1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আহমদিয়াদের ওপর হামলা

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া মুসলিম জামায়াতের অনুসারীদের ওপর একটি গোষ্ঠী বারবার ওপর হামলা চালিয়ে আসছে৷ এবারের হামলার সময় বেশ কিছু ঘর-বাড়ি, দোকানপাটে ভাঙচুর চালানো হয়৷ হামলায় আহত হয়েছে ৪০ জন৷

https://p.dw.com/p/3DKAZ
Bangladesch Zyklon Roanu
প্রতীকী ছবিছবি: Getty Images/AFP

আহমদিয়া মুসলিম জামাতের পূর্ব ঘোষিত বাৎসরিক ধর্মীয় অনুষ্ঠান ‘জলসা'-কে কেন্দ্র করে পঞ্চগড়ের আহমদ নগর এলাকায় হামলা হয় মঙ্গলবার রাতে৷ ওই এলাকাটি আহমদিয়া সম্প্রদায়অধ্যুষিত৷ আহমদিয়া মুসলিম জামাত ২২ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আহমদ নগর এলাকায় তিন দিনের বার্ষিক ‘সালানা জলসা' আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছিল৷ সেই জলসা বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছিল খতমে নবুওয়ত সংরক্ষণ পরিষদ, ঈমান আকিদা রক্ষা কমিটি, ইসলামী যুব সমাজ ও স্থানীয় তৌহিদি জনতার ব্যানারে বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক সংগঠন৷ 

সংগঠনগুলো মঙ্গলবার রাতে পঞ্চগড় শহরে জলসা বন্ধের দাবিতে মিছিল বের করে৷ মিছিল শেষে তারা শেরেবাংলা পার্ক মোড় সংলগ্ন পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে৷ আহমদিয়া সম্প্রদায়বিরোধীরা আহমদনগর এলাকায় যেতে চাইলে পুলিশ তাদের আটকে দেয়৷ এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া হয়৷ এরমধ্যেই রাত ১০টার পর একটি গ্রুপ আহমদনগর এলাকায় প্রবেশ করে বাড়িঘর-দোকানপাটে হামলা চালায়৷ তারা ১০-১২টি বাড়িঘর এবং দোকানপাটে ভাঙচুর ও আগুন দেয়৷ এ সময় তাদের হামলায় পুলিশসহ কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়৷ আহমদিয়া মুসলিম জামায়াতের পক্ষ থেকে তাদের ৪০ জন আহত হওয়ার তথ্য জানানো হয়েছে৷ ২১ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে৷ এক জনের অবস্থা গুরুতর৷ হামলার পর ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে৷

মোবাশশেরুর রহমান

মঙ্গলবার রাতে চালানো এই হামলায় পুলিশসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে৷ পরিস্থিতি মোকাবিলায় পঞ্চগড় শহর ও আহমদনগর এলাকায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে৷

আহমদিয়া মুসলিম জামাতের ন্যাশনাল আমির মোবাশশেরউর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে৷ ওই এলাকায় পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘দেশের অন্যান্য এলাকায় কোনো সমস্যা আপতত নেই৷''

বাংলাদেশে আহমদিয়া মুসলিম জামায়াতের অনুসারী এক লাখের মতো হবে৷ সারা বাংলাদেশে তাঁদের পাঁচশ' মসজিদ আছে৷ ঢাকার বকশি বাজার ও তেজগাঁ ছাড়া পঞ্চগড়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, সাতক্ষীরা, জামালপুর– এসব এলাকায় আহমদিয়া জামায়াতের অনুসারী বেশি৷

মোবাশশেরউর রহমান বলেন, ‘‘ইসলামের মূল বিশ্বাস আর আকিদা নিয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো পার্থক্য নেই৷ কালেমা, নামাজ রোজা , হজ, জাকাত আমরা একইভাবে অনুসরণ করি৷ তবে আমরা ভারতে জন্ম নেয়া হযরত মীর্জা গোলাম মোহাম্মদ কাদিয়ানিকে ইমাম মাহদি বলে বিশ্বাস করি৷ তিনিই আমাদের আহমদিয়া মুসলিম জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা৷''

