশ৷ তার মতে, প্যাট্রিয়ার্চ কিরিল এর আগে কোনো যুদ্ধ নিয়ে কোনো কথা না বললেও ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে নিজের মতামত তাড়াতাড়িই ব্যক্ত করেছেন৷
ইউক্রেনে দুটি অর্থোডক্স চার্চ রয়েছে৷ একটির নাম ইন্ডিপেন্ডেন্ট অর্থোডক্স চার্চ অব ইউক্রেন, সংক্ষেপে ওকেইউ্ বা ওকু৷ মেট্রোপোলিটান এপিফানিউসের নেতৃত্বাধীন এই চার্চ বার্থোলোমেও-র স্বীকৃতি পেয়েছে৷ এই স্বীকৃতি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ, ধারণা করা হয়, বার্থোলোমেও-কে আধ্যাত্মিক নেতা মানেন বিশ্বের প্রায় ২৬ কোটি অর্থোডক্স খ্রিস্টান৷
ইউক্রেনের দ্বিতীয় অর্থোডক্স গির্জাটির নাম ইউক্রেনিয়ান অর্থোডক্স চার্চ, সংক্ষেপে ইউওকে বা উয়ক৷স্বায়ত্বশাসিত এই গির্জা বস্তুতপক্ষে রাশিয়ার অর্থোডক্স গির্জারই অনুসারী৷ এই গির্জার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, এর আগে কখনো তারা রাজনৈতিক কোনো বিষয়ে নিজস্ব অভিমত ব্যক্ত করেনি৷ তবে ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতেই এ নিয়ম থেকে সরে এসেছে তারা৷
ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে টোমাস ব্রেমার জানান, রাশিয়া ইউক্রেনে যেদিন হামলা শুরু করল সেদিনই হামলাকে ‘যুদ্ধ' হিসেবে উল্লেখ করে তীব্র নিন্দা জানায় ইউক্রেনের দুই অর্থোডক্স চার্চ৷ ম্যুনস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অবশ্য শুধু ইউক্রেনিয়ান অর্থোডক্স চার্চের প্রতিক্রিয়ায় বেশি বিস্মিত হয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ ইউক্রেনিয়ান অর্থোডক্স চার্চ মস্কোর অর্থোডক্স চার্চের প্রধানকে অনুরোধ জানিয়েছে, তিনি যেন পুটিনের ওপর তার প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে শান্তি স্থাপনের চেষ্টা করেন৷ রাশিয়ার গণমাধ্যম অবশ্য তা প্রচার করেনি৷''
ব্রেমারের মতে, মস্কোর অর্থোডক্স চার্চের প্রধান পুটিনের নীতিকে সমর্থন জানিয়ে শান্তির পক্ষে সরাসরি কথা না বলায় ইউক্রেনিয়ান অর্থোডক্স চার্চ (ইউওকে)-এর অনেক বিশপই মনোক্ষুন্ন৷ এ কারণে রীতি ভেঙে প্রার্থনার সময় রুশ অর্থোডক্স চার্চের প্রধানের নাম উল্লেখ করাও বন্ধ রেখেছেন তারা৷
তিনি দাবি করেন, শুধু ইউক্রেনিয়ান অর্থোডক্স চার্চ নয়, রাশিয়ার অনেক ধর্মযাজক এবং পুরোহিতও বিষয়টিকে ভালোভাবে নেননি৷তিনি জানান, চলতি মার্চ মাসে রাশিয়ার এক দল ধর্মযাজক এবং পুরোহিত যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তি স্থাপনের দাবি জানিয়ে খোলা চিঠি লিখেছেন৷ খোলা চিঠিতে এ পর্যন্ত মোট ২৮৬ জন স্বাক্ষর করেছেন বলেও জানিয়েছেন অধ্যাপক ব্রেমার৷
ক্রিস্টিন লেনেন/ এসিবি