1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইইউ সংসদের ৬ সদস্য এবং এইচআরডাব্লিউর বক্তব্য ‘গুরুত্বহীন’

১৩ জুন ২০২৩

বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে ভূমিকা রাখতে ইইউকে চিঠি দিয়েছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় সদস্য। অন্যদিকে এইচআরডাব্লিউ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে নিয়োগের আগে যাচাই-বাছাইয়ের আহ্বান জানিয়েছে।

https://p.dw.com/p/4SWzk
আগামী নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা চলছে (প্রতীকী ছবি)ছবি: Asif Mahmud Ove

তবে বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেছেন, "ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সাতশ'র বেশি সদস্যের মধ্যে ছয়জন সদস্যের এই বিবৃতি বা চিঠি গুরুত্বহীন।'' আর জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেছেন, "এইচআরডাব্লিউ যা বলার বলুক কোনো সমস্যা নেই। আমরা মানবাধিকার নিয়ে অনেক কাজ করছি।”

আর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, " সারাবিশ্ব বাংলাদেশের অবস্থা জানে। ওই দুই বিবৃতি ও চিঠিতে বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থা প্রকাশ পেয়েছে। এটা সরকারের কৃতকর্মের ফল।” 

"সারাবিশ্ব বাংলাদেশের অবস্থা জানে”

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় সদস্যের চিঠি

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় সদস্য বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি-বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেলকে ভূমিকা রাখতে আহ্বান জানিয়ে একটি চিঠিটি দিয়েছেন।

মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে মুক্তি এবং চলমান সংকটের টেকসই ও গণতান্ত্রিক সমাধানের জন্য বিএনপিসহ অন্যান্য প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের আলোচনার কথা বলা হয়েছে চিঠিতে।

তারা চিঠিতে ২০২৩ সালের শেষে, কিংবা ২০২৪ সালের শুরুতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে গুরুত্ব দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন,"আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কার্যকর কোনো পদ্ধতি এখন নেই, যার মাধ্যমে জনগণ তাদের পছন্দের প্রতিনিধি বাছাইয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।” 

তাদের মতে, " বাংলাদেশের দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে জালিয়াতি, কারচুপির ঘটনা ঘটে । বিএনপিসহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন বর্জন করায় দশম সাধারণ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি এবং একাদশ নির্বাচন শেষ হয়েছে ‘আগের রাতে'। এর ফলে সরকার বাংলাদেশের জনগণের কাছ থেকে কোনো ম্যান্ডেট পায়নি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকেও স্বীকৃতি পায়নি।” তারা সম্ভব হলে আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার কথাও চিঠিতে উল্লেখ করেছেন। 

চিঠিতে বলা হয়েছে, "ক্ষমতা সংহত করার জন্য সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের, নির্যাতন, অপহরণ ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ মতপ্রকাশের স্বাধীনতাও খর্ব করা হয়েছে। বিশেষ করে ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করার পর থেকে এটা ঘটেছে।''

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ওই ছয় সদস্য মনে করেন, "এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও পক্ষপাতহীন নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্যোগ নেয়া উচিত।”

ওই সদস্যরা আরো বলেন, " মানবাধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শুধু ধারাবাহিক আলোচনা চালিয়ে যাওয়াই নয়, দৃশ্যমান অগ্রগতিও হতে হবে। এক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ইউরোপীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ অথবা বাংলাদেশকে জিএসপি প্লাস সুবিধা দেয়া হবে কিনা, সে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে এসব শর্ত আরোপ ও মনে করিয়ে দেওয়ার মতো পদক্ষেপ নেয়া যায়।”

যারা চিঠি দিয়েছেন তারা হলেন: ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য ইভান স্টিফেনেক (¯স্লোভাকিয়া), মিকেইলা সিজদ্রোভা (চেক প্রজাতন্ত্র), আন্দ্রে কোভাচভ (বুলগেরিয়া), কারেন মেলচিয়র (ডেনমার্ক), হ্যাভিয়ের নারত (স্পেন) ও হেইডি হাউতালা (ফিনল্যান্ড)।

তবে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়টলিইটলি সংবাদমাধ্যমকে জানান, এই চিঠির বক্তব্য ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ওই ছয় সদস্যের নিজস্ব মতামত।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বক্তব্য

জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়েরে ল্যাক্রোইক্সের প্রতি আহ্বানে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগের ক্ষেত্রে মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয় যাচাইয়ের কথা বলেছে। জাতিসংঘের ওই কর্মকর্তার বাংলাদেশ সফরের কথা রয়েছে। 

তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "ল্যাক্রোইক্স যে সময়ে বাংলাদেশ সফর করছেন, তখন সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো দেশটির রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে।বিভিন্ন অধিকারকর্মী, গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের হয়রানি করছে। এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাবাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে বাংলাদেশ সফরকালে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলের খোলাখুলি উদ্বেগ জানানো উচিত।” 

"ছয়জন সদস্যের এই বিবৃতি বা চিঠি গুরুত্বহীন''

এইচআরডাব্লিউর কথা, "জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অবদান সবচেয়ে বেশি। এই অবস্থান ধরে রাখতে বাংলাদেশকে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত যাচাই-বাছাই নীতিমালা যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। বাংলাদেশ সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে, জাতিসংঘের হয়ে কাজ করা তাদের কোনো নাগরিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত নয়।” তারা মনে করে, বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনেরও এগুলো দেখার দায়িত্ব।

