আহত সেনাদের উদ্ধারে ইউক্রেনের প্রস্তাব
১৩ মে ২০২২বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের সংবাদপত্রে এই খবর প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে দেশের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, মারিউপলের কাছে অ্যাজবস্টাল স্টিল প্লান্টে বেশ কিছু ইউক্রেনীয় যোদ্ধা আহত অবস্থায় আটকে আছেন। কারখানাটি এখনো বাইরে থেকে ঘিরে রেখেছে রাশিয়া। গত সপ্তাহে জাতিসংঘ এবং রেডক্রসের সহায়তায় সেখান থেকে সমস্ত বেসামরিক মানুষকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এবার আহত সেনাদেরও উদ্ধার করতে চাইছে ইউক্রেন। তার জন্য রাশিয়ার শর্ত মানতেও তারা প্রস্তুত বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের প্রশাসন।
সংবাদমাধ্যমের দাবি, এবিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে আপস-বৈঠকে বসতে চাইছে ইউক্রেন। কিন্তু রাশিয়া এখনো ইউক্রেনের আবেদনে সায় দেয়নি। রাশিয়ার দাবি, ইউক্রেনের সমস্ত সেনাকে আত্মসমর্পন করতে হবে। ইউক্রেন রাশিয়ার এই দাবি মানতে চাইছে না।
ইউক্রেন জানিয়েছে, রাশিয়ার বন্দিদের হস্তান্তর করতেও প্রস্তুত তারা। অর্থাৎ, রাশিয়ার বন্দিদের হস্তান্তর করে তারা ইউক্রেনের সেনাদের উদ্ধার করতে চায়, এমন প্রস্তাব রাশিয়ার সেনাকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাশিয়া এখনো এই বিষয়ে তাদের বক্তব্য জানায়নি।
জেলেনস্কির বক্তব্য
বৃহস্পতিবার রাতে তার দৈনন্দিন ভিডিও বক্তৃতায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়ার সেনার পরাজয় ঘটে গিয়েছে। পরাজয়ের পরেও তারা মিসাইল, বোমারু বিমান, গোলাবারুদ নিয়ে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। জেলেনস্কির দাবি, গোটা পৃথিবীর কাছেই রাশিয়ার পরাজয় স্পষ্ট হয়ে গেছে। এমনকী, যারা এখনো রাশিয়ার সঙ্গে কথা বলছে, তাদের কাছেও এ বার্তা পৌঁছে গেছে।
জেলেনস্কির দাবি, রাশিয়া ভিতু, তাই যুদ্ধ থামাতে পারছে না। বস্তুত জেলেনস্কি যখন এ কথা বলছেন, তখন দনবাস অঞ্চলে নতুন করে হামলা শুরু করেছে রাশিয়া।
রাশিয়ার জয়-পরাজয়
ইউক্রেনের সেনা প্রধান জানিয়েছেন, পূর্ব ইউক্রেনের উত্তরাংসে বেশ কিছু অঞ্চল ইউক্রেনের সেনা নতুন করে দখল করে নিয়েছে। বিশেষ করে খারকিভের উত্তরের বেশ কিছু জায়গা তারা পুনর্দখল করতে পেরেছে। কিন্তু দক্ষিণে রাশিয়া বেশ কিছু জায়গা দখল করে রাখতে পেরেছে বলে তিনি জানিয়েছেন। বস্তুত, দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়া বেশ কিছু জায়গায় জয় পেয়েছে বলে মেনে নিয়েছেন ইউক্রেনের সেনাপ্রধান।
হাজারখানেক দেহ উদ্ধার
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত সংস্থার প্রধান জানিয়েছেন, কিয়েভের কাছে ারো হাজারখানেক দেহ উদ্ধার হয়েছে। দেহগুলিতে অত্যাচারের ছাপ স্পষ্ট। ফের প্রমাণিত হয়েছে, রাশিয়ার সেনা যুদ্ধাপরাধ করেছে। এবিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাটি।
অন্যদিকে, ইউক্রেন রাশিয়ার সেনার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা শুরু করেছে। ২১ বছরের এক রাশিয়ার সেনাকে দোষী প্রমাণিতও করা হয়েছে। এই প্রথম কোনো রাশিয়ার সেনাকে দোষী প্রমাণিত করা হলো। এই অফিসারই এক বৃদ্ধ সাইকেল আরোহীকে গুলি করে মেরেছিল বলে অভিযোগ।
খাবার সরবরাহ
রাশিয়া কৃষ্ণসাগরে অর্থনৈতিক অবরোধ তৈরি করে রেখেছে বলে অভিযোগ। বস্তুত, কৃষ্ণসাগর দিয়ে তারা কোনো জাহাজ যেতে দিচ্ছে না বলে যুদ্ধের শুরু থেকেই অভিযোগ করছিল আন্তর্জাতিক মহল এবং ইউক্রেন। যার ফলে কোনো খাদ্যশস্য যেতে পারছে না। এর ফলে আফ্রিকা এবং ইউরোপে খাদ্যসংকট তৈরি হয়েছে বলে জাতিসংঘ-সহ একাধিক সংস্থা জানিয়েছে। খাদ্যসামগ্রীর দাম বাড়ছে হুহু করে। এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেন থেকে স্থলপথে খাদ্যসামগ্রী সরবরাহের বিকল্প পথ খুঁজছে ইউরোপ।
উল্লেখ্য, রাশিয়া এবং ইউক্রেন ইউরোপ এবং আফ্রিকায় বিপুল পরিমাণ খাদ্য সরবরাহ করে। কৃষ্ণসাগরের পথটিকে তাই বিশ্বের ব্রেড বাস্কেট বলে অভিহিত করা হয়। কী করে বিকল্প পথে খাদ্য সরবারহ করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে ইউরোপের একাধিক দেশ।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি, এএফপি, ডিপিএ)