ইইউ-এর উদ্বাস্তু নীতি
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ব্রাসেলসে মঙ্গলবার ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক৷ ইউরোপীয় পরিষদের বর্তমান সভাপতি দেশ লুক্সেমবুর্গ অতিকষ্টে জোড়াতালি দিয়ে আপোশের ব্যবস্থা করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ছেঁড়াখোঁড়া উদ্বাস্তু নীতিকে বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছেন বটে, তবে উদ্বাস্তু সংকটের কোনো যৌথ, সহযোগিতামূলক সমাধানের ধারে-কাছে আসতে পারেননি মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীবর্গ৷ যে সব উদ্বাস্তুরা ইতিমধ্যেই ইউরোপে এসে পৌঁছেছেন, তাদের একটি বিশেষ সূত্র অনুযায়ী ইইউ-এর বিভিন্ন দেশের মধ্যে ভাগবাঁটোয়ারা করে দেওয়ার প্রসঙ্গটিও আগামী মাস অবধি শিকেয় তুলে রাখা হয়েছে – কেননা ব্রিটেন তথা পূর্ব ইউরোপের একাধিক দেশ ঐ ব্যাপারে নড়ে বসতেও রাজি নয়৷
কাজেই শুধুমাত্র একটি ‘‘রাজনৈতিক ঐকমত্য'' অর্জিত হয়েছে, যা আসলে অর্থহীন গালভরা বাগাড়ম্বর, উদ্বাস্তুদের বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে যার কোনো সম্পর্ক নেই৷ ‘‘ও' দিয়ে আমাদের কোনো কাজ হবে না'', বলেছেন জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টোমাস ডেমেজিয়ের৷ অস্ট্রিয়া-জার্মান সীমান্তে আবার নিয়ন্ত্রণ চালু করে তিনি ইউরোপীয় সহযোগীদের উপর যে চাপ সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন, তা-তে দৃশ্যত কোনো কাজ হয়নি৷ ইইউ দেশগুলির একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ উদ্বাস্তুদের বণ্টন করার সপক্ষে হলেও, যে সব দেশ এ যাবৎ খুব কম উদ্বাস্তু নিয়েছে, তারা পূর্বাপর বাধ্যতামূলক কোটা নির্দিষ্ট করে দেওয়ার বিরোধী৷
সমাধানের কোনো চিহ্ন নেই
প্রচেষ্টা ছিল, গ্রিস, ইটালি অথবা হাঙ্গেরি থেকে ১ লক্ষ ৬০ হাজার উদ্বাস্তুকে আগামী দু'বছরের মধ্যে অপরাপর দেশের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া৷ কিন্তু তথাকথিত বলকান রুটে যে হাজার হাজার উদ্বাস্তু জার্মানি অবধি এসে পৌঁছাচ্ছে, তাদের পরিস্থিতি যাবতীয় সদাশয় পরিকল্পনা সত্ত্বেও আগের মতোই নাটকীয় থেকে যাচ্ছে৷ লক্ষ লক্ষ মানুষের আবাসের যে কী ব্যবস্থা করা হবে, ব্রাসেলস সে প্রশ্নের কোনো জবাব দেয়নি৷
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা বারংবার দাবি তুলে আসছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বহির্সীমান্তগুলিকে আরো ভালোভাবে সুরক্ষিত করতে হবে৷ তারও অর্থ দাঁড়ায়: আরো কম উদ্বাস্তু ও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের ইইউ-তে ঢুকতে দেওয়া হবে৷ কিন্তু গ্রিস কিংবা ইটালির উপকূলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সামুদ্রিক সীমানাকে সুরক্ষিত করা খুব সহজ কাজ হবে না৷
কাজেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের সর্বাধুনিক সম্মেলনের পরও সেই একই তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে যাচ্ছে যে, ইউরোপের উদ্বাস্তু নীতিতে বাস্তব কোনো প্রগতি অর্জিত হয়নি৷ ইউরোপীয় পরিষদের লুক্সেমবুর্গীয় সভাপতি জঁ আসেলবর্ন যেমন বলেছেন: ইউরোপ যদি এবার একত্রিত না হয়, তা হলে ইউরোপ আবার বিভক্ত হবে৷