প্রতিবাদের ঝড়
১৭ জানুয়ারি ২০১৩সোমবার রাতে ঢাকার উত্তরায় নিজের কার্যালয়ের সামনে হামলার শিকার হন আসিফ মহিউদ্দীন৷ আলোচিত এই ব্লগারকে সেসময় কমপক্ষে তিন হামলাকারী বেধড়ক কোপায়৷ অধিকাংশ কোপই পরে আসিফের ঘাড় এবং গলায়৷ এই হামলার পর অবশ্য দ্রুতই তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়৷ প্রথমে উত্তরার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয় তাঁকে৷ এরপর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসিফের অস্ত্রোপচার চলে তিন ঘণ্টা ধরে৷
আসিফের উপর অস্ত্রোপচার দলে ছিলেন চিকিৎসক হরিদাস সাহা৷ ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপিকে মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘‘কোপের ধরন প্রমাণ করে হামলাকারীরা তাঁকে (আসিফ মহিউদ্দীন) হত্যা করতে চেয়েছিল৷''
আসিফের উপর এই হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন অসংখ্য মানুষ৷ ফেসবুক, টুইটার, ব্লগে এই বিষয়ে অসংখ্য নিবন্ধ প্রকাশ করা হয়েছে৷ বুধবার বিকেলে ঢাকার শাহবাগে এই বিষয়ে প্রতিবাদ সভা, মিছিলের আয়োজন করেন কয়েকজন ব্লগার এবং অ্যাক্টিভিস্ট৷
আসিফের উপর হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত এই প্রতিবাদ সভায় অন্যান্যদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ফারুক ওয়াসিফ৷ এই সাংবাদিক ও সমাজকর্মী ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘হামলা কারা করেছে আমরা জানিনা৷ এই জানানোর দায়িত্বটা প্রশাসনের৷ তাদেরকে তাদের দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্যই আজকের এই প্রতিবাদ সভা৷''
ফারুক ওয়াসিফ জানান, আসিফ, আমিসহ আরো অনেককে সবধরনের উগ্রপন্থীরা অনলাইনে, ফেসবুকে বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করছে৷ তিনি বলেন, ‘‘এ ধরনের হুমকি-ধামকি যখন চলতে থাকে, তখন একজন ব্যক্তির শুধু মত প্রকাশের স্বাধীনতা নয় জীবনের নিরাপত্তাও হুমকির মধ্যে পড়ে৷''
শাহবাগের প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত ব্লগার, সাংবাদিক বাবু আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার যতটুকু মনে হয়, আসিফের উপর হামলা ধর্মান্ধ কোনো গোষ্ঠীর পক্ষ থেকেই করা হয়েছে৷ কেননা তিনি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে অনেক লেখালেখি করেন৷''
প্রসঙ্গত, গত বছর ডয়চে ভেলের সেরা ব্লগ প্রতিযোগিতার ‘সোশ্যাল অ্যাক্টিভিজম ক্যাম্পেইন' বিভাগে ‘ইউজার প্রাইজ' জয় করেন আসিফ মহিউদ্দীন৷ মঙ্গলবার ফেসবুক এবং টুইটার বার্তায় আসিফ এবং তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে ‘দ্য ববস' টিম৷
এদিকে, নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক ‘কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস' (সিপিজে) আসিফের উপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে৷ এক বিবৃতিতে সংস্থাটির উপ-পরিচালক রবার্ট মাহোনি বলেছেন, ‘‘আমরা আসিফ মহিউদ্দীনের উপর হামলার নিন্দা জানাচ্ছি৷ একইসঙ্গে এই হামলার কারণ সনাক্তে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি৷''
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১১ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে পুলিশি হয়রানির শিকার হন আসিফ মহিউদ্দীন৷ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে ১৮ ঘণ্টা আটকে রাখে গোয়েন্দা পুলিশ৷ সেসময় ইন্টারনেটে কোনো লেখালেখি না করার মুচলকা প্রদান করে মুক্ত হন তিনি৷