আয়ারল্যান্ডে গর্ভপাতের জয়, চাপ লন্ডনেও
২৭ মে ২০১৮শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টা৷ ঐতিহাসিক এক গণভোটের ফল ঘোষণার পালা৷ গর্ভপাত নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত আইরিশরা তাঁদের ভোট দিয়েছেন দিনভর৷ কাঙ্খিত সেই ফল ঘোষিত হলো এবং দেখা গেল, ৪০টি সংসদীয় এলাকার ৩৯টিতেই ‘হ্যাঁ' ভোট জিতেছে৷ একটি সংসদীয় এলাকায় ‘না' ভোট জিতেছে, তাও খুব অল্প ব্যবধানে৷
মোট সাড়ে ২১ লাখ ভোট পড়েছে, যা দেশটির ইতিহাসের যে কোনো গণভোটে সর্বোচ্চ৷ গর্ভপাতের পক্ষে পড়েছে ১৪ লাখ ৩০ হাজার, বা ৬৬ দশমিক ৪ ভাগ৷ অর্থাৎ রোমান ক্যাথলিক দেশটিতেও প্রতি তিনজনের দু'জন চান যে গর্ভপাতের সময় মা'য়ের কোনো ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে তিনি গর্ভপাত করতে পারবেন৷ অথচ ১৯৮৩ সাল থেকে দেশটিতে নিষিদ্ধ থাকায় এখনও পর্যন্ত নারীরা অন্যদেশে পাড়ি জমাতেন গর্ভপাত করতে৷
দেশটির প্রধানমন্ত্রী এই ফলাফলের পর তাঁর বিস্ময় প্রকাশ করেন এভাবে, ‘‘এই ফল আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে বাস্তবতা দেখিয়ে দিয়েছে৷'' বলছিলেন লেও ভারাদকর৷
এখন সবার চোখ আইরিশ সংসদের দিকে৷ সেখানেই সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীতে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করে যে পুরোনো আইন করা হয়েছিল, তা বদলে নতুন আইন তৈরি করতে হবে৷
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ঐতিহ্যগতভাবে রোমান ক্যাথলিক দেশটিতে মানুষ রীতিনীতির বদলে সামাজিক সমস্যার প্রতি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন৷ প্রধানমন্ত্রী ভারাদকর ফলাফলের পরে আরো বলেন, ‘‘এই দিনে আয়ারল্যান্ড শেষ কালোছায়াটি অতিক্রম করে আলোতে এল৷ একদিনেই আমরা একটি যুগ পেরোলাম৷ আমরা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সঙ্গে সামিল হলাম৷''
গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসের মধ্যে গর্ভপাতের অধিকার দিতে তাঁর সরকার একটি আইন প্রণয়ন করবে৷ তবে এখনো বোঝা যাচ্ছে না, এমন একটি গনভোটের পরে গর্ভপাতবিরোধীরা সংসদে কোন কৌশল অবলম্বন করবেন৷ কেউ কেউ তো বলছেন যে, সংসদে কঠিন বিতণ্ডা হতে পারে৷
বিশ্লেষকরা এই জয়কে দেশটিতে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় বড় অর্জন বলে দেখছেন৷ গ্রাম ও শহরে একই রকমের ফলাফলেও চমকিত হয়েছেন অনেকেই৷ তবে গুরুত্বপূর্ণ হলো যে, কী পুরুষ, কী নারী, পক্ষে পড়া ভোটে সমতার ভারসাম্য ছিল৷
এমনকি বয়সভেদেও খুব একটা তারতম্য হয়নি৷ তরুণ প্রজন্ম যারা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পড়াশোনা করেছেন, তারা যেমন ভোট দিয়েছেন, তেমনি ৬৫ বয়সের বেশি বুড়োবুড়িরাও বাদ যাননি৷
এদিকে, লন্ডনেও এখন ধুঁয়া উঠেছে আইন সংস্কারের৷ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে'র কাছে কোনো কোনো মন্ত্রি দাবি জানিয়েছেন যে, পার্শ্ববর্তী নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড, যেখানেও গর্ভপাতের বিরুদ্ধে কড়া আইন বলবৎ আছে এখনো, সেখানেও সংস্কার করতে হবে৷
ব্রিটিশ নারী ও সমতা মন্ত্রী পেনি মর্ডওন্ট বলেন, ‘‘আয়ারল্যান্ডের জন্য অসাধারণ ও ঐতিহাসিক এবং নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের জন্য আশাবাদের একটি দিন৷ এই আশা পূরণ করতে হবে৷''
জেডএ/ডিজি (এপি)