বিবৃতিতে তারা আরো বলেছে, "বাংলাদেশে ক্ষমতার অপব্যবহারের সঙ্গে জড়িত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা যেন দেশের বাইরে শান্তি রক্ষা মিশনে অংশ না নিতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত নীতিমালা ব্যর্থ হয়েছে। শুধু উচ্চপদস্থ কর্তকর্তাদের মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয় যাচাইবাছাই করে জাতিসংঘ।”

‘ছয়জনের বিবৃতি গুরুত্বহীন'

বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ড. হাসান মাহমুদ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় সদস্যের চিঠির প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন,"এটা ইউরোপীয় পার্লামেন্টের শাতশ' জনের বেশি সদস্যের মধ্যে ছয়জন সদস্যের একটা চিঠি। এটা পার্লামেন্টের কোনো রেজ্যুলেশন নয়। এটার কোনো গুরুত্ব নাই। আমাদের দেশেই এগুলোর গুরুত্ব দেয়া হয়। এটা পার্লাসেন্টের রেজ্যুলেশন হলে এর গুরুত্ব ছিল। ” তিনি মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, " আমি এখনো বিবৃতিটি পড়িনি, শুনেছি। তবে এটা তারা লিখতেই পারেন। এই ছয়জনের সঙ্গে হয়তো বিএনপি নেতারা হাতেপায়ে ধরেছে, পারস্যু করেছে। সেইজন্য হয়ত তারা লিখেছে। এরকম বিবৃতি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা মাঝেমধ্যে দিয়ে থাকেন। এগুলো গুরুত্বহীন। তবে ইউরোপে যা ঘটছে সেসব ব্যাপারেও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যদের নজর দেয়া উচিত।”

খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রশ্নে তিনি বলেন, "বেগম খালেদা জিয়া আদালত কর্তৃক শাস্তিপ্রাপ্ত, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তার মুক্তি তো আইনের হাতে, আদালতের হাতে। আইনি প্রক্রিয়ায় তিনি যদি মুক্তি লাভ করতে পারেন, করবেন। কিন্তু সরকার তো এ ব্যাপারে কিছু করতে পারবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে যে আইনগত ক্ষমতা দেয়া আছে সেই ক্ষমতায় তিনি তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় কারাগারের বাইরে ঘরে থাকার ব্যবস্থা করেছেন। তার পুরোপুরি মুক্তি তো আদালতের বিষয়।”

‘আমরা মানবাধিকার নিয়ে কাজ করছি'

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, " বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে আমাদের যা করা দরকার আমরা তা করছি। আমরা যেসব অভিযোগ পাই সে ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিই। প্রতিদিনই আমরা অনেক অভিযোগ নিস্পত্তি করি। প্রতিদিন শুনানি করি। ফিল্ড ভিজিট করি।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "নিরাপত্তা বাহিনী বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ তদন্তের ব্যাপারে আইনে আমাদের পারমিশন নাই। সেটা আমরা করি না। তবে মানবাধিকারের ‘গ্রস' কোনো ভায়োলেশন করলে সেটা আমরা বলে থাকি। যেমন এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স- এটা নিয়ে আমরা কথা বলি। আমরা বলি, এটা ঠিক না। আমরা পুলিশকে তদন্ত করতে বলি। এগুলো আমরা করছি।”

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ব্যাপারে এইচআডাব্লিউর আহ্বানের ব্যাপারে তিনি বলেন, "ওরা একটা প্রাইভেট এনজিও। ওরা ওদের বক্তব্য বলছে। আমরা একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, জাতিসংঘের ম্যান্ডেটের একটি প্রতিষ্ঠান। আমরা আমাদের নিজেদের কাজ করে যাচ্ছি। ওরা যা বলে বলুক, অসুবিধা নাই। ওরা যদি ভায়েলেশন দেখে, অবশ্যই বলা উচিত। ওরা যে ভায়োলেশনের কথা বলে সেগুলো সঠিক হলে অবশ্যই আমরা তাদের সাপোর্ট করবো।”

‘সরকারের  কৃতকর্মের ফল'

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মহমুদ চৌধুরী বলেন, "বাংলাদেশের বিদেশি দূতাবাস ও রাষ্ট্রদূতদের ব্যবহার করে, জনগণের পয়সা খরচ করে প্রকৃত পরিস্থিতি সরকার গোপন করতে পারবে না। এটা এখন সারা বিশ্ব জানে বাংলাদেশে কী হচ্ছে। একটা অবৈধ সরকার ক্ষমতা দখল করে সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে। ভোটাধিকার, মানবাধিকার, রাজনৈতিক অধিকার সব কেড়ে নিয়েছে। চরম দুর্নীতি করে দেশের টাকা পয়সা দেশের বাইরে পাচার করেছে। দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করেছে।”

তার কথা, " যেসব দেশ গণতন্ত্র, মানবাধিকার নিয়ে ভাবে, তারা তো কথা বলবেই। এসব এখন আর একটি দেশের বিষয় নয়। তাই তারা কথা বলছেন। সরাবিশ্ব এখন বাংলাদেশকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণে রেখেছে। এই সরকার এর জন্য দায়ী। তাদের কৃতকর্মের ফল দেশের মানুষকে ভোগ করতে হচ্ছে।”

অ্যামেরিকার চাপে কি বেসামাল রাজনীতি?