ইউক্রেন থেকে পালানো কিশোর-কিশোরীদের জীবন
দু’বছর আগেও তাদের জীবনে ছিল স্বাভাবিক একটা ছন্দ, অথচ যুদ্ধ তাদের বাধ্য করেছে দেশান্তরী হতে, কম বয়সি নতুন এক সংগ্রামের জীবন মেনে নিতে৷ পোল্যান্ডে কীভাবে দিন কাটান ইউক্রেনের কিশোর-কিশোরীদের, দেখুন ছবিঘরে...
নতুন জীবনের খোঁজ
১৫ বছর বয়সি আন্দ্রি ননকা পোল্যান্ডের গডানস্ক শহরে আসে মায়ের সাথে৷ মাঝেমাঝেই তার ইচ্ছা করে ছুটে পাশের দেশে গিয়ে বাবা বা বন্ধুদের সাথে দেখা করতে৷ পোল্যান্ডে একটি বক্সিং ক্লাসে যোগ দেবার পর কিছু বন্ধু হয়েছে তার৷ আন্দ্রির স্বপ্ন, যত দ্রুত সম্ভব চাকরি জুটিয়ে পরিবারকে সাহায্য করা৷ তার বক্তব্য, ‘‘এই যুদ্ধ আমাকে বড় করে দিয়েছে৷ এখন আমি জানিনা আমার ঘর কোথায়৷ কিন্তু আমার দেশ তো ইউক্রেনই৷’’
পোল্যান্ডে ইউক্রেনীয় শরণার্থী
১৭ বছরের দারিয়া ভিনোহরাদোভার মতো আরো অনেক ইউক্রেনিয়ান তরুণরা আসেন গডানস্কের ‘ব্লু ট্রেনার্স’ সামাজিক সংস্থায়৷ বিদেশি নাগরিকদের তথ্য সম্বন্ধিত বিভাগ বলছে, পোল্যান্ডে আছেন প্রায় এক লাখ ৬৫ হাজার ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সি ইউক্রেনিয়ান শরণার্থী৷ এদের মধ্যে কেউ কেউ এই ব্লু ট্রেনার্সে এসে বোর্ড গেম খেলেন, বিলিয়ার্ড বা টেবিল টেনিস খেলেন৷
দারিয়া ও ডিমিট্রো
দারিয়ার প্রেমিক ১৮ বছর বয়সি ডিমিট্রো৷ ব্লু ট্রেনার্সে তিনিও আসেন দারিয়ার সাতে মাঝে মাঝে৷ সেখানে বাকিদের সাথে দলবদ্ধ হয়ে খেলেন তারা, বা কখনো স্রেফ দুজনে একা বসে ভিডিও গেমও খেলতে পছন্দ করেন তারা৷ এই ব্লু ট্রেনার্সে অন্যান্য পোলিশ ও ইউক্রেনিয়ান তরুণদের সাথে বন্ধুত্ব হয় তাদের৷
বহু দেশ ঘুরে অবশেষে...
মারহারিতা চিকালোভার বয়স ১৬৷ ২০২২ সালের এপ্রিলে মায়ের সাথে নিজের শহর খেরসন ছাড়েন তিনি৷ প্রথমে নিজের ঘরের বেসমেন্টে লুকিয়ে থাকলেও পরে শহর ছাড়তে বাধ্য হন তারা৷ সেখান থেকে পালিয়ে প্রথমে মলডোভা, তারপর রোমানিয়া হয় অবশেষে পোল্যান্ডের গডিনিয়া শহরে আসা৷
মারহারিতার ঘর, বাসা...
২০২২ সালের ডিসেম্বরে মারহারিতা ও তার পরিবার হাতে পান খেরসনের বাসা বোমায় উড়ে যাবার ছবি৷ মারহারিতা বলেন, ‘‘আমি কাঁদতে শুরু করে দিলাম, কারণ সেই মুহূর্তে বুছেছিলাম যে, আমার যা কিছু ছিল, সব শেষ৷ সব কিছু শেষ, বাসাও নেই, কিছুই নেই৷’’ মারহারিতা ও তার মা টেটিয়ানা এখন গডিনিয়ার বাসায় বসে ফেলে আসা দিনের স্মৃতিচারণ করেন প্রায়ই৷
নতুন ঘর, নতুন স্বপ্ন
পোল্যান্ডের সোপোট শহরের আটেলিয়ের থিয়েটারের শিক্ষার্থী মারহারিতা৷ এমনিতে কম কথা বলা মারহারিতা নাটকের ক্লাসে যাওয়া শুরু করেন নিজের আবেগকে মঞ্চে তুলে ধরতে৷ এতে করে অনেক নতুন বন্ধুও হয় তার৷ মারহারিতা বলেন, ‘‘কেউ কেউ বলেন যে আমরা যেখানে থাকি, সেটাই শুধু ঘর হয় না৷ আসলে নিজেদের ঘর এমন জায়গায় হয়, যেখানে থাকতে ভালো লাগে৷ মঞ্চে থাকলে আমার ভালো লাগে, মানুষ থাকে কাছে৷ এটাই আমার ঘর৷’’