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ইসলামে তো বিভিন্ন দল উপদল, ফেরকা পরস্পরকে বিভিন্ন সময় কাফের বলেই যাচ্ছে৷ মতের সাথে না মিললেই অন্যদের কাফের বলে৷ আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয় যে, আমরা মীর্জা গোলাম মোহাম্মদ কাদিয়ানিকে নবি বলি৷ এটা অপপ্রচার ছাড়া আর কিছুই নয়৷''

মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ

আহমদিয়াদের ওপর এই হামলা নতুন নয়৷ ২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তাঁদের ওপর অনেক হামলা হয়৷ তেজগাঁ এলাকায় তাঁদের মসজিদ দখলের চেষ্টা হয়৷ এর আগে ঢাকার বকশিবাজারে তাঁদের প্রধান কেন্দ্র এবং মসজিদে হামলা ও আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে৷ ২০১৬ সালে রাজশাহীর বাগমারায় এই সম্প্রদায়ের একটি মসজিদে জুমার নামাজের সময় আত্মঘাতী বোমা হামলায় একজন নিহত হন৷

ন্যাশনাল আমির বলেন, ‘‘এই হামলার উদ্দেশ্য রাজনৈতিক৷ যারা হামলা করে, তারা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে৷ তারা এটাকে পুঁজি করে ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করে৷ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে৷ এই হামলার সাথে যারা জড়িত, তারা স্থানীয় কেউ নয়৷ তারা বহিরাগত৷ ২০৭ বছর ধরে পঞ্চগড়েরর আহমদ নগর এলাকায়  আমাদের অনুসারীরা আছেন৷ আমরা সেখানে প্রতিবছর জলসা করি৷ স্থানীয়রা আমাদের জলসায় যোগ দেন৷ তাদের সাথে আমাদের কোনো সমস্যা নেই৷''

এদিকে জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে জলসা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল৷ তারপরও বিক্ষোভ করে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালানো হয়েছে৷ এর জন্য যারা দায়ী তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে৷''

পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার গিয়াস উদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘‘বিচ্ছিন্ন একটি গ্রুপ এই হামলা চালিয়েছে৷ আমাদের তদন্ত চলছে৷ তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায়  আনবো৷''

ফরিদ উদ্দীন মাসুদ

পঞ্চগড়ের খতমে নবুয়ত সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি মো. আব্দুল্লাহ অবশ্য দাবি করেন, ‘‘প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রশাসন যখন জলসা স্থগিতের কথা জানায়, তখন আমরা আন্দোলন থেকে সরে আসি৷ কিন্তু বিক্ষুব্ধ জনতার সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়৷ তারপর কে বা কারা হামলা চালিয়েছে তা আমরা জানি না৷ তাদের চিনিও না৷ আমাদের কেউ এই হামলা চালায়নি৷''

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমি নিজে আহমদ নগর এলাকার বাসিন্দা না৷ আর আহমদিয়া বিরোধী আন্দোলনে ওই এলাকার কেউ আছে কিনা আমার জানা নেই৷''

শোলাকিয়ার ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আহমদিয়াদের সাথে আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের পার্থক্য আছে৷ সেটা নিয়ে আমরা কথা বলছি৷ আমরা যৌক্তিকভাবে আমাদের কথা তুলে ধরব৷ কিন্তু হামলা চালানো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ এটা কোনো প্রকৃত মুসলামান করতে পারে না৷ যারা করে, তাদের ভিন্ন উদ্দেশ্য আছে৷ সরকার যেখানে আহমদিয়াদের অনুষ্ঠান স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারপরও কেন হামলা? এর কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে? এই হামলা নিন্দনীয়৷''

তবে তিনি মনে করেন, ‘‘আহমদিয়াদের পরিভাষা, বিশ্বাস মুসলমানদের জন্য বিভ্রান্তিকর৷ তাদের মাধ্যমে মুসলমানরা বিভ্রান্ত হতে পারেন৷''

এদিকে আহমদিয়া সম্প্রদায়কে সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম৷ বুধবার চট্টগ্রামে এক সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের পক্ষে লিখিত বক্তব্য দেন শাহ আহমদ শফীর ছেলে মাওলানা আনাস মাদানী৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য